আর কত রান চাই পাকিস্তানের by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

ট্টলার সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়া দুপুরের মেল ট্রেনটির মতোই অনেকগুলো বগি সঙ্গে নিয়ে ছুটছে পাকিস্তানের ইনিংস। তাড়া নেই, লাইনচ্যুত হওয়ার ভয় নেই, ধীরে এবং সতর্ক গতিতেই নির্দিষ্ট স্টেশনে গিয়ে থামবে ট্রেনটি। সিগন্যাল গেট উঠে না যাওয়া পর্যন্ত এই ট্রেনের চলে যাওয়া চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বাংলাদেশিদের। অপেক্ষায় থাকতে হবে কখন মিসবাহ ড্রেসিংরুম থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ারের সংকেত দেবেন, আর কখন


গেট উঠে গিয়ে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামবেন। ৪ উইকেটে ৪১৫, ২৮০ রানের লিড নিয়ে দিনভর মুশফিকদের খাটিয়েও থামার কোনো লক্ষণ দেখাননি পাকিস্তানিরা। হয়তো ইউনিস খান আর ৪ রান করে সেঞ্চুরি করলেই তামিমদের ফিল্ডিংয়ে শ্রম দেওয়া শেষ হবে। হয়তো আজ প্রথম সেশনে ঝড়ো ব্যাটিং করে বাংলাদেশি ফিল্ডারদের আরও খানিকটা ক্লান্ত করে তবেই ছাড়বেন। হয়তো আজ বাংলাদেশি ফিল্ডারদের আরও কয়েকটি ক্যাচ মিস করার সুযোগ দিয়ে থামবে পাকিস্তান। সাদামাটা বোলিংয়ে ছেলেখেলা করে হয়তো রানের দেনা আরও ভারী করে দেবেন। আর যাই হোক, ব্যাটিং উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংস খেলার আর কোনো ইচ্ছা নেই অতিথিদের।
প্রথম ইনিংসে ১৩৫ রানে অল আউট করার পর পাকিস্তানিরাও বুঝে গেছেন, এই বাংলাদেশের দৌড় খুব একটা লম্বা হবে না। 'আমার মনে হয়, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ অনেক ব্যাপারেই উন্নতি করেছে। তবে টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতে তারা ভালো খেলেছে।' দিন শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে হয়তো ভদ্রতার খাতিরে কথাগুলো বলেছিলেন হাফিজ; কিন্তু আট বছর বাদে এ দলটির বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে হাফিজ সত্যিকারের অধ্যাপকের কাজই করেছেন। দলের অন্য সবাই তাকে কেন অধ্যাপক হিসেবে ডাকেন, সেটিও প্রমাণ দিয়েছেন। বাংলাদেশিরা প্রথম ইনিংসে সবাই মিলে যা করেছেন, এদিন হাফিজ একাই তার থেকে একটি রান কম করেছেন। সে সঙ্গে একটি রেকর্ডও গড়েছেন। গত দশ বছরে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটিতে এদিনের মতো ১৬৪ রান আসেনি। শেষবার ২০০১ সালে মুলতানে এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই সাঈদ আনোয়ার আর তৌফিক ওমর ১৬৮ রান করেছিলেন। এরপর আর এত রান কোনো টেস্টেই পায়নি পাকিস্তানিরা।
যদিও এ রেকর্ডের সুযোগ করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বোলার এবং ফিল্ডাররা। সকাল থেকে অফের দিকে ফিল্ডার রেখে মিডল আর লেগে বোলিং করে গেছেন শাহাদাত। রিয়াদ মেডেন পেলেও উইকেট নেওয়ার মতো ডেলিভারি খুব কমই দিয়েছিলেন। সাকিবও এসেছিলেন অনেক পরে। আর বিশেষজ্ঞ বোলার ইলিয়াস সানির হাত থেকে আর্মার বেরিয়েছিল অনেক দেরিতে। এর সঙ্গে স্লিপে প্যাড পরে দাঁড়ানো ফিল্ডার শাহরিয়ার নাফীসের ৫ রানে থাকা মিসবাহর ক্যাচ মিসের ঘটনা ছিল। যে মিসবাহ পরে ২০ রানে সানির বলে এলবিডবিল্গউ হয়েছিলেন; কিন্তু ১৫ রানে থাকার সময় সাকিবের বলে স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে সানির হাত থেকে সেই যে জীবন পেয়েছিলেন ইউনিস। গতকাল হোটেলে ফিরেছেন ৯৬ রানে অপরাজিত থাকার মিষ্টি হাসি নিয়ে।
এ দুটি ক্যাচ ধরতে পারলে হয়তো সারাদিনে ঘামের একটা মর্যাদা পেতেন বোলাররা; কিন্তু তাতে প্রথম ইনিংসে ১৩৫ রানে অল আউট হওয়ার আফসোস থেকে রেহাই পেতেন না। এমন ফ্ল্যাট উইকেটে বোলিং করতে এসেই বাংলাদেশিরা বুঝেছেন, রান করাটা কতটা সহজ ছিল। 'আমরা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য আর ব্যাটিং দেখেও শিখতে পারি অনেক কিছু। জানি না, কখন ওরা ইনিংস ডিক্লেয়ার করবে। তবে আমাদের এখন লক্ষ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করা।' দিন শেষে অসহায়ের ভঙ্গিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিজেও স্বীকার করেছেন, 'আশা করা ছাড়া আর কিই-বা করার আছে আমাদের।'

No comments

Powered by Blogger.