চরাচর-চা যেভাবে চা by আজিজুর রহমান
চা হচ্ছে দ্বিবীজপত্রী চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী কৃষিভিত্তিক উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনোসিস। পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির চা গাছ রয়েছে। এর সবই হচ্ছে এই ক্যামেলিয়া সিনোসিসের সংকর। চা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনান, উত্তর ইন্দোচীন, উত্তর মিয়ানমার, উত্তর-পূর্ব ভারতবর্ষের স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ।
ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উষ্ণ-আর্দ্র অঞ্চল, যেখানকার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯০ থেকে ২০০ ইঞ্চি, কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশের ৫০ থেকে ১০০ মিটার উচ্চতার পাহাড়ে চা ভালো জন্মে। চীন, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা ও বাংলাদেশ চা উৎপাদক দেশ হিসেবে খ্যাত। চা পাতা সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াকরণের ফলে মূলত তিনটি রঙে চা পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে সবুজ, কালো আর গাঢ়। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ চা সংগৃহীত হয় তার তিন ভাগের এক ভাগই হলো কালো চা। ইউরোপ ও আমেরিকা হচ্ছে এই কালো চায়ের প্রধান ভোক্তা। সবুজ চা হচ্ছে চায়ের আদি রূপ। এ চায়ের ভক্ত চীনা ও জাপানিরা। চা শীতল, তেতো, কষটে স্বাদের অধিকারী বিভিন্ন ধরনের জারকে জারিত হয়ে সুস্বাদু পানীয়তে পরিণত হয়। চায়ে রয়েছে প্রধানত তিন ধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগ উপাদান। এগুলো হচ্ছে ক্যাফেইন, থিওব্রোমিন ও মিওফাইলিন-জাতীয় উপক্ষার বা অ্যালকালয়েড। চা পানিতে ফোটালে আরো কয়েক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ বেরিয়ে আসে। গুণাগুণের দিক থেকে চা দুই ধরনের হয়ে থাকে, যেমন_সুঘ্রাণযুক্ত ও উজ্জ্বল রংসংবলিত। আর বাণিজ্যিকভাবে তিন ধরনের চা বাজারজাত করা হয়। এগুলো হলো কালো চা, সবুজ চা ও গাঢ় চা। তবে সারা বিশ্বে কালো চায়ের চাহিদাই বেশি। চা প্রক্রিয়াজাত করা হয় ১. শুকনো, ২. রোলিং, ৩. গাঁজানো ও ৪. ফায়ারিং বা অধিক উত্তাপে শুকিয়ে। আমাদের কাছে চা সহজলভ্য হলেও এর উৎপাদনের পেছনে রয়েছে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ, বহু মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টসাধ্য শ্রম, বিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণা, মিশ্রণকারীদের দক্ষতা, যত্ন আর ব্যবসায়ীদের বিরামহীন তৎপরতা। চা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি পানীয়। কর্মক্লান্ত মানুষের ক্লান্তি-অবসাদ দূর করে সতেজ ও কর্মোদ্দীপ্ত করে তুলতে চায়ের কোনো তুলনা নেই। নন-অ্যালকোহলিক কোমল পানীয় হিসেবে চা আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। পাশাপাশি চা পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর_এমন ভুল ধারণাও সাধারণভাবে প্রচলিত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান চা সম্পর্কে সাধারণ্যের দীর্ঘদিনের প্রাচীন ধারণাই বদলে দিয়েছে। চায়ের ভেষজ গুণ সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সর্বশেষ উদ্ঘাটিত তথ্য খুবই কৌতূহলোদ্দীপক এবং মানবসমাজের জন্য বিশেষ আশাপ্রদ।
আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান
No comments