প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান-সমঝোতার পথেই চলতে হবে
জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট সমাপনী আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের জরুরি ইস্যু থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক নানা প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু সংশোধনীর সুপারিশ করেছেন এবং অর্থমন্ত্রী তা মেনেও নিয়েছেন।
এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান। বিনিয়োগকারীরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বুধবারের বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতি সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট মতামত ও সুপারিশ থাকলে তা সংসদে হাজির হয়ে পেশ করার অনুরোধ জ্ঞাপন করেছেন। তার আশ্বাস, ন্যায্য প্রস্তাব হলে উদার মনোভাব নিয়ে তা বিবেচনা করা হবে। তবে এ সময়ে বিরোধীদলীয় কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তারা অব্যাহতভাবে জাতীয় সংসদ অধিবেশন বর্জন করে চলেছেন। অবশ্য সংবিধান সংশোধনের সুপারিশমালা, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তাদের অবস্থান দেশবাসীর অজানা নয়। তারা সর্বোচ্চ আদালতে বাতিল হওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতিই পুনর্বহাল করতে ইচ্ছুক। এর পক্ষে জনমত রয়েছে বলেও তাদের দাবি এবং তা আদায়ে রাজপথের কর্মসূচির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। সংসদে সরকারের সংবিধান সংশোধনসহ যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এর শক্তিতে একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ যেমন কাম্য নয়, তেমনি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ উপেক্ষা করে কেবল হরতাল-ধর্মঘট ডেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং অন্যান্য ইস্যুর নিষ্পত্তির চেষ্টা করাও অনুচিত। দেশের অর্থনীতির ভিত ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা দ্রুতই অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার বছরে ৭ শতাংশে নিয়ে যেতে চাইছি এবং বর্তমান জাতীয় ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এ লক্ষ্য অর্জন অলীক কল্পনা নয়। এক দশকের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এটা নিশ্চিত করতে হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার ও বিরোধী পক্ষ সবার সহায়তা দরকার। রাজনীতির নানা ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সমৃদ্ধ দেশ গঠন প্রশ্নে অপরিহার্য হচ্ছে ঐক্য ও সমঝোতার পথে চলা। এর সূত্রও কিন্তু বের করতে হবে জাতীয় সংসদের অধিবেশনেই। এটাও মনে রাখা দরকার যে, ১৯৯১ সাল থেকে নিরপেক্ষ অস্থায়ী সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে চারটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এর কোনোটির ক্ষেত্রেই বিজয়ী ও বিজিত পক্ষের অবস্থান অভিন্ন হতে দেখা যায়নি। এ বাস্তবতায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, সুশীল সমাজ এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের উচিত হবে এমন একটি ফর্মুলা বের করার জন্য সচেষ্ট হওয়া, যা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও মেনে চলতে হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা যা-ই থাকুক না কেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। সমাজের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বারবার এ দাবি উঠছে। এ প্রসঙ্গে ১২৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবির বিষয়টি উল্লেখ করা চলে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকেই এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্তে পেঁৗছতে হবে।
No comments