বড়দের ভ্যাকসিন
ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ করে। ছোটদের ভ্যাকসিন দিতে হয়_ এটা আমরা সবাই জানি। সরকারিভাবে প্রতিটি শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। বড়দেরও কিন্তু ভ্যাকসিন দিতে হয়। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি এটি রোগের জটিলতা কমায় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস : এ ভাইরাস মেয়েদের জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজারের বেশি মেয়ে মৃত্যুবরণ করে এ ক্যান্সারে। অথচ তিনটি ভ্যাকসিনই পারে এ থেকে রক্ষা করতে।
২৬ বছরের আগেই এ ভ্যাকসিন দেওয়া ভালো। তবে ৪৫ বছর পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। বেশি ভালো হয় বিয়ের আগে বা প্রথম যৌন মিলনের আগে নিলে। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার ২ মাস পর দ্বিতীয় ডোজ ও ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ দিতে হয়। গর্ভাবস্থায়, অসুস্থাবস্থায় ও এ ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি হলে এটি দেওয়া যাবে না।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস : এই ভাইরাস লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ। এ থেকে হতে পারে লিভার ক্যান্সার। শুধু টিকা দিয়েই এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ১৯৯২ সালে চীনে ১ কোটি ২০ লাখ লোক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসের কারণে চীনে ক্যান্সারের তালিকায় প্রথমে ছিল যকৃত ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) চীনে এ ভাইরাসের টিকা ব্যাপকভাবে চালু করে। এখন চীনে যকৃত ক্যান্সার কমে গেছে অনেকাংশে। যে কেউ এ ভ্যাকসিন নিতে পারেন। যাদের হেমোডায়ালাইসিস করতে হয়, যাদের বারবার রক্ত দিতে হয়, হাসপাতালে কর্মরত, অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারে অভ্যস্ত, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীরা এ টিকা নিতে পারে। প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের কমপক্ষে ৪ মাস ও দ্বিতীয় ডোজের কমপক্ষে ২ মাস পর তৃতীয় ডোজ নিতে হয়। ১ বছর পর বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে। যদি ভ্যাকসিন দেওয়ার পর রক্তে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি না হয় তাহলে আবার ভ্যাকসিন দিতে হবে।
এমএমআর : হাম, মাম্পস ও রুবেলা ভাইরাস প্রতিরোধে এ টিকা দেওয়া হয়। মায়ের রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণে গর্ভস্থ শিশুর গঠনগত সমস্যা হতে পারে। যে কোনো সময় এক ডোজ টিকা নেওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় রুবেলা টেস্ট পজিটিভ হলে ৪ সপ্তাহ পর আরও এক ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে যেমন_ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইডস ও দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে, গর্ভবতী মা ও ৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকলে, সম্প্রতি রক্ত পরিসঞ্চালন করলে এবং অসুস্থাবস্থায় এই টিকা নেওয়া যায় না।
নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন : বয়স্কদের নিউমোনিয়া জটিল আকার ধারণ করে, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্ত, কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, সার্জারির মাধ্যমে প্লীহা বা স্পিল্গন অপসরণ করা ব্যক্তিদের নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়ার তিন-পাঁচ বছর পরপর বুস্টার ডোজ নিতে হয়।
মেনিনজাইটিস : হাজিদের সরকারিভাবে নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিসের টিকা দেওয়া হয়। ছোটবেলায় এ টিকা দেওয়া না হলে ভ্রমণের সময়, যেসব দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব দেশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে, স্পিল্গন কেটে ফেলা হলে এ টিকা দিতে হয়। প্রতি বছর এক ডোজ টিকা দিতে হয়।
ফ্লু ভ্যাকসিন : প্রতি বছর শীত শুরুর আগে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এ টিকা নেওয়া যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পরিবর্তনশীল। তাই ভ্যাকসিন খুব ভালো কাজ করে না। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ছোট শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা এই টিকা নিতে পারেন।
জলবসন্ত বা চিকেনপক্স : একবার চিকেনপক্স হলে বাকি জীবনে আর হয় না। তাই এ ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কম। তবে বড়দের চিকেনপক্স জটিল ও মারাত্মক আকার ধারণ করে। যাদের চিকেনপক্স হয়নি তারা জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে ২ ডোজ ভ্যাকসিন নিতে পারেন। প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে, গর্ভবতী মা ও ৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকলে ও অসুস্থাবস্থায় এ টিকা না নেওয়া ভালো।
ডো. হুমায়ুন কবীর হিমু
No comments