স্মরণ-রবিউল হোসেন কচি : আমৃত্যু ছিলেন সংগ্রামী by মনজুর আলী নন্তু
সেই পাকিস্তানি আমল। তখন জগন্নাথ কলেজে পড়ি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত চলচ্চিত্র পত্রিকা উল্টোরথে একটি প্রশ্নোত্তর পড়েছিলাম। উত্তর দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শচীন ভৌমিক। প্রশ্নটি ছিল, মানুষের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? শচীন ভৌমিক উত্তর দিয়েছিলেন, মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, কিন্তু
আশপাশের সবাই তার আগমনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে এবং হাসি ছড়াতে থাকে। তাই মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত_সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে হাসতে হাসতে আর আশপাশের সবাই, পরিচিতজনরা দুঃখের সাগরে ভাসতে থাকবে, কাঁদতে থাকবে। রবিউল হোসেন কচি জীবনের প্রতিটি বাঁকে হাজির করেছেন তাঁর সবল উপস্থিতি। আমি এসেছি তোমাদের নিরানন্দ জীবনে হাসি ফোটাতে। তোমাদের ঐশ্বর্য জাহির করতে, উদ্ভাসিত করতে, যাতে তোমরা তোমাদের এই অফুরন্ত সম্পদ দিয়ে সমাজের সব দুঃখ-বেদনা জয় করতে পারো, হাসি-খুশি একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারো। একজন সমাজসচেতন মানুষ হিসেবে, একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই কচি তাঁর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েছেন। ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ তিনি মারা যান।
রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি একজন মানুষ কতটা অবিচল থাকতে পারে, রবিউল হোসেন কচি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশকে তিনি রক্ত দিয়ে জন্ম দিয়েছেন, সে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। রবিউল হোসেন কচি একাত্তর থেকে শুরু করে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিলেন একজন আপাদমস্তক মুক্তিযোদ্ধা। কচি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিকও ছিলেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি সাত বছর নোয়াখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সাত বছরে নোয়াখালীকে তিনি এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। শুধু একটি উদাহরণ দেব। সেটি একটি জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ। এটি আমরা পাই মোহাম্মদ হোসেন খানের লেখায়। তিনি লিখেছেন, 'আরেক দিন গেলাম একটি জনসভায়। সেই জনসভার প্রধান অতিথি কচি। নোয়াখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান কচি প্রকাশ্য জনসভায় কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। কোন প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে তারও হিসাব একে একে দিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে বলছেন, আমি যে হিসাব দিলাম এর মধ্যে কোনো গরমিল থাকলে ১০ দিনের মধ্যে আমাকে জানান। আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। একজন সত্যিকার আদর্শ মুক্তিযোদ্ধাকে দেখলাম, যিনি নিজের কাজের প্রকাশ্য জবাবদিহি করলেন।' ক্ষমতায় অবস্থান করে অর্থলোভ থেকে যিনি নিজেকে দূরে রাখতে পেরেছেন, তিনিই প্রকৃত সৎ। নোয়াখালীতে অবস্থানের সময় বিভিন্ন জনের মুখে কচির সততার বিস্তৃত কাহিনী শুনেছি। দিনের আরামকে, রাতের বিশ্রামকে তুচ্ছ করে তিনি ছুটে যেতেন মানুষের সেবায়। কচি কর্মক্ষেত্রে আর্থিক সততার যে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন, তা বড়ই দুর্লভ। সদা হাস্যময়, দৃষ্টিনন্দন শ্মশ্রুমণ্ডিত কীর্তিমান এই মানুষটি কেন একা একা প্রায় গোপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটা সবার কাছেই প্রশ্ন ছিল। ওই হাসপাতালে তো তাঁর মতো সিরিয়াস হৃদরোগীর চিকিৎসার জায়গা ছিল না। হয়তো তাঁর গোপন শেষ ইচ্ছাটা তিনি লুকিয়ে ছিলেন সবার কাছ থেকে, কাউকে জানতে দেননি। তাঁর প্রিয় মানুষ, তাঁর আদর্শ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত হাসপাতালেই হয়তো তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
মনজুর আলী নন্তু
রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি একজন মানুষ কতটা অবিচল থাকতে পারে, রবিউল হোসেন কচি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশকে তিনি রক্ত দিয়ে জন্ম দিয়েছেন, সে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। রবিউল হোসেন কচি একাত্তর থেকে শুরু করে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিলেন একজন আপাদমস্তক মুক্তিযোদ্ধা। কচি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিকও ছিলেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি সাত বছর নোয়াখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সাত বছরে নোয়াখালীকে তিনি এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। শুধু একটি উদাহরণ দেব। সেটি একটি জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ। এটি আমরা পাই মোহাম্মদ হোসেন খানের লেখায়। তিনি লিখেছেন, 'আরেক দিন গেলাম একটি জনসভায়। সেই জনসভার প্রধান অতিথি কচি। নোয়াখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান কচি প্রকাশ্য জনসভায় কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। কোন প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে তারও হিসাব একে একে দিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে বলছেন, আমি যে হিসাব দিলাম এর মধ্যে কোনো গরমিল থাকলে ১০ দিনের মধ্যে আমাকে জানান। আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। একজন সত্যিকার আদর্শ মুক্তিযোদ্ধাকে দেখলাম, যিনি নিজের কাজের প্রকাশ্য জবাবদিহি করলেন।' ক্ষমতায় অবস্থান করে অর্থলোভ থেকে যিনি নিজেকে দূরে রাখতে পেরেছেন, তিনিই প্রকৃত সৎ। নোয়াখালীতে অবস্থানের সময় বিভিন্ন জনের মুখে কচির সততার বিস্তৃত কাহিনী শুনেছি। দিনের আরামকে, রাতের বিশ্রামকে তুচ্ছ করে তিনি ছুটে যেতেন মানুষের সেবায়। কচি কর্মক্ষেত্রে আর্থিক সততার যে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন, তা বড়ই দুর্লভ। সদা হাস্যময়, দৃষ্টিনন্দন শ্মশ্রুমণ্ডিত কীর্তিমান এই মানুষটি কেন একা একা প্রায় গোপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটা সবার কাছেই প্রশ্ন ছিল। ওই হাসপাতালে তো তাঁর মতো সিরিয়াস হৃদরোগীর চিকিৎসার জায়গা ছিল না। হয়তো তাঁর গোপন শেষ ইচ্ছাটা তিনি লুকিয়ে ছিলেন সবার কাছ থেকে, কাউকে জানতে দেননি। তাঁর প্রিয় মানুষ, তাঁর আদর্শ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত হাসপাতালেই হয়তো তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
মনজুর আলী নন্তু
No comments