ভারত হোক বাংলাদেশের অবাধ বাজার-সাক্ষাৎকার by মুচকুন্দ দুবে
সাক্ষাৎকার গ্রহণ :অজয় দাশগুপ্ত সমকাল : ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন কেউ কেউ পেশাদার কূটনীতিকের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পর 'বাংলাদেশের বন্ধু' হিসেবে বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু তাদের দায়িত্বে থাকাকালে ঠিক এমনটি মনে হয়নি। এ ধরনের অভিমত সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?
মুচকুন্দ দুবে : অন্যদের কথা বলতে পারব না।
মুচকুন্দ দুবে : অন্যদের কথা বলতে পারব না।
তবে ঢাকায় যখন দায়িত্ব নিয়ে আসি চেষ্টা করেছি এখানের জনগণ, তাদের আকাঙ্ক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য_ এসবের সঙ্গে যতটা সম্ভব পরিচিত হতে। আমি ঝাড়খণ্ডের অধিবাসী। বাংলা ভাষা কিছুটা জানি। এখানে এসে তা আরও রপ্ত করার চেষ্টা করি। ঢাকায় অবস্থানকালে আমি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত শামসুর রাহমানের অন্তত ৪০টি কবিতা হিন্দিতে অনুবাদ করেছি। এগুলো প্রকাশিতও হয়েছে। ৪০-৫০টি লালনগীতি অনুবাদ করেছি এবং এর কয়েকটি হিন্দিতে গেয়েছেন ফরিদা পারভীন। এসব গানের কয়েকটি ক্যাসেটও তার রয়েছে।
সমকাল : কেবলই সংস্কৃতি জগতের প্রতি আকর্ষণ...
মুচকুন্দ দুবে :না, না। যখন যে ইস্যু এসেছে, আমি প্রতিটি ক্ষেত্রেই চেষ্টা করেছি নিজেকে একজন বাংলাদেশির অবস্থানে রেখে পরিস্থিতি অনুধাবনের। নিজেকেই প্রশ্ন ছিল_ 'একজন বাংলাদেশের নাগরিক হলে তুমি ঠিক কী অবস্থান গ্রহণ করতে?' এ দেশের অবস্থান যথাযথভাবে বুঝতে না পারলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভালোভাবে কাজ করা যায় না_ এটাই আমি মনে করেছি। আমি এটাও মনে করেছি, যেখানে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কোনো স্বার্থ কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট নেই কিংবা তা ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা নেই, এ ধরনের প্রতিটি ইস্যুতেই বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তা মেনে নেওয়া। পানি বণ্টন থেকে বাণিজ্য প্রতিটি ইস্যুতেই আমার দায়িত্ব পালনকালে এ অবস্থান নিয়েছি, এখনও সুযোগ পেলে একই ধরনের অবস্থান ব্যক্ত করি। কূটনীতিতে গিভ অ্যান্ড টেক বলে একটা কথা রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সব ইস্যুতে ভারতের এমন অবস্থান গ্রহণের দরকার নেই। সম্প্রতি 'ফোরাম' পত্রিকায় 'ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন : ফেইলিউর অব লিডারশিপ অন দি ইন্ডিয়ান সাইড' শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতেও আমি বলেছি, 'ভারতের বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী এবং স্ট্র্যাটেজিক চিন্তাবিদ_ বাংলাদেশের প্রতি তাদের অনেকের মনোভাবে তাচ্ছিল্য ও উদাসীনতা প্রকাশ পায়।' এ মনোভাব অনেক আগেই পাল্টানো দরকার ছিল, এখন তো বলব হাইটাইম।
সমকাল : বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক সফরের সময় (৬-৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১) তিস্তার পানি বণ্টনসহ অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হয়েছিল। দিলি্ল বাণিজ্য ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ছাড় দেবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সফরের পর বাংলাদেশে কেবল হতাশাই বেড়েছে, এমনটিই সাধারণ মানুষের পর্যায়েও অভিমত। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মুচকুন্দ দুবে : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দিলি্লতে পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। তারাই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছেন। আমি প্রতিটি আলোচনায় এ অভিমত ব্যক্ত করেছি যে, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। তিস্তা ইস্যুতে ঠিক এটাই বলা চলে যে, 'জল আরও ঘোলা হয়েছে।'
সমকাল : ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যুতেও দুই পক্ষের অবস্থানে পার্থক্য যথেষ্ট...
মুচকুন্দ দুবে :ট্রানজিট চালু হলে দুই দেশ লাভবান হবে, এটা আমি নিশ্চিত। এর ফি কত আসবে, সেটা নিয়ে নানা হিসাব রয়েছে। আমি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত তারা একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বছরে ৪০ কোটি ডলারের মতো বাংলাদেশ আয় করতে পারবে। বাংলাদেশের মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কোনো কোনো সমীক্ষায় এর পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বলা হচ্ছে। তবে ট্রানজিটে ভারতের লাভ যথেষ্ট তাতে সন্দেহ নেই। এ কারণে ভারতের তরফে ফি ছাড়াও বাংলাদেশকে অন্যান্য কনসেশন দেওয়ার প্রশ্নটি গুরুত্ব পাচ্ছে। ট্রানজিটে শুধু যে ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য যাবে তা নয়, সেসব রাজ্য থেকেও পণ্য ভারতের বিভিন্ন অংশে এবং অন্যান্য দেশেও যাবে।
সমকাল : যত মাশুলই বাংলাদেশের ভাণ্ডারে জমা পড়ূক, ট্রানজিট থেকে ভারতেরই বেশি লাভ হওয়ার কথা...
মুচকুন্দ দুবে : বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেতে-আসতে সময় ও অর্থ বাঁচবে অনেক। এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ ভারতের রয়েছে_ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাদবাকি অংশের রাজনৈতিক ইন্টিগ্রেশন। ওই সব রাজ্যের অভিযোগ_ সেখানে উন্নয়ন হচ্ছে না। অবহেলার কথাও বলা হয়। বাংলাদেশের সহায়তা নিয়ে সেখানে উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এ সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। ভারতকে এ সুবিধা বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা এক বিলিয়ন ডলার বা একশ' কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। আমি মনে করি, এটা এক হাজার কোটি ডলার হওয়া উচিত। তাতে বাংলাদেশের অবকাঠামো সুবিধা উন্নত হবে এবং এ থেকে তারাও লাভবান হবে। অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে তা সহায়ক হবে। আপনাদের চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা যদি প্রসারিত হয় তাহলে কেবল ভারতই লাভবান হবে না, এটাকে আমি বলব উইন উইন পরিস্থিতি_ দুটি দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশের ভেতরেও এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে।
সমকাল : অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেও এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আপনার দৃষ্টিতে সমস্যা কোথায়?
মুচকুন্দ দুবে : প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত এ খাতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়নের গতি খুবই শ্লথ এবং এ জন্য সম্পূর্ণ দায় ভারতেরই। এতদিনে এর বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর বিপরীত। চীন যদি এ ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করত, তাহলে এ সময়ের মধ্যে তারা প্রায় সব অর্থ ব্যয় করে ফেলত। সময়মতো কাজ সম্পাদনে ভারতের সমস্যা দীর্ঘদিনের এবং আরেকবার এর প্রমাণ মিলল। ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে তার যে বিনিয়োগ তা তাদের স্বার্থও রক্ষা করবে। এ কাজ সময়মতো না হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের ভেতরে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে সময়মতো কাজ করার যে মনোভাব থাকে, এ ক্ষেত্রেও সেটা দেখাতে হবে।
সমকাল : বাণিজ্য বৈষম্যও দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে আছে...
মুচকুন্দ দুবে :বাংলাদেশে ভারতের রফতানি (আনুষ্ঠানিক বা বৈধ পথে) গত দুই-তিন বছর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের আশপাশে। অনানুষ্ঠানিক পথে ভারত থেকে আরও প্রচুর পণ্য বাংলাদেশে আসে। বলা যায়, সব মিলিয়ে ৫০০-৬০০ কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশে আসে। চার-পাঁচ বছর আগেই চীন ভারতকে ধরে ফেলেছে এবং কখনও কখনও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর আগ পর্যন্ত ভারতই ছিল বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক। এর বিপরীতে বলতে গেলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি সীমিত। আমি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরআইএসের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, তৈরি পোশাক ছাড়া আর কোনো পণ্যে বাংলাদেশের যত রফতানিই হোক তাতে ভারতের শিল্প ও ব্যবসায়িক স্বার্থ বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ন হয় না। ভারতে বাংলাদেশ যাতে পণ্য রফতানি বাড়াতে পারে সে জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এ জন্য দুই দেশের সরকারকেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে হবে। আমরা এটাও বলেছি, বাংলাদেশের কোনো পণ্যকেই ভারতের বাজারে 'নেগেটিভ লিস্টে' রাখা চলবে না। মনমোহন সিংয়ের সফরের আগে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আমি শিব শঙ্কর মেননকে দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সফরকালে এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন দেখা যায়নি। বাংলাদেশ যেন বুঝতে পারে, গোটা ভারতই তাদের অবাধ বাজার_ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এমন একটি ঘোষণা দেবেন, সেটাই আমি চেয়েছিলাম। শুল্ক কিংবা অশুল্ক কোনো বাধাই যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
সমকাল : চীন ও ভারত দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বিষয়টিকে ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে দেখবেন?
মুচকুন্দ দুবে : আমি শুরুতে বলেছি, বাংলাদেশের বিষয়ে মতামত দিতে হলে নিজেকে প্রথমে বাংলাদেশি হলে কী করতাম_ সে অবস্থানে রাখি। আমি একজন বাংলাদেশি হলে এ সিদ্ধান্তে আসতাম যে, বাংলাদেশের সর্বোত্তম স্বার্থ নিহিত রয়েছে দুই দেশের সঙ্গে সমভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যে। এখানে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে কে বাংলাদেশকে বেশি সুবিধা প্রদান করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা হতে পারে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এর একটি কারণ ভাষা ও সংস্কৃতিগত। আরেকটি কারণ ভৌগোলিক নৈকট্য। খাদ্য ও পোশাকের পছন্দেও যথেষ্ট মিল। ভারত যদি এসব সুবিধা কাজে লাগাতে না পারে, সেটা তাদের ব্যর্থতা। চীন যে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে এগিয়ে, সেটা তাদের সাফল্য। ভারত যদি বিনিয়োগ না বাড়ায়, চীন সে সুবিধা নেবে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্ব জয় করছে। এখানেও তারা ভারতের তুলনায় আরও এগিয়ে যেতে পারবে। একজন কূটনীতিক হিসেবে আমি কখনও কখনও ব্যথিত বোধকরি এটা ভেবে যে, যেখানে ভারতের সুবিধা সেখানে চীন এগিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে কীভাবে অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে হয়।
সমকাল : বাংলাদেশে অনেক পণ্যের বাজার ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক দেশ অভ্যন্তরীণ বাজারের অপরিহার্য প্রয়োজনেও কোনো সিদ্ধান্ত নিলে অন্য দেশের ওপর এর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি ভারত সরকার সপ্তাহখানেকের জন্য পেঁয়াজ রফতানি স্থগিত রেখেছিল। এর প্রভাবে বাংলাদেশে এ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। ভারত চাল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে এড়ানো সম্ভব?
মুচকুন্দ দুবে : বিষয়টি যথার্থই গুরুত্বের দাবি রাখে। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বাজারে জোগান বাড়ানোর জন্য। কিন্তু দেখা গেল, এর ফলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক কমে যায় এবং উৎপাদকরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে দাম বেড়ে যায় সম্ভাব্য ঘাটতির শঙ্কা থেকে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে দুই দেশের নিয়মিত আলোচনা বাড়াতে হবে। আমার আরেকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশ এমন একটি চুক্তি সই করুক যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আকস্মিক ফসলহানি, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট কিংবা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পরস্পরের পাশে দাঁড়াবে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ তার সম্পদ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ভারত তার নিজস্ব বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু তা যদি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলে তাহলে আগেভাগে তা নিয়ে আলোচনা করাই সঙ্গত। দুই দেশ যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট করেছে তাতে এ ধরনের ধারা রাখা যেত। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এ ধরনের চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সিরিয়াস আলোচনা করতে পারে।
সমকাল : বাংলাদেশে নিয়মিত আসছেন। কেমন দেখছেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ?
মুচকুন্দ দুবে : গণতন্ত্র থাকলে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে। ভুলত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে মনে হতে পারে যে, দেশটি সমস্যায় ভরা। সার্বিকভাবে আমার মনে হয়, চার দশকে দেশটি অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। অনেক সম্ভাবনা দেশটির। ভৌগোলিক গুরুত্বও অনেক। রাজনীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই এমনভাবে কাজ করবেন যাতে জনগণ মনে করে যে, তাদের আরও সুযোগ দেওয়া দরকার। এ জন্য তাদেরই কাজ করতে হবে। আর গণতন্ত্রের পরিবেশে বিরোধীদেরও জনগণকে এটাই বলতে হবে যে, তারা আরও ভালোভাবে দেশ চালাবে।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুচকুন্দ দুবে : সমকালের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ। বাংলাদেশের বন্ধু মনে করি নিজেকে, সেভাবেই থাকতে চাই।
সমকাল : কেবলই সংস্কৃতি জগতের প্রতি আকর্ষণ...
মুচকুন্দ দুবে :না, না। যখন যে ইস্যু এসেছে, আমি প্রতিটি ক্ষেত্রেই চেষ্টা করেছি নিজেকে একজন বাংলাদেশির অবস্থানে রেখে পরিস্থিতি অনুধাবনের। নিজেকেই প্রশ্ন ছিল_ 'একজন বাংলাদেশের নাগরিক হলে তুমি ঠিক কী অবস্থান গ্রহণ করতে?' এ দেশের অবস্থান যথাযথভাবে বুঝতে না পারলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভালোভাবে কাজ করা যায় না_ এটাই আমি মনে করেছি। আমি এটাও মনে করেছি, যেখানে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কোনো স্বার্থ কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট নেই কিংবা তা ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা নেই, এ ধরনের প্রতিটি ইস্যুতেই বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তা মেনে নেওয়া। পানি বণ্টন থেকে বাণিজ্য প্রতিটি ইস্যুতেই আমার দায়িত্ব পালনকালে এ অবস্থান নিয়েছি, এখনও সুযোগ পেলে একই ধরনের অবস্থান ব্যক্ত করি। কূটনীতিতে গিভ অ্যান্ড টেক বলে একটা কথা রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সব ইস্যুতে ভারতের এমন অবস্থান গ্রহণের দরকার নেই। সম্প্রতি 'ফোরাম' পত্রিকায় 'ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন : ফেইলিউর অব লিডারশিপ অন দি ইন্ডিয়ান সাইড' শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতেও আমি বলেছি, 'ভারতের বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী এবং স্ট্র্যাটেজিক চিন্তাবিদ_ বাংলাদেশের প্রতি তাদের অনেকের মনোভাবে তাচ্ছিল্য ও উদাসীনতা প্রকাশ পায়।' এ মনোভাব অনেক আগেই পাল্টানো দরকার ছিল, এখন তো বলব হাইটাইম।
সমকাল : বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাম্প্রতিক সফরের সময় (৬-৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১) তিস্তার পানি বণ্টনসহ অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হয়েছিল। দিলি্ল বাণিজ্য ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ছাড় দেবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সফরের পর বাংলাদেশে কেবল হতাশাই বেড়েছে, এমনটিই সাধারণ মানুষের পর্যায়েও অভিমত। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মুচকুন্দ দুবে : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে দিলি্লতে পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। তারাই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছেন। আমি প্রতিটি আলোচনায় এ অভিমত ব্যক্ত করেছি যে, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। তিস্তা ইস্যুতে ঠিক এটাই বলা চলে যে, 'জল আরও ঘোলা হয়েছে।'
সমকাল : ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যুতেও দুই পক্ষের অবস্থানে পার্থক্য যথেষ্ট...
মুচকুন্দ দুবে :ট্রানজিট চালু হলে দুই দেশ লাভবান হবে, এটা আমি নিশ্চিত। এর ফি কত আসবে, সেটা নিয়ে নানা হিসাব রয়েছে। আমি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত তারা একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বছরে ৪০ কোটি ডলারের মতো বাংলাদেশ আয় করতে পারবে। বাংলাদেশের মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। কোনো কোনো সমীক্ষায় এর পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বলা হচ্ছে। তবে ট্রানজিটে ভারতের লাভ যথেষ্ট তাতে সন্দেহ নেই। এ কারণে ভারতের তরফে ফি ছাড়াও বাংলাদেশকে অন্যান্য কনসেশন দেওয়ার প্রশ্নটি গুরুত্ব পাচ্ছে। ট্রানজিটে শুধু যে ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য যাবে তা নয়, সেসব রাজ্য থেকেও পণ্য ভারতের বিভিন্ন অংশে এবং অন্যান্য দেশেও যাবে।
সমকাল : যত মাশুলই বাংলাদেশের ভাণ্ডারে জমা পড়ূক, ট্রানজিট থেকে ভারতেরই বেশি লাভ হওয়ার কথা...
মুচকুন্দ দুবে : বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেতে-আসতে সময় ও অর্থ বাঁচবে অনেক। এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ ভারতের রয়েছে_ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাদবাকি অংশের রাজনৈতিক ইন্টিগ্রেশন। ওই সব রাজ্যের অভিযোগ_ সেখানে উন্নয়ন হচ্ছে না। অবহেলার কথাও বলা হয়। বাংলাদেশের সহায়তা নিয়ে সেখানে উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এ সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। ভারতকে এ সুবিধা বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা এক বিলিয়ন ডলার বা একশ' কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। আমি মনে করি, এটা এক হাজার কোটি ডলার হওয়া উচিত। তাতে বাংলাদেশের অবকাঠামো সুবিধা উন্নত হবে এবং এ থেকে তারাও লাভবান হবে। অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে তা সহায়ক হবে। আপনাদের চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা যদি প্রসারিত হয় তাহলে কেবল ভারতই লাভবান হবে না, এটাকে আমি বলব উইন উইন পরিস্থিতি_ দুটি দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশের ভেতরেও এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে।
সমকাল : অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেও এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আপনার দৃষ্টিতে সমস্যা কোথায়?
মুচকুন্দ দুবে : প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত এ খাতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়নের গতি খুবই শ্লথ এবং এ জন্য সম্পূর্ণ দায় ভারতেরই। এতদিনে এর বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর বিপরীত। চীন যদি এ ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করত, তাহলে এ সময়ের মধ্যে তারা প্রায় সব অর্থ ব্যয় করে ফেলত। সময়মতো কাজ সম্পাদনে ভারতের সমস্যা দীর্ঘদিনের এবং আরেকবার এর প্রমাণ মিলল। ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে তার যে বিনিয়োগ তা তাদের স্বার্থও রক্ষা করবে। এ কাজ সময়মতো না হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের ভেতরে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে সময়মতো কাজ করার যে মনোভাব থাকে, এ ক্ষেত্রেও সেটা দেখাতে হবে।
সমকাল : বাণিজ্য বৈষম্যও দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে আছে...
মুচকুন্দ দুবে :বাংলাদেশে ভারতের রফতানি (আনুষ্ঠানিক বা বৈধ পথে) গত দুই-তিন বছর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের আশপাশে। অনানুষ্ঠানিক পথে ভারত থেকে আরও প্রচুর পণ্য বাংলাদেশে আসে। বলা যায়, সব মিলিয়ে ৫০০-৬০০ কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশে আসে। চার-পাঁচ বছর আগেই চীন ভারতকে ধরে ফেলেছে এবং কখনও কখনও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর আগ পর্যন্ত ভারতই ছিল বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক। এর বিপরীতে বলতে গেলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি সীমিত। আমি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরআইএসের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, তৈরি পোশাক ছাড়া আর কোনো পণ্যে বাংলাদেশের যত রফতানিই হোক তাতে ভারতের শিল্প ও ব্যবসায়িক স্বার্থ বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ন হয় না। ভারতে বাংলাদেশ যাতে পণ্য রফতানি বাড়াতে পারে সে জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এ জন্য দুই দেশের সরকারকেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে হবে। আমরা এটাও বলেছি, বাংলাদেশের কোনো পণ্যকেই ভারতের বাজারে 'নেগেটিভ লিস্টে' রাখা চলবে না। মনমোহন সিংয়ের সফরের আগে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আমি শিব শঙ্কর মেননকে দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সফরকালে এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন দেখা যায়নি। বাংলাদেশ যেন বুঝতে পারে, গোটা ভারতই তাদের অবাধ বাজার_ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এমন একটি ঘোষণা দেবেন, সেটাই আমি চেয়েছিলাম। শুল্ক কিংবা অশুল্ক কোনো বাধাই যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
সমকাল : চীন ও ভারত দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বিষয়টিকে ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে দেখবেন?
মুচকুন্দ দুবে : আমি শুরুতে বলেছি, বাংলাদেশের বিষয়ে মতামত দিতে হলে নিজেকে প্রথমে বাংলাদেশি হলে কী করতাম_ সে অবস্থানে রাখি। আমি একজন বাংলাদেশি হলে এ সিদ্ধান্তে আসতাম যে, বাংলাদেশের সর্বোত্তম স্বার্থ নিহিত রয়েছে দুই দেশের সঙ্গে সমভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যে। এখানে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে কে বাংলাদেশকে বেশি সুবিধা প্রদান করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা হতে পারে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এর একটি কারণ ভাষা ও সংস্কৃতিগত। আরেকটি কারণ ভৌগোলিক নৈকট্য। খাদ্য ও পোশাকের পছন্দেও যথেষ্ট মিল। ভারত যদি এসব সুবিধা কাজে লাগাতে না পারে, সেটা তাদের ব্যর্থতা। চীন যে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে এগিয়ে, সেটা তাদের সাফল্য। ভারত যদি বিনিয়োগ না বাড়ায়, চীন সে সুবিধা নেবে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্ব জয় করছে। এখানেও তারা ভারতের তুলনায় আরও এগিয়ে যেতে পারবে। একজন কূটনীতিক হিসেবে আমি কখনও কখনও ব্যথিত বোধকরি এটা ভেবে যে, যেখানে ভারতের সুবিধা সেখানে চীন এগিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে কীভাবে অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে হয়।
সমকাল : বাংলাদেশে অনেক পণ্যের বাজার ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক দেশ অভ্যন্তরীণ বাজারের অপরিহার্য প্রয়োজনেও কোনো সিদ্ধান্ত নিলে অন্য দেশের ওপর এর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি ভারত সরকার সপ্তাহখানেকের জন্য পেঁয়াজ রফতানি স্থগিত রেখেছিল। এর প্রভাবে বাংলাদেশে এ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। ভারত চাল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে এড়ানো সম্ভব?
মুচকুন্দ দুবে : বিষয়টি যথার্থই গুরুত্বের দাবি রাখে। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বাজারে জোগান বাড়ানোর জন্য। কিন্তু দেখা গেল, এর ফলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক কমে যায় এবং উৎপাদকরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে দাম বেড়ে যায় সম্ভাব্য ঘাটতির শঙ্কা থেকে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে দুই দেশের নিয়মিত আলোচনা বাড়াতে হবে। আমার আরেকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশ এমন একটি চুক্তি সই করুক যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আকস্মিক ফসলহানি, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট কিংবা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পরস্পরের পাশে দাঁড়াবে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ তার সম্পদ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ভারত তার নিজস্ব বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু তা যদি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলে তাহলে আগেভাগে তা নিয়ে আলোচনা করাই সঙ্গত। দুই দেশ যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট করেছে তাতে এ ধরনের ধারা রাখা যেত। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এ ধরনের চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সিরিয়াস আলোচনা করতে পারে।
সমকাল : বাংলাদেশে নিয়মিত আসছেন। কেমন দেখছেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ?
মুচকুন্দ দুবে : গণতন্ত্র থাকলে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে। ভুলত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে মনে হতে পারে যে, দেশটি সমস্যায় ভরা। সার্বিকভাবে আমার মনে হয়, চার দশকে দেশটি অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। অনেক সম্ভাবনা দেশটির। ভৌগোলিক গুরুত্বও অনেক। রাজনীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই এমনভাবে কাজ করবেন যাতে জনগণ মনে করে যে, তাদের আরও সুযোগ দেওয়া দরকার। এ জন্য তাদেরই কাজ করতে হবে। আর গণতন্ত্রের পরিবেশে বিরোধীদেরও জনগণকে এটাই বলতে হবে যে, তারা আরও ভালোভাবে দেশ চালাবে।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুচকুন্দ দুবে : সমকালের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ। বাংলাদেশের বন্ধু মনে করি নিজেকে, সেভাবেই থাকতে চাই।
No comments