সন্তানের পরীক্ষা-ভীতি
এখন চলছে পরীক্ষার মৌসুম। কোথাও শুরু হয়ে গেছে। কোথাও বা শুরু হাওয়ার অপেক্ষায়। এর কিছুদিন পরেই হবে নতুন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। সব মিলিয়ে পরীক্ষার আবহ। চারদিকে বিরাট আয়োজন, মা-বাবার মনে দুশ্চিন্তার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। কিন্তু বাবা-মার এই দুশ্চিন্তা সন্তানকে যেন স্পর্শ না করে। কারণ পরীক্ষা এলে কিন্তু এমনিতেই শিশুর বুকটা ধুক ধুক করে ওঠে, জিহ্বা শুকিয়ে যায়। এ সময় তাই সোনামণিকে ধীরস্থির থাকতে হবে। কিন্তু ছোট শিশু
পারবে কি এই অস্থিরতা কাটাতে? এ জন্য মা-বাবাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুর কোমল মনের অনুভূতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, শিশুকে খুব বেশি জবরদস্তি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এল.ই. ফাতমি বলেন, শিশুরা তো পড়াশোনা সারা বছরই করে থাকে। সুতরাং এ ক'টা দিন অতিরিক্ত চাপ দিলে বাড়তি কোনো ফল আসবে না, উল্টো ক্ষতি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো পড়া না পারলে শিশুকে দোষ দেওয়া যাবে না। অন্য মানুষের সামনে কখনও বলা যাবে না_ শিশু কিছুই মনে রাখতে পারে না। অনেকে আবার শিশু সব পড়া পারলেও নজর লাগবে_ এই ভয়ে বলেন, কিছুই পারে না। এতে কিন্তু তার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। জানা প্রশ্নও ভুলে যায়। তাই এটি করা উচিত নয়।
পরীক্ষার সময় শিশুরা খাওয়া-দাওয়া একদম করতে চায় না। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া না করলে তো শিশু দুর্বল হয়ে পড়বে। আর মগজের দরকার যে ফুয়েল বা জ্বালানি তা আসে মূলত গ্গ্নুকোজ থেকে। আর গ্গ্নুকোজ থাকে শর্করায়। এ সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সঙ্গে শর্করা জাতীয় খাবার ভাত, রুটি, চিনির শরবত খাওয়াতে হবে। বাজার থেকে গ্গ্নুকোজ কিনে আনার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক খাবারে যে শর্করা থাকে তা থেকেই শিশু সহজে গ্গ্নুকোজ পায়। আকর্ষণীয় খাবার যেমন জর্দা, পায়েস এসব দিতে পারেন। এগুলোতেও আছে গল্গুকোজ। পরীক্ষার আগে রুচিহীনতার কারণে সোনামণিরা শক্ত খাবার খেতে চায় না। তাই তরল ও নরম খাবার দেওয়াই ভালো। ফলের জুস, দুধে ভেজানো রুটি, নরম খিচুড়ি ভালো কাজ দেবে।
পরীক্ষার এই সময়ে কিন্তু আইসক্রিম বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি একদম দেওয়া যাবে না। এতে ঠাণ্ডা লেগে, জ্বর হয়ে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে যাবে। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়া অনেকেরই অভ্যাস। এদিকে মা-বাবাকে নজর দিতে হবে। রাত জাগলে কিন্তু পড়া মনে থাকে না, সারাদিন যা পড়া হয় তা ব্রেইনের স্তরে জমা হতে সুস্থির সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই ব্রেইনকে বিশ্রামের সময় বেশি না দিলে কোনো পড়াই স্মরণ থাকবে না। খুব দ্রুত পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরীক্ষার সময় অস্থিরতা একদম বারণ। অস্থিরতায় মগজ থেকে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়, সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। বুক ধড়ফড়, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, পিপাসা লাগা, অতিরিক্ত ঘাম, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া_ এসব সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। অস্থিরতায় পড়াশোনা গুলিয়ে যায়, জানা উত্তরও ভুল হয়। তাই যতটা সম্ভব সুস্থির থাকতে হবে।
পরীক্ষার সময় সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠাণ্ডা, জ্বর, ভাইরাস, টনসিলাইটিস_ এসব শিশুর সাধারণ শীতের অসুখ। এসব যেন শিশুকে সহজে কাবু করতে না পারে সে জন্য সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে অসুখের কারণে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে না যায়। মোট কথা, শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেন আপনার সন্তান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।
ডো. আবু সাঈদ শিমুল
No comments