নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীর তৎপর-জঙ্গিদের শক্তহাতে দমন করতে হবে

রকার উৎখাতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরপর হিযবুত তাহ্‌রীরের তৎপরতা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থনদানের স্পষ্ট প্রমাণও পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া হিযবুতকর্মীদের পরিচিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।


একাত্তরে যেমন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা শিক্ষিত যুবকদের দিয়ে আলবদর নামের উগ্র সংগঠন তৈরি করেছিলেন, হিযবুত তাহ্‌রীর নামের ওই সংগঠনটিও তেমনি শিক্ষিত ও মেধাবীদের তাদের সংগঠনে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে। নিষিদ্ধঘোষিত এই সংগঠনের কর্মীরা সারা দেশে তাদের প্রচারপত্র বিলি করছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে স্লোগান দিতে এবং হঠাৎ হঠাৎ মিছিল কিংবা মানববন্ধন করতেও দেখা গেছে। এমন সব বক্তব্য তারা সেসব স্থানে প্রদান করছে, যা স্পষ্টত বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং দেশদ্রোহমূলক। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রেরও বিরুদ্ধে। মনে হতে পারে, তারা বাংলাদেশেও পাকিস্তানি স্টাইলে চোরাগোপ্তা হামলা থেকে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে তাদের এ রকম কার্যক্রম শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। শুরু থেকে তারা তরুণ প্রজন্মকে প্রলুব্ধ এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ওয়ার্কশপ, সেমিনার করে আসছিল। বিলাসবহুল হোটেল কিংবা ব্যয়বহুল রেস্টুরেন্টে তারা তাদের সেমিনারগুলো অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অত্যন্ত ব্যয়বহুল পোস্টার-লিফলেট প্রকাশনা দেখে সহজেই বোঝা যায়, তাদের আর্থিক বুনিয়াদ অনেক শক্ত।
লক্ষণীয়, সরকার বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর হিযবুত তাহ্‌রীরের তৎপরতা হ্রাস পেলেও তারা এখনো সুযোগ বুঝে ঢাকার মতো ব্যস্ত জায়গায় মিটিং-মিছিল করেই চলেছে। এতে বোঝা যায়, শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জঙ্গি সংগঠনটি দমন করা সম্ভব হবে না। তাদের নির্মূল করতে না পারলে ভবিষ্যতে তারা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাদের সৃষ্ট ধর্মীয় উন্মাদনাকে যাতে কাজে না লাগাতে পারে, সে জন্য ধর্মীয় নেতা, বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষায় দ্রুত পরিবর্তন আনতে হবে। মসজিদের সামনে, বিশেষ করে জুমার নামাজের পর কোনো লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ করতে হবে। জঙ্গিপনা আর ইসলামের মধ্যে যে বৈপরীত্য আছে, তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ও সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠবে এসব জঙ্গি সংগঠন। এরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে, তা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.