রঙ্গব্যঙ্গ-বিএসএফ জওয়ানের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার by মোস্তফা কামাল
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সংক্ষেপে বলা হয় বিএসএফ। এরা সীমান্ত পাহারা দেয়। আর কুকুর-বিড়ালের মতো মানুষ মারে। তাদের গুলিতে কাকপক্ষীর মতো প্রাণ হারিয়ে ফেলানীরা ঝুলে থাকে কাঁটাতারের বেড়ায়! বুটের তলায় পিষ্ট হয় হাবিবুরদের জীবন! এ নিয়ে একজন বিএসএফ জওয়ানের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছি।
'আপনার নাম?'
'শংকর নাথ।'
'আপনার বাড়ি কোথায়?'
'ত্রিপুরায়।'
'আপনি কি বাঙালি?'
'জি না। আমি বিএসএফ জওয়ান।'
'তা তো দেখতেই পাচ্ছি।'
'আপনি যেহেতু বাংলা বলছেন, তাই আমি জানতে চাইছি আপনি বাঙালি কি না?'
'আমি বাঙালিও না, ভারতীয়ও না। আমি বিএসএফ। বিএসএফ আমার রুটি রুজি। আমি আমার পেশাকে সব কিছুর ঊধর্ে্ব স্থান দিই।'
'আপনার দায়িত্ব কী?'
'ভারতমাতার নিরাপত্তা বিধান করা। সীমান্ত নিরাপদ রাখা।'
'আপনি কি জানেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান?'
'আমার কাছে সবই সমান। ভারত-চীন কিংবা ভারত-পাকিস্তান যা, ভারত-বাংলাদেশও তা। আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। পার্থক্য খুঁজেও দেখি না।'
'তাই নাকি!'
'হ্যাঁ, কারণ আমার দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত নিরাপদ রাখা। কাজেই সীমান্ত নিরাপদ রাখতে যা যা করণীয় আমি তা-ই করছি।'
'ফেলানীকে কে গুলি করেছিল?'
'আমার কোনো ভাই। অথবা ধরুন আমিই করেছি।'
'একটি কিশোরী মেয়ে আপনাদের নিরাপত্তা বিঘি্নত করল!'
'কিশোরী, তরুণী, না বৃদ্ধ তা দেখার সময় নেই। আমি দেখেছি, সে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়েছিল। তাই গুলি করেছি।'
'এই সীমান্তে কি তখন যুদ্ধাবস্থা চলছিল?'
'না। নরমাল অবস্থা।'
'নরমাল অবস্থায়ই গুলি! পরিস্থিতি খারাপ হলে কী হবে?'
'আরো ভারী অস্ত্র আসবে।'
'আপনি কি জানেন, দুই দেশের সীমানা এমনভাবে টানা হয়েছে যে সেটা কোথাও কোথাও কারো বাড়ির ওপর দিয়ে গেছে। বাড়ির দুটি ঘর হয়তো ভারতের মধ্যে, অন্য দুটি ঘর বাংলাদেশের মধ্যে। এমন আছে না?'
'হ্যাঁ, আছে।'
'এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত?'
'কেউ কারো সীমানা অতিক্রম করবে না।'
'তাহলে তো ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে!'
'হলে হবে! আমরা তো আমাদের দায়িত্বে অবহেলা করতে পারি না!'
'দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ সীমান্ত অতিক্রম করলেও গুলি করা হবে না। রাবার বুলেট ছোরা হবে। তার পরও আপনারা গুলি করছেন কেন?'
'আমরা ভাই হুকুমের গোলাম। আমাদের কমান্ডাররা যে নির্দেশ দেন আমরা তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। তাঁরা তো কেউ আমাদের বললেন না, গুলি ছোরা যাবে না! কমান্ডারের নির্দেশ না মানার সাধ্য কার! আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা বলেন!'
'আপনি কত বছর ধরে চাকরি করছেন?'
'এই ধরেন ২৫-২৬ হবে।'
'অনেক বছর! কোথায় কোথায় ডিউটি করেছেন?'
'আজাদ কাশ্মীর সীমান্তে করেছি।'
'ওখানেও কি এ রকম হুটহাট গুলি করতেন?'
'আবার জিগায়! মানুষ তো দূরের কথা, একটা কাকপক্ষীও ঢুকতে পারত না!'
'কাশ্মীর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসার পর আপনাকে কোনো ব্রিফ করেছে?'
'কিসের ব্রিফ? ব্রিফ তো একবারই চাকরির শুরুতে করে দিয়েছে!'
'মানে!'
'মানে বুঝলেন না?'
'যখন চাকরিতে ঢুকছি তখনই বলে দিয়েছে, ভারতকে রক্ষা করা, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। কাজেই নতুন করে আবার কী ব্রিফ করবে?'
'না মানে, পাকিস্তান-ভারত আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এক নয়। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
'তাই নাকি? দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক? জানি না তো!'
'মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে?'
'মানবাধিকার! না না! এইটা কী জিনিস?'
'মানে আপনার-আমার অধিকার!'
'অধিকার আছে নাকি? আপনার অধিকার থাকতে পারে। আমার নাই। আমার কোনো অধিকার নাই।'
'সে কারণেই আপনি অন্য কারো অধিকার সম্পর্কে সচেতন না!'
'ওই সব অধিকার-ফদিকার দিয়া কী হবে? আমার দায়িত্ব সীমান্ত নিরাপদ রাখা। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। ব্যস।'
'আপনাকে ধন্যবাদ।'
'আপনাকেও ধন্যবাদ।'
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
'শংকর নাথ।'
'আপনার বাড়ি কোথায়?'
'ত্রিপুরায়।'
'আপনি কি বাঙালি?'
'জি না। আমি বিএসএফ জওয়ান।'
'তা তো দেখতেই পাচ্ছি।'
'আপনি যেহেতু বাংলা বলছেন, তাই আমি জানতে চাইছি আপনি বাঙালি কি না?'
'আমি বাঙালিও না, ভারতীয়ও না। আমি বিএসএফ। বিএসএফ আমার রুটি রুজি। আমি আমার পেশাকে সব কিছুর ঊধর্ে্ব স্থান দিই।'
'আপনার দায়িত্ব কী?'
'ভারতমাতার নিরাপত্তা বিধান করা। সীমান্ত নিরাপদ রাখা।'
'আপনি কি জানেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান?'
'আমার কাছে সবই সমান। ভারত-চীন কিংবা ভারত-পাকিস্তান যা, ভারত-বাংলাদেশও তা। আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। পার্থক্য খুঁজেও দেখি না।'
'তাই নাকি!'
'হ্যাঁ, কারণ আমার দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত নিরাপদ রাখা। কাজেই সীমান্ত নিরাপদ রাখতে যা যা করণীয় আমি তা-ই করছি।'
'ফেলানীকে কে গুলি করেছিল?'
'আমার কোনো ভাই। অথবা ধরুন আমিই করেছি।'
'একটি কিশোরী মেয়ে আপনাদের নিরাপত্তা বিঘি্নত করল!'
'কিশোরী, তরুণী, না বৃদ্ধ তা দেখার সময় নেই। আমি দেখেছি, সে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়েছিল। তাই গুলি করেছি।'
'এই সীমান্তে কি তখন যুদ্ধাবস্থা চলছিল?'
'না। নরমাল অবস্থা।'
'নরমাল অবস্থায়ই গুলি! পরিস্থিতি খারাপ হলে কী হবে?'
'আরো ভারী অস্ত্র আসবে।'
'আপনি কি জানেন, দুই দেশের সীমানা এমনভাবে টানা হয়েছে যে সেটা কোথাও কোথাও কারো বাড়ির ওপর দিয়ে গেছে। বাড়ির দুটি ঘর হয়তো ভারতের মধ্যে, অন্য দুটি ঘর বাংলাদেশের মধ্যে। এমন আছে না?'
'হ্যাঁ, আছে।'
'এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত?'
'কেউ কারো সীমানা অতিক্রম করবে না।'
'তাহলে তো ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে!'
'হলে হবে! আমরা তো আমাদের দায়িত্বে অবহেলা করতে পারি না!'
'দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ সীমান্ত অতিক্রম করলেও গুলি করা হবে না। রাবার বুলেট ছোরা হবে। তার পরও আপনারা গুলি করছেন কেন?'
'আমরা ভাই হুকুমের গোলাম। আমাদের কমান্ডাররা যে নির্দেশ দেন আমরা তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। তাঁরা তো কেউ আমাদের বললেন না, গুলি ছোরা যাবে না! কমান্ডারের নির্দেশ না মানার সাধ্য কার! আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা বলেন!'
'আপনি কত বছর ধরে চাকরি করছেন?'
'এই ধরেন ২৫-২৬ হবে।'
'অনেক বছর! কোথায় কোথায় ডিউটি করেছেন?'
'আজাদ কাশ্মীর সীমান্তে করেছি।'
'ওখানেও কি এ রকম হুটহাট গুলি করতেন?'
'আবার জিগায়! মানুষ তো দূরের কথা, একটা কাকপক্ষীও ঢুকতে পারত না!'
'কাশ্মীর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসার পর আপনাকে কোনো ব্রিফ করেছে?'
'কিসের ব্রিফ? ব্রিফ তো একবারই চাকরির শুরুতে করে দিয়েছে!'
'মানে!'
'মানে বুঝলেন না?'
'যখন চাকরিতে ঢুকছি তখনই বলে দিয়েছে, ভারতকে রক্ষা করা, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। কাজেই নতুন করে আবার কী ব্রিফ করবে?'
'না মানে, পাকিস্তান-ভারত আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এক নয়। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
'তাই নাকি? দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক? জানি না তো!'
'মানবাধিকার সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে?'
'মানবাধিকার! না না! এইটা কী জিনিস?'
'মানে আপনার-আমার অধিকার!'
'অধিকার আছে নাকি? আপনার অধিকার থাকতে পারে। আমার নাই। আমার কোনো অধিকার নাই।'
'সে কারণেই আপনি অন্য কারো অধিকার সম্পর্কে সচেতন না!'
'ওই সব অধিকার-ফদিকার দিয়া কী হবে? আমার দায়িত্ব সীমান্ত নিরাপদ রাখা। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। ব্যস।'
'আপনাকে ধন্যবাদ।'
'আপনাকেও ধন্যবাদ।'
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments