মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের আবেদন এ সপ্তাহেই

কাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে গ্রেপ্তারের জন্য চলতি সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানানো হতে পারে বলে জানা গেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত সংস্থার আবেদন প্রসিকিউশনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাবে তদন্ত সংস্থা।


ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ পেলেই তদন্ত সংস্থা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এর আগে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে ৪০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত সংস্থার কাছে।
জানা গেছে, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথি সংযুক্ত রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালের তথ্য ও চিত্রসংবলিত সিডি, ডিভিডি, গণহত্যাসংক্রান্ত ভিডিও, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আলবদর বাহিনীর অনাচারের প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও তখনকার এনবিসি, সিবিএস এবং দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার প্রতিবেদনও রয়েছে।
গোলাম আযমকে ১৬ ডিসেম্বরের আগে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, 'শিগগিরই দেখতে পারবেন।' আরেক প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, 'অতি শিগগিরই বিষয়টি জানতে পারবেন।'
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর। তিনি এখন কারাবন্দি। একই অপরাধে জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাও বিচারের মুখোমুখি। এ চারজনও কারাবন্দি। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। আজ রবিবার এই চারজনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করার দিন ধার্য রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরমাল চার্জ দাখিল করার জন্য কাজ করছে।
এ ছাড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জয়পুরহাটের বিএনপির নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমও একই অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। উভয়কে গ্রেপ্তার করা হলেও ট্রাইব্যুনাল আবদুল আলীমকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাবন্দি।
জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতা একই অপরাধে কারাবন্দি থাকলেও দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমকে এখনো গ্রেপ্তার করেনি তদন্ত সংস্থা। তারা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করার কথা গত ১ নভেম্বর বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানালেও তাঁকে গ্রেপ্তারের আবেদন করেনি। তদন্ত সংস্থা ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়।

No comments

Powered by Blogger.