শীতে নাকের সমস্যা

শীতকাল এলেই দেখা যায় অনেকেই ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। কিছুতেই ভালো হতে চায় না। সর্দি-কাশির সঙ্গে থাকে হাঁচি। একবার হাঁচি শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লালচে হতে পারে। শীতের সময় ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় এ সমস্যাগুলো কিন্তু এতটা প্রকট আকারে দেখা যায় না। ওপরের সমস্যাগুলো সাধারণত অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত হলে দেখা যায়। এটি এক ধরনের অ্যালার্জি।


ধুলাবালি, ফুলের পরাগরেণু, হাউস মাইট, ঠাণ্ডা বাতাস ইত্যাদি থেকে এ সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোকে বলে অ্যালার্জেন। এ রোগে চিকিৎসার একমাত্র ভালো উপায় হলো রোগ প্রতিরোধ করা তথা যে কারণে রোগটি বেড়ে যায়, তা পরিহার করা। এ জন্য প্রথমেই শনাক্ত করুন কোন জিনিসের কারণে আপনার হাঁচি-কাশি বেড়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় নাক দিয়ে ধুলাবালি ঢুকলে বেশি হাঁচি হচ্ছে। কাজেই তাকে ধুলাবালি পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঘর ধুলাবালিমুক্ত রাখুন। বাসায় কার্পেট ব্যবহার করবেন না, শোয়ার ঘরে তো নয়ই। বিছানায় লোমযুক্ত চাদর, কাঁথা, লেপ, কম্বল ও বালিশ ব্যবহার করবেন না। বিছানা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, যেন ধুলাবালি না পড়ে। মাইট রাইনাইটিসের অন্যতম কারণ। এগুলো মেরে ফেলার জন্য সপ্তাহে একদিন চাদর, বালিশ ধুয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে শুকাতে হবে। এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করলে ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সকাল-বিকেল কুসুম গরম পানি বা নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন। এমনকি পানিতে লবণ গুলিয়ে তা দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন। এতে অ্যালার্জেন সহজেই শরীরের বাইরে চলে যাবে এবং নাকের অতিরিক্ত ক্ষরণ কমিয়ে আপনার সমস্যা দূর করবে। কুসুম গরম পানি পান করুন। ঠাণ্ডা লাগাবেন না। বাইরে বেরুলে শীতের কাপড় পরুন। যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, তা পরিহার করতে হবে। ফ্রিজের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ধূমপান করবেন না। কেউ ধূমপান করলে সে স্থান থেকে সরে আসুন। কেননা, এসব বদঅভ্যাস বাড়তি ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। রাইনাইটিসের চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন যেমন_ লোরাটিডিন, ডেসলোরাটিডিন, ফিক্সোফেনাডিন ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। বন্ধ নাক খোলার জন্য নেজাল ডিকনজেসটেন্ট যেমন_ জাইলোমেটাজোলিন নাকের ড্রপ দিতে হবে। সে সঙ্গে নাক দিয়ে গরম পানির ভাপ টানতে হবে। আধুনিক চিকিৎসার মধ্যে আছে লেজার টারবিনেকটমি অপারেশন। বেশি সমস্যা দেখা দিলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
অেধ্যাপক এম আব্দুল্লাহ
ইএনটি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

No comments

Powered by Blogger.