ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আর প্রতারিত হতে দেব না-প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

কোনো অসাধু চক্রের অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোনো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী যাতে প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত না হন, সে জন্য সব রকমের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শেয়ারবাজারের মৌলিক আইন সংশোধনের মাধ্যমে এর দুর্বলতা কাটানো হচ্ছে। মনিটরিং ও সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা যুগোপযোগী, আধুনিক করার মাধ্যমে


অনৈতিক ও অবৈধ লেনদেন বন্ধ করারও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনো কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আমরা তা পুনর্নিরীক্ষা করব।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) আয়োজিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের প্রতি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কিত পরামর্শ দিতে এ কথা বলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। গতকালের এই কর্মশালায় ২৫ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বিআইসিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবদুল হান্নাজ জোয়ার্দার।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোন সময়ে কোন শেয়ার কিনছেন, তা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন এসইসির চেয়ারম্যান। প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'গত বছরের ডিসেম্বরে ডিএসইর সূচক যখন ৮৯১৮ পয়েন্টে ছিল, তখনও কিছু শেয়ারে বিনিয়োগ ছিল লাভজনক। আবার এখন সূচক যখন ৪৯০০ পয়েন্টে, তখনও কিছু শেয়ারে হাত দিলে হাত পোড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।' একটি সুষ্ঠু, স্থিতিশীল ও কার্যকর শেয়ারবাজার গঠনের জন্য কাজ করছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সব ধরনের আইন ও বাজারের মৌল অবকাঠামোগত সংস্কারের কাজ করছি।
বর্তমান বাজার স্বাভাবিক বাজার নয় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এখানকার তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, বাজার অবকাঠামো যে অবস্থায় রয়েছে সেখানে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে; কিন্তু হচ্ছে মাত্র দুই থেকে তিনশ' কোটি টাকা।' কাঙ্ক্ষিত লেনদেন না হওয়ার জন্য তিনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ না হওয়াকে দায়ী করেন। ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, অনেকে বলেন বাজারে তারল্য সংকট কোনো সংকট নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারল্য না থাকলে বাজার চলবে কীভাবে? প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা বাজারে তীব্র আস্থার সংকট সৃষ্টি করছে, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে বাজারের ঝুঁকি ভাগাভাগি হবে। যা আস্থার সংকট দূর করতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন তিনি।
এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ বাজারে আস্থা নির্ভর করে অন্তত ১৫টি বিষয়ের ওপর। এর অন্যতম হলো তারল্য প্রবাহ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়, সরকার ও নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, গুজব বিশ্লেষণ, তথ্যের পর্যাপ্ততা, তথ্যের উপযোগিতা যাচাই, অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান, অভিযোগ প্রদান, গবেষণাকর্ম প্রভৃতি।
এসইসির চেয়ারম্যান ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের কেউ যাতে প্রতারিত করতে না পারে, সেজন্য সব ব্যবস্থাই নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করায় বুকবিল্ডিং, প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কেউ আর কোনো শেয়ারদর অতিমূল্যায়িত করতে পারবে না। বাজারে অবৈধ ও অনৈতিক লেনদেন বন্ধের জন্য মনিটরিং ও সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার আপনাদের দায়িত্ব বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেতনতা প্রদর্শন করা। গুজব শুনেই শেয়ার কেনাবেচা না করা। কোনো গুজব শুনলে তা যাচাই করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করছি।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা ধ্বংস থেকে নতুন করে সৃষ্টি করতে চাই। শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নে পুঁজি সংগ্রহ করে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ দেশ গঠনে শেয়ারবাজারকে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.