জি-২০ নেতাদের কঠিন পরীক্ষা-বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট by পি. বৈদ্যনাথন আয়ার
সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ জ্যাক আটালি প্যারিসে একদল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার সময় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে ধ্বংসের চেষ্টা করতে চাইছে। ইউরোপের অনেক দেশে ঋণ বিপদ হিসেবে ঘনিয়ে আসার কারণে ইউরোজোন ভেঙে পড়তে যাচ্ছে কিনা_ এ সাংবাদিক তার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
এই বিস্ময়কর মন্তব্যকে হালকা করে দেওয়ার আমরা যখন চেষ্টা করছিলাম, তখন মাঝখানে আটালি বলে ওঠেন, তিনি নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব রটাতে চান না। তিনি এও বলতে চান না যে, ইউরোজোনের চেয়েও মার্কিন ঋণ সংকট বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অনেক বেশি খারাপ। তবে এটা ঠিক যে, ইংলিশ মিডিয়ার প্রবণতা ইউরোপের বিরুদ্ধে। যদিও প্যারিসের অনেকেই আটালির এই কট্টর সেন্টিমেন্ট পোষণ করেন না। তবে তার এই মন্তব্য ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য অংশেও মানুষের হৃদয়তন্ত্রীতে ঘা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানে যে, ট্রান্স-আটলান্টিক ব্লক একে অপরকে সংকট থেকে উত্তরণে প্রকৃতপক্ষে সাহায্য করছে না।
এ ধরনের একটা প্রেক্ষাপটে জি-২০-এর নেতারা কানে মিলিত হতে যাচ্ছেন। জি-২০ শীর্ষ বৈঠক থেকে তিনটি সুস্পষ্ট চাওয়ার বিষয় রয়েছে। প্রথমত, প্রয়োজন হবে সরকারগুলোর প্রবৃদ্ধি উদ্দীপ্ত করার মতো বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। প্রত্যেক নেতা সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করে কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। ইউরোপীয় নেতারা, বিশেষ করে বিদ্যমান ঋণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ফ্রন্টে তাদের যোগ করার মতো সামর্থ্য কমই রয়েছে। বারাক ওবামা স্বল্প মেয়াদে পারতপক্ষে প্রবৃদ্ধি উদ্দীপকের কথা বলতে পারেন। মধ্যমেয়াদে, মার্কিন ঋণ সামর্থতার ব্যাপারে কার্যকর একটা কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। চীন তার ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে রফতানি পরিচালিত উন্নয়ন মডেল অনুসরণের পরিবর্তে অধিকতর অভ্যন্তরীণ চাহিদা পরিচালিত প্রবৃদ্ধি মডেল অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করার কাজটি করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করাও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান শক্তি ভারসাম্য বিবেচনায় আমাদের এখন অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন রয়েছে।
তৃতীয়ত, ইতিপূর্বেকার শীর্ষ বৈঠকে ব্যাংক পুঁজি বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক অঙ্গীকারকে সাহসিতার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে হবে। সিউলে সর্বশেষ বৈঠকের পর থেকে বিশ্বের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে গেছে এবং গত কয়েক মাসে এটা চরম আকার নিয়েছে। এ সময় অচিন্তনীয় কিছু ব্যাপার ঘটে গেছে। মার্কিনর্ স্বোচ্চ ঋণ গ্রহণসীমা নিচে নেমে গেছে, এ সময়ে ইউরোজোনে ঋণ সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রতীকী প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশগুলো নিজ নিজ যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। যেমন ফ্রান্স জি-২০ শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করলেও এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের বাজেট দুই কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় সীমিত করেছে। বস্তুত ফরাসি সরকার বিদেশি নেতৃবৃন্দ এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রীর জন্য উপহারের ব্যবস্থা করতে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেছে। সমস্ত খাবার-দাবারই হবে ওয়াকিং লাঞ্চ বা ডিনার মানের। সেখানে কোনো গলদা চিংড়ি জাতীয় সামুদ্রিক মাছ বা সামুদ্রিক মাছের ডিম থাকবে না। টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ইতিপূর্বেকার জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের খরচের তুলনায় এবারের খরচ দশ ভাগের একভাগ হবে বলে দাবি করেছেন ফরাসি সরকারের কর্মকর্তারা।
শীর্ষ বৈঠকের বাজেট একেবারে কম হতে পারে। তবে সারকোজি তার আলোচনার অগ্রাধিকারের তালিকায় খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যে উড়নচণ্ডী অবস্থা, বৈশ্বিক সুশাসন ও উন্নয়নের সামাজিক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। এটার জন্য সমন্বিত ও পার্থক্যসূচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। প্রত্যেক দেশের সাড়াটা অদ্বিতীয় হওয়া চাই।
একদিক থেকে জি-২০-এর প্রকৃত পরীক্ষা এখনই হবে। গ্রুপের নেতারা যদি বিশ্ব অর্থনীতিকে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করতে পারেন, তাহলে জি-২০-এর প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে। কান সম্মেলন অর্থনৈতিক সংকটের প্রতি ফোকাসটা অব্যাহত রাখতে পারে এবং বাজারের প্রতি আস্থাটা সঞ্চার করতে পারে। এটা কোনো অংশেই ছোট কাজ নয়। এ জন্য, সরকারগুলোকে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে হবে। কারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম_এই প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জি-২০ নেতাদের। অন্যথায় আটালি যেমন বলেছেন, জি-২০ আসলে মার্কিন ও চীনের কূটচালকে ঢেকে রাখার একটা কৌশল, তাই সত্য বলে প্রতিপন্ন হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর :সুভাষ সাহা
এ ধরনের একটা প্রেক্ষাপটে জি-২০-এর নেতারা কানে মিলিত হতে যাচ্ছেন। জি-২০ শীর্ষ বৈঠক থেকে তিনটি সুস্পষ্ট চাওয়ার বিষয় রয়েছে। প্রথমত, প্রয়োজন হবে সরকারগুলোর প্রবৃদ্ধি উদ্দীপ্ত করার মতো বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। প্রত্যেক নেতা সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করে কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। ইউরোপীয় নেতারা, বিশেষ করে বিদ্যমান ঋণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ফ্রন্টে তাদের যোগ করার মতো সামর্থ্য কমই রয়েছে। বারাক ওবামা স্বল্প মেয়াদে পারতপক্ষে প্রবৃদ্ধি উদ্দীপকের কথা বলতে পারেন। মধ্যমেয়াদে, মার্কিন ঋণ সামর্থতার ব্যাপারে কার্যকর একটা কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। চীন তার ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে রফতানি পরিচালিত উন্নয়ন মডেল অনুসরণের পরিবর্তে অধিকতর অভ্যন্তরীণ চাহিদা পরিচালিত প্রবৃদ্ধি মডেল অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করার কাজটি করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করাও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান শক্তি ভারসাম্য বিবেচনায় আমাদের এখন অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন রয়েছে।
তৃতীয়ত, ইতিপূর্বেকার শীর্ষ বৈঠকে ব্যাংক পুঁজি বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক অঙ্গীকারকে সাহসিতার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে হবে। সিউলে সর্বশেষ বৈঠকের পর থেকে বিশ্বের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে গেছে এবং গত কয়েক মাসে এটা চরম আকার নিয়েছে। এ সময় অচিন্তনীয় কিছু ব্যাপার ঘটে গেছে। মার্কিনর্ স্বোচ্চ ঋণ গ্রহণসীমা নিচে নেমে গেছে, এ সময়ে ইউরোজোনে ঋণ সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রতীকী প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশগুলো নিজ নিজ যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। যেমন ফ্রান্স জি-২০ শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করলেও এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের বাজেট দুই কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় সীমিত করেছে। বস্তুত ফরাসি সরকার বিদেশি নেতৃবৃন্দ এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রীর জন্য উপহারের ব্যবস্থা করতে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেছে। সমস্ত খাবার-দাবারই হবে ওয়াকিং লাঞ্চ বা ডিনার মানের। সেখানে কোনো গলদা চিংড়ি জাতীয় সামুদ্রিক মাছ বা সামুদ্রিক মাছের ডিম থাকবে না। টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ইতিপূর্বেকার জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের খরচের তুলনায় এবারের খরচ দশ ভাগের একভাগ হবে বলে দাবি করেছেন ফরাসি সরকারের কর্মকর্তারা।
শীর্ষ বৈঠকের বাজেট একেবারে কম হতে পারে। তবে সারকোজি তার আলোচনার অগ্রাধিকারের তালিকায় খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যে উড়নচণ্ডী অবস্থা, বৈশ্বিক সুশাসন ও উন্নয়নের সামাজিক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। এটার জন্য সমন্বিত ও পার্থক্যসূচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। প্রত্যেক দেশের সাড়াটা অদ্বিতীয় হওয়া চাই।
একদিক থেকে জি-২০-এর প্রকৃত পরীক্ষা এখনই হবে। গ্রুপের নেতারা যদি বিশ্ব অর্থনীতিকে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করতে পারেন, তাহলে জি-২০-এর প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে। কান সম্মেলন অর্থনৈতিক সংকটের প্রতি ফোকাসটা অব্যাহত রাখতে পারে এবং বাজারের প্রতি আস্থাটা সঞ্চার করতে পারে। এটা কোনো অংশেই ছোট কাজ নয়। এ জন্য, সরকারগুলোকে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে হবে। কারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম_এই প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জি-২০ নেতাদের। অন্যথায় আটালি যেমন বলেছেন, জি-২০ আসলে মার্কিন ও চীনের কূটচালকে ঢেকে রাখার একটা কৌশল, তাই সত্য বলে প্রতিপন্ন হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর :সুভাষ সাহা
No comments