নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড-জড়িত থাকার কথা স্বীকার মাহফুজের

রসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি মাহফুজ হোসেন ওরফে সবুজ গতকাল শনিবার ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া মাহফুজ তাঁর জবানবন্দিতে লোকমান হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করেছেন বলে অসমর্থিত সূত্র জানালেও সংশ্লিষ্ট


পুলিশ সূত্র এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে হত্যা মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার অপর আসামি আশিকুল কবির।
চার দফায় ১৯ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুর দেড়টায় কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় আসামি মাহফুজকে নরসিংদীর বিচারিক হাকিম সারোয়ার আলমের আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আসামি মাহফুজকে নরসিংদী জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তে গোপনীয়তার স্বার্থে মেয়র লোকমান হত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামি মাহফুজ হোসেন ১৬৪ ধারায় আদালতে কী জবানবন্দি দিয়েছেন, কাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, লোকমান হত্যার মিশন বাস্তবায়নের মূল নায়ক মাহফুজ হোসেন হত্যাকাণ্ডে নিজের অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সংগ্রহ সম্পর্কেও মাহফুজ জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা সময়ে মাহফুজ আট পৃষ্ঠার জবানবন্দি দেন। এ সময় আদালতের বিচারক জবানবন্দি লিখিত আকারে রেকর্ড করেন। লোকমান হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আধুনিক অস্ত্রটি মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অস্ত্র ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন বলে জানিয়েছেন মাহফুজ। তবে কার নির্দেশে সংগ্রহ করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। সূত্র আরো জানায়, অস্ত্রের জোগানদাতা নূরুল ইসলাম মাফিয়া চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। তাঁর মূল ব্যবসা অস্ত্র বেচাকেনা। তিনি তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী ধরে রাখতে পেশাদার অপরাধীদের অস্ত্র উপহার দেন। লোকমান হত্যায় ব্যবহৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রটিও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পেশাদার খুনিকে উপহার দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাহফুজ।
সূত্র জানায়, বিচারক প্রথম দফায় মাহফুজের দেওয়া জবানবন্দি শোনেন। পরে ফের ভেবেচিন্তে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য সময় দেন। সবশেষে মাহফুজের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মেয়র হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ওরফে মোবা ও অস্ত্রের জোগানদাতা নূরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেই লোকমান হত্যা মামলার রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গত ১৯ নভেম্বর লোকমান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল মাহফুজকে সদর উপজেলার মাধবদী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। ২০ নভেম্বর তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেয়। ৪ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় এক দিন ও অস্ত্র মামলায় আরো চার দিন রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহফুজসহ চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবদি দিলেন।

রাজসাক্ষী আশিকুল কবির
মেয়র লোকমান হত্যা মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন আশিকুল কবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, রাজসাক্ষী আশিকের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজুর ভাই সালাহউদ্দিন বাচ্চুর নাম প্রকাশিত হয়েছে।
নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় আশিক এ তথ্য প্রকাশ করেন। পুলিশ তাঁকে লোকমান হত্যা মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। লোকমান হত্যা মামলায় এই প্রথম একজনকে রাজসাক্ষী করা হয়েছে।
আশিকের পারিবারিক সূত্র জানায়, ডিবি পুলিশ গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে আশিকুল কবির আশিককে গ্রেপ্তার করে। সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম।

No comments

Powered by Blogger.