প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী

দ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা যেভাবে পারি, পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এ সেতু দরকার। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই অন্য সংস্থা বা পিপিপির আওতায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। তুরস্ক, কাতার, চীন, কোরিয়া এ ধরনের অনেক দেশ আছে যারা এভাবে কাজ করে। আমরা তাদের আহ্বান জানিয়েছি।


তারা আসবে, সেতু নির্মাণ করবে, তাদের টাকা উঠিয়ে নিয়ে যাবে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাদের দিয়ে কাজ করাব না। পাবলিক পার্টনারশিপ সেল গঠন করেছি, একজন সিইও (চিফ এঙ্িিকউটিভ অফিসার) নিয়োগ করেছি।'
গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেখানে টাকাই ছাড় করা হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কিভাবে। দুর্নীতি হয়েছে এমন কোনো তথ্য তারা দিতে পারেনি। যেখানে টকাই ছাড় দেওয়া হয়নি, সেখানে দুর্নীতি কোথায়। বিশ্বব্যাংককে প্রমাণ করতে হবে পদ্মা সেতু নির্মাণে কী দুর্নীতি হয়েছে, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে, কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে, কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে। এখন আগের যোগাযোগমন্ত্রী সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে তদন্ত আরো সহজ হবে।'
মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া সফর-উত্তর এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ ছাড়াও টিপাইমুখ বাঁধ, ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মন্ত্রিসভার রদবদল, সাংগঠনিক সফর, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর লিখিত বক্তব্যে মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া সফরে তাঁর কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
নতুন মন্ত্রী নিয়োগ এবং পুরনো দুই মন্ত্রীর দপ্তর অদল-বদল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রী বদলানো রুটিন কাজ। দুর্নীতির কারণে মন্ত্রী বদলানো হয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন নতুন মন্ত্রী এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তদন্তের সুবিধা হবে। বিশ্বব্যাংককে প্রমাণ করতে হবে কোন জায়গায় কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ কাজের না হলে বাজেট ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ৬.৭ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত সব মন্ত্রীর কাজ নিয়ে খুশি। কারো বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ নেই। এই অবস্থায় মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার চিন্তা তিনি করছেন না।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ নিয়ে বিরোধী দলের নানা অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ঢাকাকে নয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করেছে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দিলি্ল সিটি করপোরেশনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সবাই এটাকে মেনে নিয়েছে। বিভক্ত ডিসিসিতে কে জেতে না জেতে তাতে তাঁর সরকারের কিছু আসে যায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ শান্তিতে ভোট দিতে পারলে তিনি খুশি। ঢাকা সিটি ভাগ হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মজা করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ বলেন, 'ঢাকা ভাগ হয়ে ফাটল দেখা গেছে নাকি? আসার সময় দেয়াল-টেয়াল দেখেছেন নাকি? যাওয়ার সময় দেখে যাবেন।'
টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় সে ধরনের কাজ ভারত সরকার করবে না। তারা পানি বন্ধ করার বাঁধ নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সেখানে প্রজেক্ট করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের ক্ষতি হয় কি না, সে নজরদারি করছি। যখন যেটা প্রয়োজন করে যাচ্ছি। এখন একজন লংমার্চ করছেন আরেকজন বিপ্লব করে ফেলছেন। তাঁদের কাছে প্রশ্ন_ তাঁরা তো ক্ষমতায় ছিলেন, কেন কিছু করতে পারেননি?' বিরোধীদলীয় নেতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'শুনছি গোপন চিঠি চালাচালি হচ্ছে। চিঠির উত্তর কী এসেছে জানি না।' টিপাইমুখ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যৌথ জরিপে সরকারের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখানো জরিপ শুরু করেনি। শুরু করলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, নতুন বছরে তিনি দেশের সব জেলা সফর করবেন তৃণমূলে সাংগঠনিক গতিশীলতা আনতে, দলকে সুসংগঠিত করতে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর প্রসঙ্গে বলেন, রেজিস্টার্ড ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে তাঁর অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদেরও ফেরত পাঠানো হবে। যুদ্ধাপরাধীরা জাতির জীবনে অভিশাপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা দেশের মাটিতে বসে মোনাফেকি-গাদ্দারি করেছে, তাদের বিচার হতেই হবে।'
জাতীয় সংসদে মহিলা সংসদ সদস্য সম্পর্কে সংসদ সদস্য অলি আহমদের অশালীন মন্তব্যের কারণে তাঁকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ঘরে মা-বোন, স্ত্রী-কন্যা আছে এমনটি ভাবলে কেউ মহিলাদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করতে পারেন না।' অলি আহমদকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে সংসদের স্পিকার ও সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

No comments

Powered by Blogger.