বিশ্ব ইজতেমা-আজ আখেরি মোনাজাত by রফিকুল ইসলাম ও মাসুদ রানা

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিয়েছেন লাখো মুসল্লি। তাঁদের পদচারণে এখন মুখরিত টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।


ময়দান ও আশপাশে তাই উপচে পড়া ভিড়। জেলাভিত্তিক নির্ধারিত স্থানের বাইরেও রাস্তার ওপরে পলিথিনের তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বহু মুসল্লি। গতকালও বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ইজতেমাস্থলে পৌঁছেছেন অনেকে।
ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্ব পাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে একটার মধ্যে শুরু হবে আখেরি মোনাজাত। এর আগে ‘হেদায়েতি বয়ান’ করবেন ভারতের মাওলানা সা’দ এবং দোয়া পরিচালনা করবেন সে দেশেরই প্রখ্যাত আলেম ও বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি মাওলানা জোবায়েরুল হাসান।
ইজতেমার প্রথম পর্ব ছিল ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি থেকে আজ রোববার ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত হচ্ছে দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব। উভয় পর্বে প্রায় সমানসংখ্যক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে ইজতেমার আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
গতকাল ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা তাবলিগের ছয় ‘উছুল’ সম্পর্কে বয়ান করেন। মুরব্বিদের বয়ানে বলা হয়, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া দুনিয়ার জীবনের দাম নেই। ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান শক্তিশালী হয়। এ সময় ময়দানজুড়ে ছিল নীরবতা।
বয়ানের পর ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা কিছু সময় ইবাদতে মশগুল থাকেন। এরপর শুরু হয় দুপুরের খাওয়ার জন্য ব্যস্ততা। দুপুরে ইজতেমা মাঠের প্রবেশপথে মানচিত্রের সামনে দেখা যায় নতুন আসা অনেক মুসল্লিকে। তাঁরা মানচিত্র দেখে খুঁজে নেন নিজ নিজ এলাকার ‘খিত্তা’। দুপুরে ইজতেমার মূল মঞ্চে আলেমদের বয়ান চলে।
ইজতেমায় নারীদের অংশগ্রহণ ও অবস্থানে কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকলেও বয়ান শুনতে এবং আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মাঠের বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেক ধর্মপ্রাণ নারীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
যৌতুকবিহীন বিয়ে: শনিবার বিশ্ব ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ ছিল এ আয়োজনের প্রথায় পরিণত হওয়া যৌতুকবিহীন গণবিয়ে। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী, আসরের নামাজের পর বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে এবং বর ও উভয় পক্ষের স্বজনদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা জোবায়েরুল হাসান। বিয়ের পর মোনাজাতের মাধ্যমে নবদম্পতিদের সুখী জীবন কামনা করা হয়। গতকাল যৌতুকবিহীন বিয়ের জন্য শতাধিক জোড়া বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জমজমাট বাজার: গতকাল দুপুরে ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমা ঘিরে গড়ে ওঠা ভাসমান বাজার শেষ মুহূর্তে এসে জমজমাট হয়ে উঠেছে। ইজতেমা মাঠ লাগোয়া টঙ্গী মিলগেট, হোন্ডা রোড, মাজার রোডসহ আশপাশের এলাকায় বসেছে নানা পণ্যের বাজার। মুসল্লিরা শীতের কাপড়, ইসলামি বইপত্র, টুপি, তসবিহ, জায়নামাজসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছেন।
টঙ্গী মিলগেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। দুই পর্ব মিলিয়ে অনেক মানুষ আসে বলে বেচাকেনা ভালো হয়।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে ভিড়: মুসল্লিদের ভিড় ছিল ইজতেমা ময়দানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও। সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৫০টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতালে শনিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত ২০ জন মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। হাঁপানি ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে আবাসিক চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন সিরাজী জানান। এ ছাড়া ইজতেমাস্থল এলাকায় বিনা মূল্যের চিকিৎসাকেন্দ্রে কয়েক হাজার মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন।
যানজটবিহীন অন্য রকম টঙ্গী: ইজতেমার আয়োজনে টঙ্গী যানজটবিহীন ভিন্ন শহরে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র নেই অবৈধ দোকানপাট। রাস্তার ওপরে অবৈধ বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। নগরের মিলগেট, স্টেশন রোড, বাজার রোডে সব সময় যানজট লেগে থাকলেও এখন গাড়ি চলছে নির্বিঘ্নে। ফুটপাত দিয়ে স্বচ্ছন্দে চলতে পারছেন পথচারীরা। টঙ্গী স্টেশন রোডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কড়া নজরদারি থাকলে টঙ্গীকে এভাবেই যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব।’

No comments

Powered by Blogger.