লংমার্চের প্রথম দিনে সিলেটে জনসভা-জান দেব তবু টিপাইমুখে বাঁধ নয় :এরশাদ by রাজীব আহাম্মদ ও মুকিত রহমানী

জীবন দিয়ে হলেও টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল শনিবার টিপাইমুখ অভিমুখে লংমার্চের প্রথম দিন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসভায় এ ঘোষণা দেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। এরশাদ দাবি করেন, নিজের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারে নয়, দেশের স্বার্থ রক্ষায়ই রাজপথে নেমেছেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করে তিনি


বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ভারত অনৈতিকভাবে বরাক নদীতে বাঁধ দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে 'প্রতিবাদের ঝড়' তুলতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
সকালে বনানীর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে এরশাদের নেতৃত্বে সিলেট অভিমুখে টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী লংমার্চের গাড়িবহর যাত্রা শুরু করে। দলটির দাবি, বহরে দেড় হাজার গাড়ি অংশ নিয়েছে। কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর, জেলা জাতীয় পার্টি ছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বহরে যোগ দেন। সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে বিকেল সোয়া ৪টায় সিলেটে পেঁৗছে বহরটি। এর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আলিয়া মাদ্রাসা ময়দান। লংমার্চের পুরো পথ এবং সিলেট শহরে নানা রঙের তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে এরশাদকে স্বাগত জানান স্থানীয় নেতারা।
এর আগে ঢাকায় পুলিশের বাধার কারণে পূর্বনির্ধারিত বিমানবন্দর সড়কের পরিবর্তে সাতরাস্তা মোড় দিয়ে গাড়িবহর এগিয়ে যায়। পথ পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অনুমতি থাকার পরও পুলিশ বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার করতে দেয়নি।
পথিমধ্যে কাঁচপুর, নরসিংদীর পাঁচদোনা, বেলাব, বৈসচা, কিশোররগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, বিশ্বরোড, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, আউশকান্দির কিবরিয়া চত্বরসহ ১২টি স্থানে পথসভায় বক্তৃতা করেন এরশাদ। আরও তিনটি অনির্ধারিত পথসভায় অংশ নেন তিনি। লংমার্চের গাড়িবহরের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বহরের নিরাপত্তায় রাস্তার দুই পাশে মোতায়েন ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। রাতে সিলেটে সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন এরশাদ। আজ রোববার সিলেটের জকিগঞ্জে টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে লংমার্চ। বিকেলে ঢাকায় ফিরবেন এরশাদ।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, পুণ্যভূমি সিলেটকে বাঁচাতেই এ লংমার্চ। সিলেটকে আমি প্রাণের চেয়েও ভালোবাসি। ভারত অবৈধভাবে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা সিলেটকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এরশাদ। তিনি বাঁধের বিরুদ্ধে সব দলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধে বিভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আন্দোলন করতে হবে। টিপাইমুখ বাঁধ জাতির জন্য অশনিসংকেত বলে মন্তব্য করেন এরশাদ। এরশাদ টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আলোচনায় ফল না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ারও হুমকি দেন তিনি। এরশাদ বলেন, ভারতকে নিশ্চিত করতে হবে যে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
এরশাদ বলেন, সরকার সম্প্রতি টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতের ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও সরকারের শরিক হয়েও এর বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, এ লংমার্চ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, কিংবা ক্ষমতার গদিতে বসার জন্য নয়। এ আন্দোলন দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও লংমার্চ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফর আহমেদ জনসভায় বলেন, সরকার সফল হলে লংমার্চ করতে হতো না। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টির লংমার্চ ক্ষমতায় যাওয়ার কর্মসূচি নয়। দেশ ও দেশের জনগণকে বাঁচানোর কর্মসূচি।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। বক্তৃতা করেন এটিএম ফজলে রাবি্ব, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, এমএ হান্নান এমপি, নবাব আলী আব্বাস খান এমপি, এমএ সাত্তার, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, গোলাম মশিহ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবুল, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, জাফর ইকবাল, সিলেট মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন, জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.