মাদ্রাসা শিক্ষা কারিকুলাম-প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে

মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন প্রত্যাশিত হলেও এ ক্ষেত্রে অর্জন কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। সবাই স্বীকার করেন, স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষিতদের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের বিভেদ দূর করার জন্য মাদ্রাসা কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা দরকার। এ পরিবর্তনগুলো মাদ্রাসা শিক্ষাকেই শুধু যুগোপযোগী করবে না, চাকরি ও শিক্ষা-পরবর্তী সুযোগ-সুবিধায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পথও সুগম করবে।


তবে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা দরকার। হঠাৎ সিদ্ধান্তে যেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থা কোনোটাই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কিন্তু অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ পুরো প্রক্রিয়াকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ পরিস্থিতিতেও মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের জন্য নানা উদ্যোগ অব্যাহত আছে, সেটি প্রশংসনীয়। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে দাখিল স্তরের শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। সবাই শিক্ষা কারিকুলামের এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাবেন। সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষার্থীদেরও বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকবে কেন? তবে কোনো শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াই বাড়তি বিষয় যোগ করার সিদ্ধান্ত কতটা সুচিন্তিত সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ একে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেননা, এখনই মাদ্রাসাগুলোতে এ দুটি বিষয়ে সাড়ে চার হাজার শিক্ষকের কমতি রয়েছে। নতুন দুটি বিষয় যোগ করার ফলে ৬০০ দাখিল মাদ্রাসায় প্রায় ১৯ হাজার ২০০ শিক্ষক লাগবে। হিসাব অনুসারে এখন মাদ্রাসাগুলোতে ২৩ হাজার ৭০০ শিক্ষক দরকার। ২০১৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় অত্যন্ত কম। কারিকুলাম পরিবর্তনের সময় নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হয়নি, সেটি দুঃখজনক। কিন্তু কারিকুলাম বাস্তবায়িত হওয়ার আগে যদি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা না ভাবা হয় তবে সেটি হবে অগ্রহণযোগ্য। এটি সত্য যে, মাদ্রাসায় ২৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিলে ব্যয় বাড়বে। কিন্তু এ নিয়োগের ইতিবাচক ফল ফলবে। তেমনিভাবে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগও এতে অবারিত হবে। সব মাদ্রাসাতেই শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন হয়তো নেই। কিন্তু অনেক মাদ্রাসায় যে নতুন শিক্ষক লাগবে তাতে সন্দেহ নেই। খেয়াল রাখতে হবে, নতুন বিষয় যোগ যেন নামকাওয়াস্তে না হয়। শিক্ষার্থীরা যেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এ জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, কোর্স কারিকুলামকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। যুগোপযোগী কারিকুলাম তৈরি করে সে অনুসারে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে। ফলে নম্বর বাড়ানোটা প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হলেও পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হওয়া বাঞ্ছনীয়। দাখিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোতে এ কোর্স চালুর সঙ্গে অন্যান্য পর্যায়েও কোর্স কারিকুলামে পরিবর্তন আনা দরকার। দেশের বিপুলসংখ্যক কওমি মাদ্রাসাতেও যাতে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় সেজন্য সরকারের উদ্যোগ দরকার।

No comments

Powered by Blogger.