মহাসড়কে মৃত্যুফাদ by সারোয়ার সুমন
মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে মহাসড়ক। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রতিদিন সারাদেশে প্রাণ হারাচ্ছে গড়ে ২১ জন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে মারা যাচ্ছে ৪ জন। 'নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪১ দিনে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা ৯১৯। ২০০০ থেকে ২০১১ সালের হিসাব বিবেচনায়
আনলে দুর্ঘটনায় শুধু চট্টগ্রামে প্রাণ হারিয়েছে ১৫ হাজার ৮০৭ জন! সারাদেশে এ সংখ্যা ৮৬ হাজার ২৭০।
দুর্ঘটনায় এত প্রাণহানির নেপথ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পাঁচটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ চালকের অসতর্কতা। এ ছাড়া বিপজ্জনকভাবে সড়ক ডিভাইডার ও গতিরোধক তৈরি, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, চালকের অদক্ষতা ও বিভিন্ন মহাসড়ক ঘেঁষে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যুগোপযোগী করতে হবে দুর্ঘটনা-পরবর্তী তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার মান।
মহাসড়কের নির্মাণ কাঠামো নিয়ে গবেষণা করা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত সমকালকে বলেন, 'মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ফিটনেস নিয়মিত চেক করা হয় না। আবার চালকদের দক্ষতারও নিয়মিত কোনো পরীক্ষা হয় না। এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাও যুগোপযোগী নয়। এসব কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় খালি হচ্ছে কোনো না কোনো মায়ের কোল।'
দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাসিব মোঃ আহসান সমকালকে বলেন, 'সবার মধ্যে সচেতনতা না বাড়লে দুর্ঘটনা কমবে না। গাড়িচালকদের সতর্কতা বাড়াতে হবে। আবার সচেতনতা বাড়াতে হবে যাত্রী এবং পথচারীদেরও। সর্বোপরি নিশ্চিত করতে হবে আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি।'
চুয়েটের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ২৯টি পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ফেনী ও কুমিল্লার এসব পয়েন্টেই চলতি বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কে।
এদিকে দুর্ঘটনায় আহত লোকজন জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে ২০০৩ সালে ফেনীতে ৩০ শয্যার একটি ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশঙ্কাজনক হারে দুর্ঘটনা বাড়লেও বাড়েনি এ হাসপাতালের সেবার মান। বরং যেসব সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এর ছিটেফোঁটাও নেই এখানে। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এ হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত ডাক্তার। আবার দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামাদি না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানও প্যারালাইজড হয়ে আছে।
প্রতিদিন চট্টগ্রামে মরা যাচ্ছে ৪ জন
সারাদেশে ২১ জন
'নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠনের কেন্দ্রীয় নিরীক্ষা কমিটির সম্পাদক শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, 'গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে আমরা দেখেছি, দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গড়ে ২১ জন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে মারা যাচ্ছে গড়ে ৪ জন।' গত ১০ বছরের তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, ২০০০ থেকে ২০১০ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৯২২ জন, ৮ হাজার ১৯৩ জন, ছয় হাজার ৩১২ জন, ৭ হাজার ৯০৩ জন, ৮ হাজার ১১৯ জন, ৭ হাজার ২৫৫ জন, ৭ হাজার ১৮৯ জন, ৯ হাজার ৩১০ জন, ৭ হাজার ১ জন, ৬ হাজার ৩১২ জন ও ৫ হাজার ৮০১ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫০১ জন, ১ হাজার ৪০৯ জন, ৬২২ জন, ১ হাজার ৩৬০ জন, ১ হাজার ২৯৩ জন, ১ হাজার ৮১৩ জন, ২ হাজার ২৩ জন, ১ হাজার ৯২ জন, ১ হাজার ১৯৮ জন, ৭৯৩ জন ও ১ হাজার ৭৮৪ জন। চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মারা গেছে ৪ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে প্রাণহানির সংখ্যা ৯১৯।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৯টি পয়েন্টেই দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১০টি, সীতাকুণ্ডে ৫টি, কুমিল্লায় ১০টি এবং ফেনীর ৪টি পয়েন্ট রয়েছে। চলতি বছরই এসব পয়েন্টে শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনাপ্রবণ ২৯ পয়েন্ট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট, নিজামপুর কলেজ, হাদিফকির হাট, বড়তাকিয়া, মিরসরাই সদর, মিঠাছড়া, জোরারগঞ্জ, বারৈয়ারহাট পৌর সদর, ইসমাইল কার্পেট মিল এলাকা, ছোট কমলদহ বাইপাস মোড় ও মিরসরাই সদরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাইপাস সড়ক, মছইদ্দা স্কুলের সামনের মোড়, ফৌজদারহাট পোর্ট কানেকটিং সড়কের সংযোগস্থল, এসকেএন জুট মিল এলাকা, ফকিরহাট ফায়ার সার্ভিস মোড় দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার রায়পুর, চৌদ্দগ্রামের বাতিসা-বৈদ্যের বাজার এলাকা, দক্ষিণ উপজেলার ধনাইতরী, দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজা মোড়, হাসানপুর, বিতপুর, ইলিয়টগঞ্জের আমিরাবাদ রাস্তার মাথা, চৌদ্দগ্রামের চিওড়া এলাকা ও বুড়িচংয়ের নিমসার এলাকা। ফেনী জেলার দুঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে মুহুরীগঞ্জ, লেমুয়া ব্রিজ, মহিপাল ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকা।
দুর্ঘটনার নানা ধরন
বিশেষজ্ঞরা মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখেন, গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই এ দু'ধরনের ঘটনার শিকার। ডিভাইডার না থাকা এবং ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি না থাকায় এমন দুর্ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
আলোচিত দুর্ঘটনা
গত ১১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর এলাকায় ট্রাক উল্টে মারা গেছে ৪৪ জন স্কুলছাত্র। গত ২৮ জুলাই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে প্রাণ গেছে ২৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শাহজাহানপুর এলাকায় একটি নৈশকোচ ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেছে ১৮ জন। এ ছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাইপাস সড়কে ৪ জন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাড়িয়াকান্দি এলাকায় ৩ জন নিহত হয়। চলতি বছরের ২০০৭ সালের ১২ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়পুর এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় ৮ জন। একই বছরের ১২ মার্চ ফৌজদারহাট ওভারব্রিজ এলাকায় বাস উল্টে নিহত হয় দুই শিশুসহ সাতজন। ২০০৮ সালের ১৩ আগস্ট কুমিরার সুলতানা মন্দিরে বাস উল্টে নিহত হয় মছজিদ্দা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের চার স্কুল ছাত্রসহ সাতজন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ একটি বাস দুর্ঘটনায় মারা যায় ট্রেড স্ক্যান অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টের ১৬ শ্রমিক। দেশের সব মহাসড়কেই আছে মৃত্যুর এ মিছি
দুর্ঘটনায় এত প্রাণহানির নেপথ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পাঁচটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ চালকের অসতর্কতা। এ ছাড়া বিপজ্জনকভাবে সড়ক ডিভাইডার ও গতিরোধক তৈরি, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, চালকের অদক্ষতা ও বিভিন্ন মহাসড়ক ঘেঁষে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যুগোপযোগী করতে হবে দুর্ঘটনা-পরবর্তী তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার মান।
মহাসড়কের নির্মাণ কাঠামো নিয়ে গবেষণা করা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত সমকালকে বলেন, 'মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ফিটনেস নিয়মিত চেক করা হয় না। আবার চালকদের দক্ষতারও নিয়মিত কোনো পরীক্ষা হয় না। এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাও যুগোপযোগী নয়। এসব কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় খালি হচ্ছে কোনো না কোনো মায়ের কোল।'
দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাসিব মোঃ আহসান সমকালকে বলেন, 'সবার মধ্যে সচেতনতা না বাড়লে দুর্ঘটনা কমবে না। গাড়িচালকদের সতর্কতা বাড়াতে হবে। আবার সচেতনতা বাড়াতে হবে যাত্রী এবং পথচারীদেরও। সর্বোপরি নিশ্চিত করতে হবে আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি।'
চুয়েটের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ২৯টি পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ফেনী ও কুমিল্লার এসব পয়েন্টেই চলতি বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কে।
এদিকে দুর্ঘটনায় আহত লোকজন জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে ২০০৩ সালে ফেনীতে ৩০ শয্যার একটি ট্রমা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশঙ্কাজনক হারে দুর্ঘটনা বাড়লেও বাড়েনি এ হাসপাতালের সেবার মান। বরং যেসব সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এর ছিটেফোঁটাও নেই এখানে। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এ হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত ডাক্তার। আবার দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামাদি না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানও প্যারালাইজড হয়ে আছে।
প্রতিদিন চট্টগ্রামে মরা যাচ্ছে ৪ জন
সারাদেশে ২১ জন
'নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠনের কেন্দ্রীয় নিরীক্ষা কমিটির সম্পাদক শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, 'গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে আমরা দেখেছি, দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গড়ে ২১ জন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে মারা যাচ্ছে গড়ে ৪ জন।' গত ১০ বছরের তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, ২০০০ থেকে ২০১০ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৯২২ জন, ৮ হাজার ১৯৩ জন, ছয় হাজার ৩১২ জন, ৭ হাজার ৯০৩ জন, ৮ হাজার ১১৯ জন, ৭ হাজার ২৫৫ জন, ৭ হাজার ১৮৯ জন, ৯ হাজার ৩১০ জন, ৭ হাজার ১ জন, ৬ হাজার ৩১২ জন ও ৫ হাজার ৮০১ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫০১ জন, ১ হাজার ৪০৯ জন, ৬২২ জন, ১ হাজার ৩৬০ জন, ১ হাজার ২৯৩ জন, ১ হাজার ৮১৩ জন, ২ হাজার ২৩ জন, ১ হাজার ৯২ জন, ১ হাজার ১৯৮ জন, ৭৯৩ জন ও ১ হাজার ৭৮৪ জন। চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মারা গেছে ৪ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে প্রাণহানির সংখ্যা ৯১৯।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৯টি পয়েন্টেই দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১০টি, সীতাকুণ্ডে ৫টি, কুমিল্লায় ১০টি এবং ফেনীর ৪টি পয়েন্ট রয়েছে। চলতি বছরই এসব পয়েন্টে শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনাপ্রবণ ২৯ পয়েন্ট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট, নিজামপুর কলেজ, হাদিফকির হাট, বড়তাকিয়া, মিরসরাই সদর, মিঠাছড়া, জোরারগঞ্জ, বারৈয়ারহাট পৌর সদর, ইসমাইল কার্পেট মিল এলাকা, ছোট কমলদহ বাইপাস মোড় ও মিরসরাই সদরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাইপাস সড়ক, মছইদ্দা স্কুলের সামনের মোড়, ফৌজদারহাট পোর্ট কানেকটিং সড়কের সংযোগস্থল, এসকেএন জুট মিল এলাকা, ফকিরহাট ফায়ার সার্ভিস মোড় দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার রায়পুর, চৌদ্দগ্রামের বাতিসা-বৈদ্যের বাজার এলাকা, দক্ষিণ উপজেলার ধনাইতরী, দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজা মোড়, হাসানপুর, বিতপুর, ইলিয়টগঞ্জের আমিরাবাদ রাস্তার মাথা, চৌদ্দগ্রামের চিওড়া এলাকা ও বুড়িচংয়ের নিমসার এলাকা। ফেনী জেলার দুঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে মুহুরীগঞ্জ, লেমুয়া ব্রিজ, মহিপাল ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকা।
দুর্ঘটনার নানা ধরন
বিশেষজ্ঞরা মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখেন, গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই এ দু'ধরনের ঘটনার শিকার। ডিভাইডার না থাকা এবং ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি না থাকায় এমন দুর্ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
আলোচিত দুর্ঘটনা
গত ১১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর এলাকায় ট্রাক উল্টে মারা গেছে ৪৪ জন স্কুলছাত্র। গত ২৮ জুলাই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে প্রাণ গেছে ২৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শাহজাহানপুর এলাকায় একটি নৈশকোচ ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেছে ১৮ জন। এ ছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাইপাস সড়কে ৪ জন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাড়িয়াকান্দি এলাকায় ৩ জন নিহত হয়। চলতি বছরের ২০০৭ সালের ১২ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়পুর এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় ৮ জন। একই বছরের ১২ মার্চ ফৌজদারহাট ওভারব্রিজ এলাকায় বাস উল্টে নিহত হয় দুই শিশুসহ সাতজন। ২০০৮ সালের ১৩ আগস্ট কুমিরার সুলতানা মন্দিরে বাস উল্টে নিহত হয় মছজিদ্দা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের চার স্কুল ছাত্রসহ সাতজন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ একটি বাস দুর্ঘটনায় মারা যায় ট্রেড স্ক্যান অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টের ১৬ শ্রমিক। দেশের সব মহাসড়কেই আছে মৃত্যুর এ মিছি
No comments