দূরে কোথায়... by আহমাদ শামীম
'হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,/সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে/অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে/সেখানে ছিলাম আমি আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে'_ কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো পৃথিবীর পথে হেঁটে আর জীবনের তাড়নায় দূরত্ব অতিক্রম করাই যেন মানব নিয়তি। অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছানোর তাগিদে আমরা প্রতিনিয়ত পার হই দূরত্বের অজানা সীমারেখা। তবু পথ ফুরাবার নয়।
ভুল ঠিকানায় ডাকপিয়নের চিঠি দিয়ে যাওয়ার মতো ব্যর্থ কোনো জীবন চাই না বলেই আমরা সঠিক গন্তব্যে যেতে চাই, দূরত্বের দোহাই ভুলে গিয়ে। এসবের মাঝে আবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে দূরে কোথাও। একঘেয়ে জীবন আর কর্মব্যস্ততার বিপরীতে সুখ খুঁজে পেতে, সব কিছু থেকে আড়াল করে ফেলতে_ দুই হাত প্রসারিত করে দিগন্তের অসীম সীমানায় সঁপে দিতে ইচ্ছা করে নিজেকে। আবার কখনও খোলা মাঠের বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া একাকী রেললাইনও যেন দূরে কোথাও যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়ে চলে যায় আপন মনে। সবুজ প্রান্তর আর খোলা আকাশের হাতছানিতে জীবনের সুখ খুঁজে পেতে কার না মন চায়! কোনো এক ক্লান্ত দুপুরে, সবুজ ছায়াঘেরা দীর্ঘ পথের দূরত্ব পেরিয়ে প্রিয়জনের হাসিমাখা মুখ দেখে কেউ পায় স্বস্তি, কেউ পায় গন্তব্যে পেঁৗছানোর সুখ। মাঠ জোড়া শস্যক্ষেতের মাঝে দূরে একচিলতে খড়ের ছাউনিও জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে কখনও। নদীর পাড় ধরে স্কুল বালিকাদের দূরের স্কুলে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আশাবাদী হয়ে উঠি আমরা। দূরত্বের সব আঁধার মুছে ফেলে এভাবেই আমরা জীবনকে বয়ে নিয়ে বেড়াই আরাধ্য সুখের আশায়।
No comments