ভালুক-রাজার রাজ্য by আরিফুন নেছা
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হুংকার দিয়ে সেপাই-ভালুককে ডাকল রাজা-ভালুক। কুর্নিশ করে সেপাই-ভালুক ঢুকতেই ভালুক-রাজা বলল, ‘রাজ্যে মানুষের গন্ধ পাচ্ছি।’ ভয়ে ভয়ে সেপাই বলল, ‘কই দেখি নাই তো, রাজা মশায়।’ রাজা-ভালুক বলল, ‘যাও, ভালো করে খুঁজে দেখো।’
সেপাই-ভালুক মানুষের খোঁজে বের হলো। খুঁজতে খুঁজতে সে একটা মানুষের দেখা পায়।
দেখামাত্রই সেপাই-ভালুক মানুষটাকে ধরে নিয়ে যায়। রাজা-ভালুক বলল, ‘ওকে কারাগারে বন্দী করে রাখো।’ মানুষটা পড়ল ভীষণ বিপদে। সে এই ভালুকরাজ্যে এসেছে বিশালগাছের বাকল নিতে। তার বাবার খুব অসুখ। কিন্তু সে তো এসেই পড়ল মহাবিপদে। কী করা যায়, কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে সে বলল, ‘আমি তোমাদের রাজার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ তারপর সেই মানুষটা ভালুক-রাজাকে সব কথা খুলে বলল।
ভালুক-রাজা মানুষকে মোটেই বিশ্বাস করত না। সে মনে করে, মানুষ মানেই মিথ্যাবাদী। তাই সে মানুষরাজ্যে অনুচর-ভালুক পাঠাল।
তারা সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানল, সত্যি সেই বন্দী মানুষটার বাবার খুব অসুখ। ফিরে এসে অনুচরেরা এ কথা জানাতেই ভালুক-রাজা খুব কষ্ট পেল। সে সেপাইদের সেই বিশালগাছের বাকল তুলে দিতে বলল। সেপাইরা রাজার আদেশ পালন করল। মানুষটা খুব খুশি হলো। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় মানুষটা ভালুক-রাজাকে বলল, ‘আচ্ছা রাজা-ভালুক, তুমি মানুষকে এত অবিশ্বাস কর কেন। মানুষ তো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তাদের মিথ্যাবাদী বলছ কেন, রাজা-ভালুক?’
ভালুক-রাজা বলল, ‘শুনবে সে কথা! তবে চলো আমার সঙ্গে।’ মানুষটা ভালুক-রাজার সঙ্গে সাজানো-গোছানো একটা রাজপ্রাসাদে ঢোকে। সেখানে একটা সুন্দর পালঙ্কের ওপর সুন্দর একটা ভালুক শুয়ে আছে। তাকে দেখে মানুষটা বলে, রাজা-ভালুক, কে এ?’ রাজা-ভালুক বলে, ‘এ আমার রানি-ভালুক।’ মানুষটা বলে, ‘কী হয়েছে তার?’
রাজা-ভালুক নিজ হাতে রানি-ভালুকের গায়ের ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দেয়? চমকে ওঠে মানুষটা। দেখে, রানি-ভালুকের লেজের জায়গাটা ব্যান্ডেজ করা।
মানুষটা জানতে চায়, রানি-ভালুকের এ অবস্থা কীভাবে হয়েছে? রাজা-ভালুক বলল, ‘শুনবে সে কথা।’
মানুষটা বলল, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই শুনব।’
রাজা ভালুক বলে, ‘সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আমি আর রানি-ভালুক গিয়েছিলাম জোছনা দেখতে। সেপাইরাও ছিল আমাদের সঙ্গে। আমরা দুজন জোছনা দেখছি। হঠাৎ রানি-ভালুকের চিৎকার! ও আমার পাশেই ছিল। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি, মাত্র দুই হাত দূরত্বে রানি-ভালুক শুয়ে ছটফট করছে আর ফাঁদে আটকা পড়ে ঝুলছে ওর লেজ। রানির চিৎকার শুনে ছুটে এসেছে সেপাইরা। আমরা রানিকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরি। আটকে থাকে রানি-ভালুকের লেজ। সেপাইদের কয়েকজনকে রেখে আসি রানির লেজের কাছে। বলে আসি যারা এমন কাজ করেছে, তাদের দেখামাত্র বন্দী করতে। সেপাইরা আড়ালে দাঁড়িয়ে খেয়াল রাখে ফাঁদের দিকে। এমন সময় দুজন মানুষ হাসতে হাসতে ফাঁদের কাছে আসে। ফাঁদে আটকা রানি-ভালুকের লেজ দেখে তারা খুব খুশি হয়। কিন্তু সেই খুশি আর বেশিক্ষণ থাকে না। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, ছয়টা সেপাই-ভালুক তাদের ঘিরে ফেলেছে। সেপাই-ভালুক মানুষ দুজনকে নিয়ে রাজদরবারে হাজির করে। রানি-ভালুকের চিকিৎসা চলছে, তাই আমি অন্দরমহলে ছিলাম। দ্বাররক্ষী-ভালুক সংবাদ দিতেই আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসি। মানুষ দুটোকে দেখে বলি, আমার রানি-ভালুকের লেজ তোমাদের কী কাজে লাগবে?’ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ওরা বলে, ‘ভালুক রাজা, ভালুক রাজা, আমাদের মায়ের খুব অসুখ। কবিরাজ বলেছে, ভালুকের লেজ দিয়ে পুরো শরীর ঝেড়ে দিলে আমাদের মায়ের অসুখ ভালো হয়ে যাবে। আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার তোমার ভালুক-রানির লেজ ফিরিয়ে দিয়ে যাব।’
‘আমি অন্দরমহলে গিয়ে ভালুক-রানি ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলি। চিকিৎসক জানায়, ছয় ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে গেলে ব্যান্ডেজ করলে জোড়া লেগে যাবে। চিকিৎসকের কথা শুনে আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, মানুষটার উপকার হবে। তাই লেজটা মানুষ দুটোর হাতে তুলে দিলাম। মানুষ দুটো খুব খুশি হলো এবং বারবার বলল, তারা ছয় ঘণ্টা কেন, কাজ হয়ে গেলে দুই ঘণ্টার মধ্যেই লেজ ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। তারপর ঘণ্টা-দিন-মাস-বছর চলে গেল। সেই মানুষ দুটো আর এল না। এখন আমার রানির লেজের জায়গায় পচন ধরেছে। জানি না, কবে পুরো শরীরে পচন ধরে যাবে। সেই থেকে আর মানুষকে বিশ্বাস করি না।’
মানুষটা বলে, ‘ভালুক-রাজা, তুমি পরে সেই মানুষ দুটোর খোঁজ নাওনি। ভালুক-রাজা বলে, ‘নিইনি আবার! ওরা ছিল বন্য প্রাণী পাচারকারী। আমার ভালুক-রানির লেজ পাচার করে দিয়েছে।’
মানুষটা ভালুক-রাজার কথা শুনে খুব কষ্ট পায়। ভালুক-রাজা বলে, ‘যাও, তোমার বাবার চিকিৎসার দেরি করিয়ে দিলাম...।’
মানুষটা রাজা-ভালুককে কুর্নিশ করে ভালুকরাজ্য থেকে বিদায় নেয়।
দেখামাত্রই সেপাই-ভালুক মানুষটাকে ধরে নিয়ে যায়। রাজা-ভালুক বলল, ‘ওকে কারাগারে বন্দী করে রাখো।’ মানুষটা পড়ল ভীষণ বিপদে। সে এই ভালুকরাজ্যে এসেছে বিশালগাছের বাকল নিতে। তার বাবার খুব অসুখ। কিন্তু সে তো এসেই পড়ল মহাবিপদে। কী করা যায়, কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে সে বলল, ‘আমি তোমাদের রাজার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ তারপর সেই মানুষটা ভালুক-রাজাকে সব কথা খুলে বলল।
ভালুক-রাজা মানুষকে মোটেই বিশ্বাস করত না। সে মনে করে, মানুষ মানেই মিথ্যাবাদী। তাই সে মানুষরাজ্যে অনুচর-ভালুক পাঠাল।
তারা সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানল, সত্যি সেই বন্দী মানুষটার বাবার খুব অসুখ। ফিরে এসে অনুচরেরা এ কথা জানাতেই ভালুক-রাজা খুব কষ্ট পেল। সে সেপাইদের সেই বিশালগাছের বাকল তুলে দিতে বলল। সেপাইরা রাজার আদেশ পালন করল। মানুষটা খুব খুশি হলো। কিন্তু চলে যাওয়ার সময় মানুষটা ভালুক-রাজাকে বলল, ‘আচ্ছা রাজা-ভালুক, তুমি মানুষকে এত অবিশ্বাস কর কেন। মানুষ তো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তাদের মিথ্যাবাদী বলছ কেন, রাজা-ভালুক?’
ভালুক-রাজা বলল, ‘শুনবে সে কথা! তবে চলো আমার সঙ্গে।’ মানুষটা ভালুক-রাজার সঙ্গে সাজানো-গোছানো একটা রাজপ্রাসাদে ঢোকে। সেখানে একটা সুন্দর পালঙ্কের ওপর সুন্দর একটা ভালুক শুয়ে আছে। তাকে দেখে মানুষটা বলে, রাজা-ভালুক, কে এ?’ রাজা-ভালুক বলে, ‘এ আমার রানি-ভালুক।’ মানুষটা বলে, ‘কী হয়েছে তার?’
রাজা-ভালুক নিজ হাতে রানি-ভালুকের গায়ের ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দেয়? চমকে ওঠে মানুষটা। দেখে, রানি-ভালুকের লেজের জায়গাটা ব্যান্ডেজ করা।
মানুষটা জানতে চায়, রানি-ভালুকের এ অবস্থা কীভাবে হয়েছে? রাজা-ভালুক বলল, ‘শুনবে সে কথা।’
মানুষটা বলল, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই শুনব।’
রাজা ভালুক বলে, ‘সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আমি আর রানি-ভালুক গিয়েছিলাম জোছনা দেখতে। সেপাইরাও ছিল আমাদের সঙ্গে। আমরা দুজন জোছনা দেখছি। হঠাৎ রানি-ভালুকের চিৎকার! ও আমার পাশেই ছিল। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি, মাত্র দুই হাত দূরত্বে রানি-ভালুক শুয়ে ছটফট করছে আর ফাঁদে আটকা পড়ে ঝুলছে ওর লেজ। রানির চিৎকার শুনে ছুটে এসেছে সেপাইরা। আমরা রানিকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরি। আটকে থাকে রানি-ভালুকের লেজ। সেপাইদের কয়েকজনকে রেখে আসি রানির লেজের কাছে। বলে আসি যারা এমন কাজ করেছে, তাদের দেখামাত্র বন্দী করতে। সেপাইরা আড়ালে দাঁড়িয়ে খেয়াল রাখে ফাঁদের দিকে। এমন সময় দুজন মানুষ হাসতে হাসতে ফাঁদের কাছে আসে। ফাঁদে আটকা রানি-ভালুকের লেজ দেখে তারা খুব খুশি হয়। কিন্তু সেই খুশি আর বেশিক্ষণ থাকে না। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, ছয়টা সেপাই-ভালুক তাদের ঘিরে ফেলেছে। সেপাই-ভালুক মানুষ দুজনকে নিয়ে রাজদরবারে হাজির করে। রানি-ভালুকের চিকিৎসা চলছে, তাই আমি অন্দরমহলে ছিলাম। দ্বাররক্ষী-ভালুক সংবাদ দিতেই আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসি। মানুষ দুটোকে দেখে বলি, আমার রানি-ভালুকের লেজ তোমাদের কী কাজে লাগবে?’ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ওরা বলে, ‘ভালুক রাজা, ভালুক রাজা, আমাদের মায়ের খুব অসুখ। কবিরাজ বলেছে, ভালুকের লেজ দিয়ে পুরো শরীর ঝেড়ে দিলে আমাদের মায়ের অসুখ ভালো হয়ে যাবে। আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার তোমার ভালুক-রানির লেজ ফিরিয়ে দিয়ে যাব।’
‘আমি অন্দরমহলে গিয়ে ভালুক-রানি ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলি। চিকিৎসক জানায়, ছয় ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে গেলে ব্যান্ডেজ করলে জোড়া লেগে যাবে। চিকিৎসকের কথা শুনে আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, মানুষটার উপকার হবে। তাই লেজটা মানুষ দুটোর হাতে তুলে দিলাম। মানুষ দুটো খুব খুশি হলো এবং বারবার বলল, তারা ছয় ঘণ্টা কেন, কাজ হয়ে গেলে দুই ঘণ্টার মধ্যেই লেজ ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। তারপর ঘণ্টা-দিন-মাস-বছর চলে গেল। সেই মানুষ দুটো আর এল না। এখন আমার রানির লেজের জায়গায় পচন ধরেছে। জানি না, কবে পুরো শরীরে পচন ধরে যাবে। সেই থেকে আর মানুষকে বিশ্বাস করি না।’
মানুষটা বলে, ‘ভালুক-রাজা, তুমি পরে সেই মানুষ দুটোর খোঁজ নাওনি। ভালুক-রাজা বলে, ‘নিইনি আবার! ওরা ছিল বন্য প্রাণী পাচারকারী। আমার ভালুক-রানির লেজ পাচার করে দিয়েছে।’
মানুষটা ভালুক-রাজার কথা শুনে খুব কষ্ট পায়। ভালুক-রাজা বলে, ‘যাও, তোমার বাবার চিকিৎসার দেরি করিয়ে দিলাম...।’
মানুষটা রাজা-ভালুককে কুর্নিশ করে ভালুকরাজ্য থেকে বিদায় নেয়।
No comments