পবিত্র কোরআনের আলো-বনি ইসরাইলদের ইতিহাসের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অবাধ্যতার কিছু কাহিনী

৬১. ওয়া ইয ক্বীলা লাহুমু ছ্কুনূ হা-যিহিল ক্বারইয়াতা ওয়া কুলূ মিনহা হাইছু শি'তুম ওয়া ক্বূলূ হিত্ত্বাতুন ওয়াদ্খুলুলুল্ বা-বা ছুজ্জাদান নাগফির লাকুম খাত্বীআ-তিকুম; ছানাযীদুল মুহ্ছিনীন। ১৬২. ফাবাদ্দালাল্লাযীনা যালামূ মিনহুম ক্বাওলান গাইরাল্লাযী ক্বীলা লাহুম ফাআরছালনা আ'লাইহিম রিজযা ম্মিনাচ্ছামা-য়ি বিমা কা-নূ ইয়াযলিমূন।
১৬৩. ওয়াছ্আলহুম আ'নিল্ ক্বারইয়াতিল্লাতী কা-নাত হা-যিরাতাল্ বাহ্রি; ইয্ ইয়া'দূনা ফিচ্ছাবতি ইয্ তা'তীহিম


হীতা-নুহুম ইয়াওমা ছাবতিহিম শুর্রাআ'ন ওয়াইয়াওমা লা-ইয়াছবিতূনা; লা- তা'তীহিম; কাযা-লিকা নাব্লূহুম বিমা কা-নূ ইয়াফ্ছুক্বূন।\ [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৬১-১৬৩]

অনুবাদ :
১৬১. (এটা বনি ইসরাইলদের ইতিহাসের ঘটনা) যখন তাদের বলা হয়েছিল, ওই জনপদে বসবাস করো এবং সেখানে আহার্য যা পাবে তা থেকে তোমাদের পছন্দমতো আহার করো। আর তোমরা বলো (হে প্রভু) আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর সেই নগরীর প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করার সময় নতশিরে যেয়ো। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সৎকর্মশীলদের জন্য আরো বেশি পুণ্য দান করব।
১৬২. এরপর (এরা কী করল?) এদের মধ্যে যারা জালেম ছিল, তারা কথাটা পরিবর্তন করে অন্য কথা বানিয়ে নিল। এরপর তাদের অত্যাচারী চরিত্রের কারণেই আমি তাদের প্রতি আসমানি শাস্তি পাঠালাম।
১৬৩. আর তাদের কাছে সাগর পারের জনপদবাসী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন, যখন তারা শনিবারের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমের সীমা লঙ্ঘন করত। যখন সাগরের মাছগুলো শনিবার দিন পানিতে ভেসে ভেসে সামনে আসত এবং অন্যদিন সেগুলো এভাবে আসত না। (অর্থাৎ তারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে শনিবারে সেগুলো ধরে ফেলার ব্যবস্থা করত) এভাবেই আমি তাদের বারবার সংঘটিত করে যাওয়া উচ্ছৃঙ্খলতার পরীক্ষা করছিলাম।

ব্যাখ্যা : ১৬১ ও ১৬২ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইলের ইতিহাসের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে তারা হেঁয়ালিপনা করে আল্লাহর হুকুম পরিবর্তন করে ফেলেছিল। ঘটনাটা নবী মুসা (আ.)-এর সময়কার। অত্যাচারী ফেরাউনের রাজ্য মিসর থেকে চলে আসার পর বনি ইসরাইলরা আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণেই তীহ মরুপ্রান্তরে অন্তত ৪০ বছর ছন্নছাড়ার মতো ঘুরে বেড়িয়েছিল। এর পর আল্লাহর অনুগ্রহে তারা তাদের হারানো আদি ভূমি ফিরে পেয়েছিল। সেই আদি ভূমিতে পদার্পণ করার প্রাক্কালে তারা নবী মুসা (আ.)-এর মাধ্যমে পাওয়া আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশকে বিদ্রূপাত্মকভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছিল। এ রকম গোস্তাখির কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর কঠোর শাস্তি নাজিল করেছিলেন। ১৬৩ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের সাগরতীরে বসবাসের সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমান করা হয়, সেটা হজরত দাউদ (আ.)-এর সময়ের কথা। তখন শনিবার দিনটিকে বনি ইসরাইলের জন্য পবিত্র দিন ও ছুটির দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ দিনটিতে মাছ ধরা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সে জাতির জন্য তখন মাছ ধরাই ছিল প্রধান জীবিকা। মাছ ধরার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার জন্য তারা তখন এই ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল। আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে শনিবার মাছগুলো সাগরতীরের একেবারে কাছাকাছি চলে আসত। তখন বাঁধ দিয়ে বা জালের বেষ্টনি দিয়ে তারা সেগুলোকে আটকে রাখত এবং পরের দিন শিকার করত। পরবর্তীকালে প্রকাশ্যেই তারা সেদিন মাছ শিকার শুরু করে দেয়। এভাবে আল্লাহ ঢিল দিয়ে তাদের পরীক্ষা করেন। ফলে যারা জালেম তারা আল্লাহর হুকুম থেকে সরে যায়। একপর্যায়ে এসব সীমা লঙ্ঘনকারীদের তিনি চরম শাস্তি দেন। তারা বানরের মতো বিশ্রী রূপ ধারণ করে মৃত্যুবরণ করে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.