খাদ্য ও জ্বালানি দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের by ওমর ফারুক

মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তাদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হলেও মানবাধিকারসহ মানবিকতার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য ও জ্বালানি দিয়ে সহায়তা করার পরই তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সময় যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গা নারী-শিশু অভুক্ত বলে দাবি করছে, তাদের মানবিক কারণে বিজিবি খাবার দিচ্ছে। অসুস্থদের দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে থাকলে তাদের জ্বালানি দিয়ে সহযোগিতা করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিজিবির চট্টগ্রামের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গোলাম ফারুক চৌধুরী গত বুধবার বিকেলে টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পার্শ্ববর্তী দেশে একটা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় আমরা সীমান্ত এলাকায় বেশ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো রকম মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিজিবির জনবল বাড়ানো হয়েছে।'
বিজিবির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, মিয়ানমারে দাঙ্গার কারণে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য আসে। গত বুধবারও বিকেল ৩টা পর্যন্ত শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে তাদের সীমান্ত এলাকায় আটকে দেওয়া হয়।
বিজিবির ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সপরিবারে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেই দু-এক দিন ধরে না খেয়ে আছে। সে ক্ষেত্রে মানবিক কারণে বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের খাবার দেওয়া হয়। খাবার দিয়ে বলা হয় ফিরে যাওয়ার জন্য। এ সময় অনেক নৌকার যাত্রী বলে, এ দেশে আসতে গিয়ে তাদের ইঞ্জিনের জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। এ কথা শুনে বিজিবির তরফ থেকে কয়েকটি নৌকাকে জ্বালানি সহায়তা দিয়েও সাহায্য করা হয়।
কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক কমান্ডার এম এ আই খান বুধবার কালের কণ্ঠকে জানান, এর আগে গত সোমবার সাতটি নৌকায় করে ২৫৩ জন রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক কমান্ডার এম এ আই খান কালের কণ্ঠকে বলেন, দাঙ্গার ঘটনায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা যেন দেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য কোস্টগার্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রথম দুই-তিন দিন বেশ চাপ ছিল। বুধবার সকাল থেকে কমেছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছে, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল রয়েছে। এ কারণেই তারা তীরের দিকে আসতে সাহস পাচ্ছে না। ইঞ্জিনচালিত বোট দিয়ে যারা আসছে, তারা নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের বাধার কারণে ফেরত যাচ্ছে।
কোস্টগার্ডের ওই কর্মকর্তা জানান, গত ১১ জুন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও শাহপরী এলাকাসংলগ্ন নাফ নদী ও সমুদ্রপথ দিয়ে সাতটি নৌকায় করে ২৫৩ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। কোস্টগার্ড টহলদল তাদের ফিরিয়ে দেয়। এ সময় ওই এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ রোধে কোস্টগার্ডের সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এর পরও কিছু রোহিঙ্গা এ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা সরকারের তরফ থেকে জানা যায়নি। বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই রোহিঙ্গাদের এ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
গত ৪ জুন সন্ধ্যায় মিয়ানমারের এক বৌদ্ধ তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় এক মুসলমানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দাঙ্গায় ৯ জন মারা যায়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও গত ৮ জুন শুক্রবার জুমার নামাজের পর তাবলিগ জামায়াতকে কেন্দ্র করে আবারও মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে দাঙ্গা দেখা দেয়। পরদিন শনিবার এ দাঙ্গা ভয়াবহ রূপ নেয়। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলায়।

No comments

Powered by Blogger.