পবিত্র কোরআনের আলো-পরকাল অস্বীকারকারীরা তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না

৮. বাল বাদা-লাহুম্ মা কানূ ইউখফূনা মিন্ ক্বাবলু; ওয়া লাও রুদ্দূ লাআ'দূ লিমা নুহূ আ'নহু ওয়া ইন্নাহুম লাকাযিবূন।
২৯. ওয়া ক্বালূ ইন্ হিয়া ইল্লা হায়াতুনাদ্-দুনিয়া ওয়া মা নাহ্নু বিমাবঊ'ছীন। ৩০. ওয়া লাও তারা ইয্ উকি্বফূ আ'লা রাবি্বহিম; ক্বালা আলাইছা হাযা বিলহাকি্ব; ক্বালূ বালা ওয়া রাবি্বনা; ক্বালা ফাযূক্বুল আ'যাবা বিমা কুনতুম তাকফুরূন।


৩১. ক্বাদ খাছিরাল্লাযীনা কায্যাবূ বিলিক্বায়িল্লাহি হাত্তা ইযা জা-আত্হুমুচ্ছাআ'তু বাগ্তাতান ক্বালূ ইয়া হাছরাতানা আ'লা মা ফার্রাত্বনা ফীহা ওয়া হুম ইয়াহ্মিলূনা আওযারাহুম আ'লা যুহূরিহিম; আলা ছা-আ মা ইয়াযিরূন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ২৮-৩১] অনুবাদ : ২৮. বরং এর আগে তারা যা গোপন করেছিল, তা তাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে। যদি তাদের আবার দুনিয়ায় পাঠানোও হয়, তবু তারা তাই করতে থাকবে, যা থেকে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারা প্রকৃতপক্ষেই মিথ্যাচারী।
২৯. এরা আরো বলে, আমাদের এ পার্থিব জীবনই হচ্ছে একমাত্র জীবন, আমরা কখনোই পুনরুজ্জীবিত হব না।
৩০. আহা! যদি আপনি দেখতে পেতেন, যখন তাদেরকে তাদের প্রভুর সামনে দাঁড় করানো হবে; তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন (এখন বলো)_এ দিনটি কি সত্যি নয়? তারা বলবে, হ্যাঁ সত্য, আমাদের প্রভুর শপথ! এদিন সত্য। (তখন) তিনি বলবেন, তাহলে সেই প্রতিশ্রুত শাস্তি ভোগ করো, যা তোমরা অস্বীকার করতে।
৩১. অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সামনা-সামনি হওয়াকে মিথ্যা বলেছে। একদিন যখন সত্যি সত্যিই কিয়ামতের মুহূর্ত তাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে, তখন তারা বলবে_হায় আফসোস, এ দিনটিকে আমরা কতই না অবহেলা করেছি। সেদিন তারা নিজেদের পাপের বোঝা নিজেদের পিঠেই বয়ে বেড়াবে। ধিক, তাদের সেই বোঝা কতই না নিকৃষ্ট।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলো আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায়ই এসেছে। আগের আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পরকাল অস্বীকারকারীরা যখন মৃত্যুর পর প্রতিশ্রুত কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে, তখন বুকফাটা আফসোস করে বলতে থাকবে, হায়, আমাদের যদি আবার দুনিয়ায় পাঠানো হতো! ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, বরং তারা আগে মনের ভেতর যে কুটিলতা গোপন করে রাখত, তার সবই নিজের সামনে দেখতে পাবে। তাদের আকুতি-মিনতি যে অসার এবং অসত্য, তা-ও এই আয়াতে বলে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাদের যদি দুনিয়ায় আবার পাঠানোও হয়, তবু তারা আগের মতো সেই নাফরমানিতেই লিপ্ত হবে। তারা আসলেই মিথ্যাচারী, তাদের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হবে না।
২৯ নম্বর আয়াতে অবিশ্বাসী পাপাচারীদের চরিত্রের বিশেষত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, বর্তমানই হলো জীবন, ভবিষ্যৎ বা পরকাল বলতে কিছু নেই। তারা ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করতে জানে না, তারা জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না। তারা ভোগসর্বস্বতাকেই জীবন মনে করে। তারা বিশ্বাস করে না যে আল্লাহ তায়ালা তাদের পুনরুজ্জীবিত করে জবাবদিহির জন্য তাঁর সামনে হাজির করবেন। ৩০ নম্বর আয়াতে আ@ি@@@ক জগতের সেই দৃশ্যটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যখন পরকাল অস্বীকারকারীরা পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুকফাটা আফসোসে ফেটে পড়া ছাড়া তাদের আর কিছু করার থাকবে না। তখন খুব সংগত কারণে বা ন্যায়সংগতভাবেই তারা শাস্তির মধ্যে তথা জাহান্নামে নিপতিত হবে। ৩১ নম্বর আয়াতে শেষ পরিণতি বা কিয়ামতের দিনের কথা বলা হয়েছে। কিয়ামতের সূচনা হয় প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তাফসিরে কাশ্শাফ প্রণেতার মতে, মৃত্যু কিয়ামতের সূচনাবলির অন্তর্ভুক্ত। কোনো কোনো তাফসিরকারের মতে, মৃত্যু কিয়ামতের তুল্য বা মৃত্যুই কিয়ামত। ব্যক্তিজীবনে যখন যার মৃত্যু, তখনই তার কিয়ামতের সূচনা। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই অবিশ্বাস এবং মিথ্যা প্রতিপাদনের সমাপ্তি ঘটবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.