ঢাকার কড়া প্রতিবাদ-সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

শোরের বেনাপোলে ধান্যখোলা সীমান্তে গতকাল শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে রাশেদুজ্জামান নামের বাংলাদেশি একজন যুবক নিহত হয়েছেন। রাশেদুজ্জামান শার্শা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে রাশেদুজ্জামানসহ (২৫) কয়েকজন ব্যবসায়ী সীমান্তে গরু আনতে যান। গতকাল ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ফেরার পথে বিএসএফের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে রাশেদুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসার কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়।
রাশেদুজ্জামানের ফুফা নুর উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় রামপুর বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন রাশেদুজ্জামান। এরপর ফেরেননি। গতকাল সকাল নয়টার দিকে খবর আসে, রাশেদুজ্জামান বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পর হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে রাত সোয়া আটটার দিকে দাফন করা হয়েছে।
বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে নোম্যান্স-ল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের প্রায় ২০ গজ ভেতর থেকে রাশেদুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর কোমরের বাঁ দিকে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে বেনাপোলের শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য রাশেদুজ্জামানের লাশ যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএসএফের কর্মকর্তারা এর দায় স্বীকার করেননি। ময়নাতদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করা হবে।
এদিকে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিএসএফের গুলিতে রাশেদুজ্জামান নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগের পাশাপাশি অসন্তোষও প্রকাশ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ সংযত আচরণ করবে—ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের এ ধরনের আশ্বাসের পরও বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক এ হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে দোষি ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চারঘাট সীমান্তে যুবক গুলিবিদ্ধ: রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে গুলিবিদ্ধ আহত দুলালের (২৬) বাড়ি চারঘাট উপজেলার চক মুক্তারপুর গ্রামে। হাসপাতালে দুলাল প্রথম আলোকে জানান, তিনিসহ চারজন চারঘাটের ইউসুফপুর এলাকার দক্ষিণে পদ্মা নদীর চরে কাজ করতে গিয়ে ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। এ সময় ভারতীয় কয়েকজন চোরাকারবারি এসে তাঁদের নাম জানতে চায়। দুলাল তাঁর নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরার চেষ্টা করে। এ সময় তিনিসহ অন্যরা পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বালুতে তাঁর পা আটকে যায়। চোরাকারবারিরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি তাঁর ঊরুতে লাগে। আহত অবস্থায় তিনি নদীর ধারে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। অন্যরা পালিয়ে দেশে চেলে আসতে সক্ষম হন। তাঁদের কাছে খবর পেয়ে তাঁর একজন আত্মীয় তাঁকে উদ্ধার করে। দুলাল জানান, চোরাকারবারিদের দাবি, তিনি বিজিবিকে বলে তাদের (চোরাকারবারি) ফেনসিডিলের চালান ধরিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে দুলালের অস্ত্রোপচার করা হয়। চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি লোকমুখে শুনেছেন, ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ করায় একজন বাংলাদেশি যুবককে গুলি করা হয়েছে। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে।

No comments

Powered by Blogger.