পবিত্র কোরআনের আলো-বাস্তব যুক্তি-বুদ্ধি দিয়েই মানুষকে সুপথে আনতে হবে
৩২। ওয়া মাল হাইয়া-তুদ্ দুনিয়া ইল্লা লায়িবুওঁ ওয়া লাহাউ; ওয়ালাদ্ দারুল আখিরাতু খাইরুল্ লিল্লাযিনা ইয়াত্তাক্বূনা আফালা তা'কি্বলূন। ৩৩। ক্বাদ না'লামু ইন্নাহু লাইয়াহ্যুনুকাল্লাযী ইয়াক্বূলূনা ফাইন্নাহুম লা ইউকায্যিবূনাকা ওয়া লাকিন্নায যালিমিনা বিআয়াতিল্লাহি ইয়াজ্হাদূন।
৩৪। ওয়ালাক্বাদ কুয্যিবাত্ রুছুলুম্ মিন্ ক্বাবলিকা ফাসাবারু আ'লা-মা-কুয্যিবূ ওয়াউযূ হাত্তা-আতা-হুম্ নাসরুনা; ওয়ালা-মুবাদ্দিলা লিকালিমাতিল্লাহি; ওয়ালাক্বাদ জা-আকা মিন্ নাবা-য়িল মুরছালিন।
৩৫। ওয়া ইন কা-না কাবুরা আ'লাইকা ই'রা-দ্বুহুম ফাইনিছ্ তাত্বা'তা আন তাবতাগিইয়া নাফাক্বান ফিল আরদ্বি আও ছুল্লামান ফিচ্ছামা-য়ি ফাতা'তিইয়াহুম বিআয়াতিন; ওয়া লাও শা-আল্লাহু লাজামাআ'হুম আ'লাল হুদা-ফালা-তাকূনান্না মিনাল জাহিলিন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৩২-৩৫]
অনুবাদ : ৩২. আর এই জগতের বৈষয়িক জীবন তো নিছক খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের ঠিকানাই তাদের জন্য উকৃষ্ট, যারা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ। তোমরা কি বিষয়টি বুঝতে পারো না।
৩৩. (হে নবী) আমি জানি, এরা যেসব কথা বলে তা আপনাকে পীড়া দেয়। এরা তো শুধু আপনাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে না, বরং এই জালেমরা আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করছে।
৩৪. আপনার আগেও এভাবে নবী-রাসুলদের মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে তাঁরা ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, তাঁদের মিথ্যা সাব্যস্ত করা ও নির্যাতন করার পরও। শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে আমার সাহায্য এসে পেঁৗছেছিল। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর কথার রদবদলকারী কেউ নেই, আর নবী-রাসুলদের সংবাদ তো আপনার কাছে এসে পেঁৗছেছে।
৩৫. যদি তাদের এ উপেক্ষা আপনার কাছে কষ্টকর মনে হয়, তাহলে আপনার সাধ্য থাকলে আপনি ভূগর্ভে কোনো সুড়ঙ্গ কিংবা আকাশে কোনো সিঁড়ি তালাশ করুন এবং সেখান থেকে তাদের জন্য কোনো মুজিজা নিয়ে আসুন। আল্লাহ যদি চাইতেন তিনি এদের সবাইকে সুপথে জড়ো করে দিতে পারতেন। অতএব, আপনি কখনো জাহেলদের দলভুক্ত হবেন না।
ব্যাখ্যা : ৩২ নম্বর আয়াতে যেখানে 'হায়াতুদদুনিয়া' বা পার্থিব জীবনকে খেল-তামাশা বলা হয়েছে। এর অর্থ প্রকৃত জীবনকে খেল-তামাশা বলা নয়, বরং ভোগসর্বস্ব জীবনকে খেল-তামাশা বলা হয়েছে। পার্থিব জীবন অবশ্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ জীবন পরকালের কর্মক্ষেত্র। শুধু এ জীবনেই আছে মানুষের স্বাধীনতা ও সফলতা অর্জনের সুযোগ। এ জীবনের দায়িত্বনিষ্ঠতা যখন মানুষ ভুলে যায়, তখন সেটা হয় খেল-তামাশার জীবন; সেই জীবনই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত জীবন।
৩৩ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : একদিন কুরাইশ নেতা আবু জাহেল রাসুল (সা.)-কে বলল, 'আমরা অবশ্যই তোমাকে অবিশ্বাস করি না, তুমি তো আমাদেরই সন্তান। কিন্তু তুমি যে নতুন ধর্ম ও কিতাবের কথা বলছ, তা তো আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। তুমি তো আমাদের পূর্বপুরুষের ধর্মকে অস্বীকার করছ। আমাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম সত্য এবং তোমার দাবি মিথ্যা।' এ সম্পর্কে আয়াতটি নাজিল হয়।
৩৪ নম্বর আয়াতে রাসুল (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের কাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আগের নবীদেরও এভাবে তাঁদের সমকালের জাহেল লোকরা মিথ্যা সাব্যস্ত করত এবং তাঁদের নির্যাতন করত, অনেককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী অর্থে আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না।
৩৫ নম্বর আয়াতে একটি অনেক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টির তাৎপর্য খোলাসা করার জন্য এখানে কিছু উপহাসব্যঞ্জক উপমাও ব্যবহার করা হয়েছে। কাফেররা রাসুল (সা.)-এর কাছে তাঁর নবুয়তির প্রমাণ হিসেবে মুজিজা দেখার দাবি জানাত। অতীতের অনেক নবীর বহু মুজিজা ছিল। তবে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা অলৌকিক মুজিজার ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। কাফেরদের ফরমায়েশি মুজিজার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, 'এগুলো অনাবশ্যক ও ক্ষতিকর বিবেচনায় আমি তাদের আবদার পূরণ করিনি।' রাসুল (সা.)-কে কিছুটা উপহাস করেই বলা হয়, 'যদি পরিস্থিতি আপনার কাছে অসহনীয় মনে হয় বা আপনি যদি চান সবাইকে মুসলমান বানিয়ে ফেলতে, তাহলে আকাশের সিঁড়ি বা মাটির সুড়ঙ্গ খুঁজে দেখতে পারেন।' অর্থাৎ অবাস্তবতার চর্চা করতে পারেন। কিন্তু আসল পথ হলো, বাস্তবতার চর্চা করা। যুক্তি-বুদ্ধি ও বাস্তব জীবনধারার মাধ্যমে মানুষকে সত্য ও শান্তির পথে নিয়ে আসাই প্রকৃত পথ। আল্লাহ তাঁর রাসুল সাইয়্যেদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সেই পথের দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন। আখেরি নবীর যুগ অধিকতর যুক্তি-বুদ্ধি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ।
- গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৩৫। ওয়া ইন কা-না কাবুরা আ'লাইকা ই'রা-দ্বুহুম ফাইনিছ্ তাত্বা'তা আন তাবতাগিইয়া নাফাক্বান ফিল আরদ্বি আও ছুল্লামান ফিচ্ছামা-য়ি ফাতা'তিইয়াহুম বিআয়াতিন; ওয়া লাও শা-আল্লাহু লাজামাআ'হুম আ'লাল হুদা-ফালা-তাকূনান্না মিনাল জাহিলিন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৩২-৩৫]
অনুবাদ : ৩২. আর এই জগতের বৈষয়িক জীবন তো নিছক খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের ঠিকানাই তাদের জন্য উকৃষ্ট, যারা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ। তোমরা কি বিষয়টি বুঝতে পারো না।
৩৩. (হে নবী) আমি জানি, এরা যেসব কথা বলে তা আপনাকে পীড়া দেয়। এরা তো শুধু আপনাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে না, বরং এই জালেমরা আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করছে।
৩৪. আপনার আগেও এভাবে নবী-রাসুলদের মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে তাঁরা ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, তাঁদের মিথ্যা সাব্যস্ত করা ও নির্যাতন করার পরও। শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে আমার সাহায্য এসে পেঁৗছেছিল। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর কথার রদবদলকারী কেউ নেই, আর নবী-রাসুলদের সংবাদ তো আপনার কাছে এসে পেঁৗছেছে।
৩৫. যদি তাদের এ উপেক্ষা আপনার কাছে কষ্টকর মনে হয়, তাহলে আপনার সাধ্য থাকলে আপনি ভূগর্ভে কোনো সুড়ঙ্গ কিংবা আকাশে কোনো সিঁড়ি তালাশ করুন এবং সেখান থেকে তাদের জন্য কোনো মুজিজা নিয়ে আসুন। আল্লাহ যদি চাইতেন তিনি এদের সবাইকে সুপথে জড়ো করে দিতে পারতেন। অতএব, আপনি কখনো জাহেলদের দলভুক্ত হবেন না।
ব্যাখ্যা : ৩২ নম্বর আয়াতে যেখানে 'হায়াতুদদুনিয়া' বা পার্থিব জীবনকে খেল-তামাশা বলা হয়েছে। এর অর্থ প্রকৃত জীবনকে খেল-তামাশা বলা নয়, বরং ভোগসর্বস্ব জীবনকে খেল-তামাশা বলা হয়েছে। পার্থিব জীবন অবশ্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ জীবন পরকালের কর্মক্ষেত্র। শুধু এ জীবনেই আছে মানুষের স্বাধীনতা ও সফলতা অর্জনের সুযোগ। এ জীবনের দায়িত্বনিষ্ঠতা যখন মানুষ ভুলে যায়, তখন সেটা হয় খেল-তামাশার জীবন; সেই জীবনই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত জীবন।
৩৩ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : একদিন কুরাইশ নেতা আবু জাহেল রাসুল (সা.)-কে বলল, 'আমরা অবশ্যই তোমাকে অবিশ্বাস করি না, তুমি তো আমাদেরই সন্তান। কিন্তু তুমি যে নতুন ধর্ম ও কিতাবের কথা বলছ, তা তো আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। তুমি তো আমাদের পূর্বপুরুষের ধর্মকে অস্বীকার করছ। আমাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম সত্য এবং তোমার দাবি মিথ্যা।' এ সম্পর্কে আয়াতটি নাজিল হয়।
৩৪ নম্বর আয়াতে রাসুল (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের কাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আগের নবীদেরও এভাবে তাঁদের সমকালের জাহেল লোকরা মিথ্যা সাব্যস্ত করত এবং তাঁদের নির্যাতন করত, অনেককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সুদূরপ্রসারী অর্থে আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না।
৩৫ নম্বর আয়াতে একটি অনেক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টির তাৎপর্য খোলাসা করার জন্য এখানে কিছু উপহাসব্যঞ্জক উপমাও ব্যবহার করা হয়েছে। কাফেররা রাসুল (সা.)-এর কাছে তাঁর নবুয়তির প্রমাণ হিসেবে মুজিজা দেখার দাবি জানাত। অতীতের অনেক নবীর বহু মুজিজা ছিল। তবে আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা অলৌকিক মুজিজার ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। কাফেরদের ফরমায়েশি মুজিজার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, 'এগুলো অনাবশ্যক ও ক্ষতিকর বিবেচনায় আমি তাদের আবদার পূরণ করিনি।' রাসুল (সা.)-কে কিছুটা উপহাস করেই বলা হয়, 'যদি পরিস্থিতি আপনার কাছে অসহনীয় মনে হয় বা আপনি যদি চান সবাইকে মুসলমান বানিয়ে ফেলতে, তাহলে আকাশের সিঁড়ি বা মাটির সুড়ঙ্গ খুঁজে দেখতে পারেন।' অর্থাৎ অবাস্তবতার চর্চা করতে পারেন। কিন্তু আসল পথ হলো, বাস্তবতার চর্চা করা। যুক্তি-বুদ্ধি ও বাস্তব জীবনধারার মাধ্যমে মানুষকে সত্য ও শান্তির পথে নিয়ে আসাই প্রকৃত পথ। আল্লাহ তাঁর রাসুল সাইয়্যেদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সেই পথের দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন। আখেরি নবীর যুগ অধিকতর যুক্তি-বুদ্ধি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ।
- গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments