একটি স্বপ্নের মৃত্যু by কাজী মোনালিসা ইতি
এ প্রজন্মের ফুটবলারদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নেই। খেলা নেই তো অনুশীলনও বন্ধ রেখে যে যার মতো ঘুরে বেড়ায়। তুমি একজন ফুটবলার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পতাকা থাকে তোমার হাতে। প্রতি মুহূর্তে এটি মাথায় রাখতে হবে_
লালের সঙ্গে সবুজের মিশেল_ উৎসবের ঢেউ উঠবে মিরপুর গ্যালারিতে। পাক বোলিং ছোবলে স্বপ্ন সৌধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল! টি২০র পর একদিনের ম্যাচেও অভিন্ন চিত্র।
ঢাকায় ভিন্ন ফরমেটের তিন ম্যাচে স্বাগতিক দর্শকদের সামনে উৎসবের উপলক্ষ কমই এসেছে। সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে ওঠা চট্টগ্রাম ভেন্যুতেও দুর্দশা পিছু ছাড়েনি। তিন ম্যাচ সিরিজে শতভাগ ব্যর্থতা। নাহ্, ক্রিকেট দিয়ে হচ্ছে না_ অবহেলিত ফুটবলে একটু চোখ বোলানো যাক। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে পাক বিড়ম্বনা ঝেড়ে ফেলতে পারেননি ফুটবলাররাও। তাই সুখবরও আসেনি জওয়াহের লাল নেহরু স্টেডিয়াম থেকে। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচ গোলশূন্য ড্র। নব্বই মিনিটের দ্বৈরথ শেষে ভালো-মন্দের মিশেল অনুভূতি। অতীত ইতিহাসে পথচলার শুরুটা বড্ড পানসে! ম্যাচের ঘটনাচক্রের বিবেচনায় কিন্তু একেবারে মন্দও ছিল না।
নেপালের বিপক্ষেও বারবার অতীতের স্মৃতি হাতরে বেড়িয়েছে বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলার অবস্থায় দেশটি_ সেটি কি বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সবাই? দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের (১৪৩ নাম্বার) এক সিঁড়ি নিচেই আছে নেপাল (১৪৪)। অতীতকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে র্যাঙ্কিংয়ের গাণিতিক হিসাবটাকেই বড় করে তুলেছে যারা। অবস্থান একধাপ নিচে_ আমরা তো বাংলাদেশকে হারাতেই পারি। সে বিশ্বাসটা মাঠে প্রতিষ্ঠিত হলো। ০-১ গোলে হার, তাতে 'বি' গ্রুপের শেষ ম্যাচের সমীকরণ_ 'করো নয়তো মরো।'
এখানেও ঘুরেফিরে অতীত আসছিল। ১৯৮৫ সালে এ দ্বীপ দেশটিকেই ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যা লাল-সবুজদের সবচেয়ে বড় জয়। সে দিন যে অনেক আগেই ফুরিয়েছে, গত আসরে চোখ বোলালেই তা পরিষ্কার হয়। বাংলাদেশ যেখানে সেমিফাইনালের গেরো খুলতে পারেনি, সেখানে মালদ্বীপ খেলেছে ফাইনালে। সে হিসেবে অতীত ছিল অনুপ্রেরণা, হুমকিও বটে! বাস্তবতার জমিনে উভয় দেশই অস্তিত্ব রক্ষায় নেমেছিল। কুড়ি মিনিটেই ২ গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ এক সময় প্রতিযোগিতার সমীকরণ হয়তো ভুলেই গিয়েছিল। তখন যে মান রাখাই দায়! ২৯ মিনিটে তরুণ শাহেদুল আলমের গোল লড়াইয়ে রসদ খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু ফেরার দরজাটা বন্ধ করে দেন আলী আশফাক। ৬৯ মিনিটে তার গোলে স্কোরলাইন ১-৩, শেষ পর্যন্ত এটিই চূড়ান্ত হয়ে দাঁড়ায়। 'করো নয়তো মরো'_ সমীকরণের প্রথমটি করা হয়নি, তাই মরতেই হলো ইলিয়েভস্কির দলকে। ১-৩ গোলের হার তো অকালমৃত্যু! এভাবে অতীত সুখস্মৃতিতে ক্রমে বার্ধক্য ভর করছে। ১৯৯৭ ও ২০০৮ সালের পর এ আসরের মাধ্যমে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজার হ্যাটট্রিক পূরণ করে এলো বাংলাদেশ।
খেলোয়াড়রা দেশে ফিরেছেন বুধবার বিকেলে। সন্ধ্যায় কিন্তু বাফুফে ভবনের বিভিন্ন কক্ষের আলো জ্বলেনি। ৩ ম্যাচে অর্জন এক পয়েন্ট, কেবল মালদ্বীপের জালেই একবার বল ফেলা সম্ভব হয়েছে। বিপরীতে নিজেদের জাল থেকে বল কুড়াতে হয়েছে চারবার। অমন রুগ্ণ প্রদর্শনীর পর খেলোয়াড়রা বিমানবন্দর থেকে যে যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। নিভৃত দেশে ফেরার খবর যারা পেয়েছেন, তাদের অনেকেই বাফুফে ভবনে ফোন করে খেলোয়াড়দের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। দিলি্ল যাওয়ার আগে যেখানে ছিলেন, ভাগ্যিস ফেরার পর সে বাফুফে ভবনের হোস্টেলে তোলা হয়নি খেলোয়াড়দের। তাহলে হয়তো হিম আবহাওয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা নিয়ে ঘাম ঝরাতে হতো ফুটবল কর্তাদের! এতেই পরিষ্কার, খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালেও এখনও কিছু মানুষ ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন। যারা সাফ ব্যর্থতার কারণও জানতে চাইবেন। কোচ এবং খেলোয়াড়দের ওপর বর্তাবে দায়, তা এড়ানোর সুযোগও নেই। তবে কর্মকর্তারা যদি দু'দিকে দায় ভাগ করে দেন, তা বোধকরি বড্ড অন্যায়ই হবে!
স্ট্রাইকার গোল করতে ভুলেই গেছে, ইলিয়েভস্কি অমন পাগলামো না করলেও পারতেন_ অভিযোগের আঙুল অনেককেই হয়তো নিশানা করবে। খোদ ফেডারেশন কর্মকর্তারাই কেন নিশানা হবেন না? এ প্রশ্নে অনেকেরই আপত্তি থাকতে পারে_ তা অমূলকও নয়। তবে ব্যর্থতার দায়ভারের কিছুটা অংশ তো তাদের নিতেই হবে। ২০০৮ সালের এপ্রিলের বিবদমান দুটি গ্রুপকে এক সুতায় গেঁথেছিল নির্বাচন নামক সুই। অনেকেই তাতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন_ একঝাঁক তারকার সমাবেশ ঘটেছে। এই বুঝি জাগল ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা ফুটবলটা।
অল্প দিনেই পরিষ্কার হয়েছে_ কর্মকর্তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনটা লোক দেখানো। যার আড়ালে ছিল ক্ষমতার মোহ! মহানগরী ফুটবল লীগ কমিটি দিয়ে ফের বিভেদের পথে চলা শুরু। ছোটখাটো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি বাদ দিলে মধ্যবর্তী সময়গুলোকে একেবারে মন্দ বলা যাবে না। একটু আগেভাগে নির্বাচন নামক ভূত মাথায় ভর করায় দৃশ্যপট বদলাতেও সময় লাগেনি। বাংলাদেশ ফুটবলের চালক সংস্থার (বাফুফে) শীর্ষ কর্তাদের বিরোধ ফের স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে অন্যান্য দেশ মহাপরিকল্পনা হাতে নিলেও বাংলাদেশ কিন্তু সে পথে হাঁটেনি। বরং মুখ্য হয়ে উঠেছিল এক নারী সংগঠনের মসনদ। দুই পক্ষ প্রাণপণ লড়েছে, দৌড়ঝাঁপ ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত।
যখন স্পষ্ট হয়েছে ইস্যুটি সহসাই মীমাংসা হওয়ার নয়, তখন ঘুম ভাঙে_ সাফ ফুটবল নিয়ে তো কিছু একটা করতে হয়। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে ইলিয়েভস্কির দলকে মালয়েশিয়া পাঠানো সে চিন্তার ফল। ঢাকায় একের পর এক প্রস্তুতি ম্যাচ, সঙ্গে ছিল কঠোর অনুশীলন। কোচ সময়স্বল্পতা ঢেকে ফেলতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এটিই না আবার স্বাভাবিক ফুটবলের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়_ বিষয়টি আদৌ মাথায় ছিল কি-না খানিক সংশয় আছে। তার মাঝেই একটি মাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে মালয়েশিয়া গমন_ এক প্রকার ধকলই বটে! সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার মোড়কে পিঠ বাঁচানোর কৌশল এটি! কর্মকর্তাদের কণ্ঠে দু'দিন পরই হয়তো শোভা পাবে_ এখনকার খেলোয়াড়দের ফুটবল ছেড়ে অন্যকিছু করা উচিত। সম্ভাব্য সবকিছুই করা হয়েছে। কই সাফল্য তো আসেনি? ভালো মানের ফুটবল খেলার শারীরিক সক্ষমতা নেই_ এটি আজন্ম দুর্ভাগ্যের। চাইলেই যা ঝেড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সাংগঠনিক সক্ষমতা তো চাইলে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে আমাদের ফুটবল কর্তারা কতটুকু সজাগ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। মাঠের সেনানীদের প্রচেষ্টা গড়পড়তা মানের_ তা অপ্রিয় বাস্তবতা। কেউ যদি একেই ব্যর্থতার একমাত্র কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, তা কতটুকুু যৌক্তিক হবে?
ইতিবাচক দিক হচ্ছে, অধিনায়ক মোহাম্মদ সুজন বাস্তবতা বুঝে এসেছেন দিলি্ল থেকে। প্রতিবেশী দেশগুলোর ফুটবল উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না বাংলাদেশ_ এ ডিফেন্ডারের কথার সারমর্ম ছিল এমনই। পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা বলেছেন তিনি। বাফুফে আন্তরিক হলে তা হয়তো অচিরেই দেখা যাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা তো খেলোয়াড়দের নিজস্ব বিষয়। তাতে কতটুকু সজাগ ফুটবলাররা? স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু প্রায়ই আক্ষেপ করেন_ 'এ প্রজন্মের ফুটবলারদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নেই। খেলা নেই তো অনুশীলনও বন্ধ রেখে যে যার মতো ঘুরে বেড়ায়। তুমি একজন ফুটবলার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পতাকা থাকে তোমার হাতে। প্রতি মুহূর্তে এটি মাথায় রাখতে হবে। তা করতে পারলে সাফল্যের পেছনে ছুটতে হবে না, সাফল্যই তোমাকে খুঁজে নেবে।' সে দিনটি যে কবে আসবে?
এখানেও ঘুরেফিরে অতীত আসছিল। ১৯৮৫ সালে এ দ্বীপ দেশটিকেই ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যা লাল-সবুজদের সবচেয়ে বড় জয়। সে দিন যে অনেক আগেই ফুরিয়েছে, গত আসরে চোখ বোলালেই তা পরিষ্কার হয়। বাংলাদেশ যেখানে সেমিফাইনালের গেরো খুলতে পারেনি, সেখানে মালদ্বীপ খেলেছে ফাইনালে। সে হিসেবে অতীত ছিল অনুপ্রেরণা, হুমকিও বটে! বাস্তবতার জমিনে উভয় দেশই অস্তিত্ব রক্ষায় নেমেছিল। কুড়ি মিনিটেই ২ গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ এক সময় প্রতিযোগিতার সমীকরণ হয়তো ভুলেই গিয়েছিল। তখন যে মান রাখাই দায়! ২৯ মিনিটে তরুণ শাহেদুল আলমের গোল লড়াইয়ে রসদ খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু ফেরার দরজাটা বন্ধ করে দেন আলী আশফাক। ৬৯ মিনিটে তার গোলে স্কোরলাইন ১-৩, শেষ পর্যন্ত এটিই চূড়ান্ত হয়ে দাঁড়ায়। 'করো নয়তো মরো'_ সমীকরণের প্রথমটি করা হয়নি, তাই মরতেই হলো ইলিয়েভস্কির দলকে। ১-৩ গোলের হার তো অকালমৃত্যু! এভাবে অতীত সুখস্মৃতিতে ক্রমে বার্ধক্য ভর করছে। ১৯৯৭ ও ২০০৮ সালের পর এ আসরের মাধ্যমে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজার হ্যাটট্রিক পূরণ করে এলো বাংলাদেশ।
খেলোয়াড়রা দেশে ফিরেছেন বুধবার বিকেলে। সন্ধ্যায় কিন্তু বাফুফে ভবনের বিভিন্ন কক্ষের আলো জ্বলেনি। ৩ ম্যাচে অর্জন এক পয়েন্ট, কেবল মালদ্বীপের জালেই একবার বল ফেলা সম্ভব হয়েছে। বিপরীতে নিজেদের জাল থেকে বল কুড়াতে হয়েছে চারবার। অমন রুগ্ণ প্রদর্শনীর পর খেলোয়াড়রা বিমানবন্দর থেকে যে যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। নিভৃত দেশে ফেরার খবর যারা পেয়েছেন, তাদের অনেকেই বাফুফে ভবনে ফোন করে খেলোয়াড়দের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। দিলি্ল যাওয়ার আগে যেখানে ছিলেন, ভাগ্যিস ফেরার পর সে বাফুফে ভবনের হোস্টেলে তোলা হয়নি খেলোয়াড়দের। তাহলে হয়তো হিম আবহাওয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা নিয়ে ঘাম ঝরাতে হতো ফুটবল কর্তাদের! এতেই পরিষ্কার, খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালেও এখনও কিছু মানুষ ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন। যারা সাফ ব্যর্থতার কারণও জানতে চাইবেন। কোচ এবং খেলোয়াড়দের ওপর বর্তাবে দায়, তা এড়ানোর সুযোগও নেই। তবে কর্মকর্তারা যদি দু'দিকে দায় ভাগ করে দেন, তা বোধকরি বড্ড অন্যায়ই হবে!
স্ট্রাইকার গোল করতে ভুলেই গেছে, ইলিয়েভস্কি অমন পাগলামো না করলেও পারতেন_ অভিযোগের আঙুল অনেককেই হয়তো নিশানা করবে। খোদ ফেডারেশন কর্মকর্তারাই কেন নিশানা হবেন না? এ প্রশ্নে অনেকেরই আপত্তি থাকতে পারে_ তা অমূলকও নয়। তবে ব্যর্থতার দায়ভারের কিছুটা অংশ তো তাদের নিতেই হবে। ২০০৮ সালের এপ্রিলের বিবদমান দুটি গ্রুপকে এক সুতায় গেঁথেছিল নির্বাচন নামক সুই। অনেকেই তাতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন_ একঝাঁক তারকার সমাবেশ ঘটেছে। এই বুঝি জাগল ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা ফুটবলটা।
অল্প দিনেই পরিষ্কার হয়েছে_ কর্মকর্তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনটা লোক দেখানো। যার আড়ালে ছিল ক্ষমতার মোহ! মহানগরী ফুটবল লীগ কমিটি দিয়ে ফের বিভেদের পথে চলা শুরু। ছোটখাটো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি বাদ দিলে মধ্যবর্তী সময়গুলোকে একেবারে মন্দ বলা যাবে না। একটু আগেভাগে নির্বাচন নামক ভূত মাথায় ভর করায় দৃশ্যপট বদলাতেও সময় লাগেনি। বাংলাদেশ ফুটবলের চালক সংস্থার (বাফুফে) শীর্ষ কর্তাদের বিরোধ ফের স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে অন্যান্য দেশ মহাপরিকল্পনা হাতে নিলেও বাংলাদেশ কিন্তু সে পথে হাঁটেনি। বরং মুখ্য হয়ে উঠেছিল এক নারী সংগঠনের মসনদ। দুই পক্ষ প্রাণপণ লড়েছে, দৌড়ঝাঁপ ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত।
যখন স্পষ্ট হয়েছে ইস্যুটি সহসাই মীমাংসা হওয়ার নয়, তখন ঘুম ভাঙে_ সাফ ফুটবল নিয়ে তো কিছু একটা করতে হয়। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে ইলিয়েভস্কির দলকে মালয়েশিয়া পাঠানো সে চিন্তার ফল। ঢাকায় একের পর এক প্রস্তুতি ম্যাচ, সঙ্গে ছিল কঠোর অনুশীলন। কোচ সময়স্বল্পতা ঢেকে ফেলতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এটিই না আবার স্বাভাবিক ফুটবলের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়_ বিষয়টি আদৌ মাথায় ছিল কি-না খানিক সংশয় আছে। তার মাঝেই একটি মাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে মালয়েশিয়া গমন_ এক প্রকার ধকলই বটে! সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার মোড়কে পিঠ বাঁচানোর কৌশল এটি! কর্মকর্তাদের কণ্ঠে দু'দিন পরই হয়তো শোভা পাবে_ এখনকার খেলোয়াড়দের ফুটবল ছেড়ে অন্যকিছু করা উচিত। সম্ভাব্য সবকিছুই করা হয়েছে। কই সাফল্য তো আসেনি? ভালো মানের ফুটবল খেলার শারীরিক সক্ষমতা নেই_ এটি আজন্ম দুর্ভাগ্যের। চাইলেই যা ঝেড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সাংগঠনিক সক্ষমতা তো চাইলে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে আমাদের ফুটবল কর্তারা কতটুকু সজাগ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। মাঠের সেনানীদের প্রচেষ্টা গড়পড়তা মানের_ তা অপ্রিয় বাস্তবতা। কেউ যদি একেই ব্যর্থতার একমাত্র কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, তা কতটুকুু যৌক্তিক হবে?
ইতিবাচক দিক হচ্ছে, অধিনায়ক মোহাম্মদ সুজন বাস্তবতা বুঝে এসেছেন দিলি্ল থেকে। প্রতিবেশী দেশগুলোর ফুটবল উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না বাংলাদেশ_ এ ডিফেন্ডারের কথার সারমর্ম ছিল এমনই। পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা বলেছেন তিনি। বাফুফে আন্তরিক হলে তা হয়তো অচিরেই দেখা যাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা তো খেলোয়াড়দের নিজস্ব বিষয়। তাতে কতটুকু সজাগ ফুটবলাররা? স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু প্রায়ই আক্ষেপ করেন_ 'এ প্রজন্মের ফুটবলারদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নেই। খেলা নেই তো অনুশীলনও বন্ধ রেখে যে যার মতো ঘুরে বেড়ায়। তুমি একজন ফুটবলার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পতাকা থাকে তোমার হাতে। প্রতি মুহূর্তে এটি মাথায় রাখতে হবে। তা করতে পারলে সাফল্যের পেছনে ছুটতে হবে না, সাফল্যই তোমাকে খুঁজে নেবে।' সে দিনটি যে কবে আসবে?
No comments