হোয়াইটওয়াশের প্রাপ্তি! by সাবি্বর আহমেদ
গুজব, তবে প্রতিষ্ঠিত গুজব! তামিম ইকবালের এক সতীর্থ নাকি কোনো একসময় বলেছিলেন, 'ওর হাতের খেলা মুখে উঠে এসেছে।' 'ওর' মানে তামিমের!\ঠাট্টা করে বলা হোক, কিংবা স্নেহের বশে, সতর্ক করার ছলে হোক, গুজবটি এখন আর স্রেফ গুজবের বৃত্তে নেই। চলে এসেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের আতশি কাচের নিচে। পাকিস্তানের বিপক্ষে চলতি ওয়ানডে সিরিজের পর তামিমও এখন আলোচনার (পড়ূন সমালোচনা) কেন্দ্রে।
২০, ২৬, ০_ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এ তিনটি ইনিংস শেবাগের ব্যাট থেকে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষের তিনটি ওয়ানডেতে। আর ০, ৪, ০_ এ তিনটি ইনিংস পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিমের খেলা সর্বশেষ তিন ওয়ানডের কাহন। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতার নিক্তিতে দুজনকে মেপে নিলে এমনটা বলাই যায় মলিন শেবাগ=ম্রিয়মাণ তামিম!
কিন্তু বাস্তবতার পাল্লায় শেবাগ=তামিম সমীকরণ অর্থহীন। বাতুলের প্রলাপ। তাছাড়া গত ৮ ডিসেম্বর অন্যদের সঙ্গে নিজের ব্যবধান তো পরিষ্কার করেই দিলেন শেবাগ। ক্যারিবীয় বোলারদের ইন্দোরের বাইশ গজে তুলাধোনা করেছেন, নিজের আইকন শচীন টেন্ডুলকারকেও পরিসংখ্যানের একটা পাতায় পেরিয়ে গেছেন। ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি (২১৯ রান) এখন শেবাগের! দুঃসময়ের ধৈর্য ধরে স্বরূপে ফেরার বিদ্যাটা ভারতের হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যানের মুখস্থ। কিন্তু তামিম? ১০৯ ওয়ানডেতে মাত্র ৩টি সেঞ্চুরি ও ১৯টি হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া এ বাঁহাতি হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান ইদানীং একটু বেশিই ব্যস্ত ক্রিকেটের বাইরের ইস্যুতে। তাই ব্যাটের সঙ্গে তার খুব বেশি 'আলাপ' হচ্ছে না। এ ব্যস্ততায় কোচের সঙ্গে তামিমের বাদানুবাদে জড়ানো, অনুশীলনে গাফিলতির মতো 'ভীষণ সিরিয়াস' বিষয়ও আছে।
তবে মিসবাহ-আফ্রিদিদের বিপক্ষের ওয়ানডে সিরিজে টাইগারদের ব্যর্থতার দায় কেবল তামিমের একার নয়। ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, সাকিব আল হাসান, এমনকি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম_ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাদের নামেই কেবল ভিন্নতা, ব্যাটিং ব্যর্থতায় সবাই একই সমান্তরালে! সিরিজজুড়ে বোলারদের সাফল্যকে যারা আয়েশি ভঙ্গিতে, খেলাচ্ছলে মলিন করে দিয়ে এসেছেন!
সাকিব (৩ ম্যাচে ৫৮), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩ ম্যাচে ৫৬), নাফীস (৩ ম্যাচে ৩৯), ফরহাদ রেজা (২ ম্যাচে ২২), রুবেল হোসেন (২ ম্যাচে ১৫), অলোক কাপালি (১ ম্যাচে ১২), মুশফিক (৩ ম্যাচে ১২ রান)_ ব্যর্থতা, আত্মাহুতির এই মিছিলে টাইগার শিবিরে একজনই ব্যতিক্রম_ নাসির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে, আলাপচারিতায় যার কণ্ঠে গ্রামের সারল্য, শক্ত প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন, 'আমি ওসব জানি না' গোছের কথা!
তবে একটা বিষয় নাসিরের বেশ জানা। সেটা ব্যাটিং এবং ২০ বছর বয়সী এ তরুণের এই জানাটা ক্রিকেটের সরল সমীকরণ মেনেই জানা_ উপভোগ করো এবং খেলো। আফ্রিদি-আজমলদের বোলিং তোপের মুখে দাঁড়িয়ে তা তিনি প্রমাণও করেছেন। অভিজ্ঞ সতীর্থরা যে উইকেটে ব্যর্থ, সেই বাইশ গজেই তার ব্যাট ফুটিয়েছে ফুল। ৩ ম্যাচে মোট ১২৪ রান তুলেছেন নাসির। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ রান তোলা ব্যাটসম্যান। এমনকি সিরিজের একমাত্র সেঞ্চুরিটিও রাজশাহীর এ ডানহাতির উপহার। এক কথায় ধবলধোলাই হওয়া সীমিত ওভারের সিরিজে বাংলাদেশের ভরাডুবির মুষ্টিলাভ নাসির।
৫ উইকেট, ৭৬ রান, এরপর ৫৮ রানের তিনটি হারের মধ্যে একটু-আধটু প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে। স্পিন সহায়ক উইকেটে সাকিব, নাসির, ইলিয়াস সানি কিংবা আবদুর রাজ্জাকদের কেউই পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ (৩ ম্যাচে ৬ উইকেট), শহিদ আফ্রিদি (৫টি), শোয়েব মালিককে (৪টি) ছাপিয়ে যেতে পারেননি, এর পরও প্রতিটি ম্যাচে মিসবাহ-আফ্রিদিদের রানের চাকা অন্তত টেনে ধরতে পেরেছেন। মুশফিক-তামিমদের লড়াইয়ের উপলক্ষ করে দিতে পেরেছেন। সিরিজে দেশসেরা স্পিনার সাকিবের শিকার ৪ উইকেট। রাজ্জাক ৪টি। স্বাগতিক পেসারদের মধ্যে রুবেল হোসেন (২ ম্যাচে ৪ উইকেট) সফলতম। পাকিস্তানের সফল পেসার ওমর গুল, ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট। এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার আফ্রিদি। সিরিজের সেরা বোলিং ফিগারও এ ডানহাতি স্পিনারের, ৬.৩-০-২৩-৫। চট্টগ্রামের বিধ্বংসী বোলিং দিয়ে এ তালিকায় তৃতীয়জন বাংলাদেশের মাহমুদুল্লাহ, ১.১-০-৪-৩।
সিরিজে বাকিটুকু বাংলাদেশের জন্য 'লস'-এর খাতায়! ২৫ঃ১, হার-জিতের এ সমীকরণ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ শেষে স্বাগতিকদের ব্যর্থতার পাল্লা কেবল ভারীই হয়েছে। '৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনের সেই জয়টি একযুগ পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পাওয়া একমাত্র সাফল্যের গল্প। দু'দলের মুখোমুখি ২৯ ওয়ানডের হিসাবটা তাই এখন এ রকম_ বাংলাদেশ মাত্র ১টিতে জয়ী, বাকি ২৮টিতে পরাজিত পক্ষ!
লজ্জার শেষ নয় এখানেই। 'অপয়া' মিরপুরের উইকেটে দুটি ও 'পয়মন্ত' ভেন্যু চট্টগ্রামের ভরাডুবি মিলিয়ে এ নিয়ে পাকিস্তানের কাছে টানা ২২ ওয়ানডে হারল বাংলাদেশ। মানে ২০০১/০২ মৌসুমের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে ফের হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। তাহলে কোন পথে টাইগাররা? উন্নতি না অধোগতি? উত্তরটা দলপতি মুশফিকের কথা দিয়েই দেওয়া যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডে হার ও সিরিজ খোয়ানোর পর মুশফিক অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন এভাবে, 'আমরা এক পা এগোচ্ছি তো পাঁচ পা পিছিয়ে যাচ্ছি।'
পাকিস্তানের কাছে যাচ্ছেতাইভাবে হোয়াইটওয়াশ হওয়া সিরিজে, অনেক না পাওয়ার ভিড়ে মুশফিকের কথাটুকুই বোধহয় বাংলাদেশের বড় 'প্রাপ্তি'। অধিনায়কের পা মাটিতেই আছে, তিনি অন্তত উপলব্ধি করতে পারছেন নির্মম বাস্তবতাটা। ঘড়ির কাঁটায় চড়ে অনেক মাস-বছর পেরিয়ে গেলেও সেই তিমিরেই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। মুশফিকের সুরে সুর মিলিয়ে বললে 'আরও পশ্চাৎমুখী'! আশাটুকুও আবার এখানেই। তামিম-সাকিবদের মনে যদি মুশফিকের 'উপলব্ধি'র জন্ম হয় তাহলেই তো 'হাতের খেলা ব্যাটে ফিরে আসবে'। আর তা হলেই তো...!
তবে মিসবাহ-আফ্রিদিদের বিপক্ষের ওয়ানডে সিরিজে টাইগারদের ব্যর্থতার দায় কেবল তামিমের একার নয়। ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, সাকিব আল হাসান, এমনকি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম_ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাদের নামেই কেবল ভিন্নতা, ব্যাটিং ব্যর্থতায় সবাই একই সমান্তরালে! সিরিজজুড়ে বোলারদের সাফল্যকে যারা আয়েশি ভঙ্গিতে, খেলাচ্ছলে মলিন করে দিয়ে এসেছেন!
সাকিব (৩ ম্যাচে ৫৮), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩ ম্যাচে ৫৬), নাফীস (৩ ম্যাচে ৩৯), ফরহাদ রেজা (২ ম্যাচে ২২), রুবেল হোসেন (২ ম্যাচে ১৫), অলোক কাপালি (১ ম্যাচে ১২), মুশফিক (৩ ম্যাচে ১২ রান)_ ব্যর্থতা, আত্মাহুতির এই মিছিলে টাইগার শিবিরে একজনই ব্যতিক্রম_ নাসির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে, আলাপচারিতায় যার কণ্ঠে গ্রামের সারল্য, শক্ত প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন, 'আমি ওসব জানি না' গোছের কথা!
তবে একটা বিষয় নাসিরের বেশ জানা। সেটা ব্যাটিং এবং ২০ বছর বয়সী এ তরুণের এই জানাটা ক্রিকেটের সরল সমীকরণ মেনেই জানা_ উপভোগ করো এবং খেলো। আফ্রিদি-আজমলদের বোলিং তোপের মুখে দাঁড়িয়ে তা তিনি প্রমাণও করেছেন। অভিজ্ঞ সতীর্থরা যে উইকেটে ব্যর্থ, সেই বাইশ গজেই তার ব্যাট ফুটিয়েছে ফুল। ৩ ম্যাচে মোট ১২৪ রান তুলেছেন নাসির। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ রান তোলা ব্যাটসম্যান। এমনকি সিরিজের একমাত্র সেঞ্চুরিটিও রাজশাহীর এ ডানহাতির উপহার। এক কথায় ধবলধোলাই হওয়া সীমিত ওভারের সিরিজে বাংলাদেশের ভরাডুবির মুষ্টিলাভ নাসির।
৫ উইকেট, ৭৬ রান, এরপর ৫৮ রানের তিনটি হারের মধ্যে একটু-আধটু প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে। স্পিন সহায়ক উইকেটে সাকিব, নাসির, ইলিয়াস সানি কিংবা আবদুর রাজ্জাকদের কেউই পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ (৩ ম্যাচে ৬ উইকেট), শহিদ আফ্রিদি (৫টি), শোয়েব মালিককে (৪টি) ছাপিয়ে যেতে পারেননি, এর পরও প্রতিটি ম্যাচে মিসবাহ-আফ্রিদিদের রানের চাকা অন্তত টেনে ধরতে পেরেছেন। মুশফিক-তামিমদের লড়াইয়ের উপলক্ষ করে দিতে পেরেছেন। সিরিজে দেশসেরা স্পিনার সাকিবের শিকার ৪ উইকেট। রাজ্জাক ৪টি। স্বাগতিক পেসারদের মধ্যে রুবেল হোসেন (২ ম্যাচে ৪ উইকেট) সফলতম। পাকিস্তানের সফল পেসার ওমর গুল, ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট। এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার আফ্রিদি। সিরিজের সেরা বোলিং ফিগারও এ ডানহাতি স্পিনারের, ৬.৩-০-২৩-৫। চট্টগ্রামের বিধ্বংসী বোলিং দিয়ে এ তালিকায় তৃতীয়জন বাংলাদেশের মাহমুদুল্লাহ, ১.১-০-৪-৩।
সিরিজে বাকিটুকু বাংলাদেশের জন্য 'লস'-এর খাতায়! ২৫ঃ১, হার-জিতের এ সমীকরণ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ শেষে স্বাগতিকদের ব্যর্থতার পাল্লা কেবল ভারীই হয়েছে। '৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনের সেই জয়টি একযুগ পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পাওয়া একমাত্র সাফল্যের গল্প। দু'দলের মুখোমুখি ২৯ ওয়ানডের হিসাবটা তাই এখন এ রকম_ বাংলাদেশ মাত্র ১টিতে জয়ী, বাকি ২৮টিতে পরাজিত পক্ষ!
লজ্জার শেষ নয় এখানেই। 'অপয়া' মিরপুরের উইকেটে দুটি ও 'পয়মন্ত' ভেন্যু চট্টগ্রামের ভরাডুবি মিলিয়ে এ নিয়ে পাকিস্তানের কাছে টানা ২২ ওয়ানডে হারল বাংলাদেশ। মানে ২০০১/০২ মৌসুমের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে ফের হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। তাহলে কোন পথে টাইগাররা? উন্নতি না অধোগতি? উত্তরটা দলপতি মুশফিকের কথা দিয়েই দেওয়া যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডে হার ও সিরিজ খোয়ানোর পর মুশফিক অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন এভাবে, 'আমরা এক পা এগোচ্ছি তো পাঁচ পা পিছিয়ে যাচ্ছি।'
পাকিস্তানের কাছে যাচ্ছেতাইভাবে হোয়াইটওয়াশ হওয়া সিরিজে, অনেক না পাওয়ার ভিড়ে মুশফিকের কথাটুকুই বোধহয় বাংলাদেশের বড় 'প্রাপ্তি'। অধিনায়কের পা মাটিতেই আছে, তিনি অন্তত উপলব্ধি করতে পারছেন নির্মম বাস্তবতাটা। ঘড়ির কাঁটায় চড়ে অনেক মাস-বছর পেরিয়ে গেলেও সেই তিমিরেই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। মুশফিকের সুরে সুর মিলিয়ে বললে 'আরও পশ্চাৎমুখী'! আশাটুকুও আবার এখানেই। তামিম-সাকিবদের মনে যদি মুশফিকের 'উপলব্ধি'র জন্ম হয় তাহলেই তো 'হাতের খেলা ব্যাটে ফিরে আসবে'। আর তা হলেই তো...!
No comments