দক্ষিণ এশিয়া-মানবাধিকার রক্ষায় সুশীল সমাজের ভূমিকা by আই এ রহমান
দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকারকর্মীরা যখনই মানবাধিকার পরিস্থিতির সমীক্ষা করতে একত্র হন, তাঁদের উল্লসিত হওয়ার তেমন কিছুই থাকে না। শুধু তাঁদের নিরন্তর সংগ্রামই আশাব্যঞ্জক। ভারতের রাজধানীতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী একটি সম্মেলনও এর ব্যতিক্রম নয়।
সার্কভুক্ত দেশগুলো (ভুটান বাদে) থেকে আগত প্রতিনিধিদের সবার মনের ওপর ভর করেছিল পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যা। দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকারকর্মীরা যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ত্যাগের মনোভাব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, তার গভীরতা বোঝা যাচ্ছিল। যদিও এ বোঝাপড়া এবং পরস্পরের কাছাকাছি আসার পথ সহজ নয়—প্রায় পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই শম্বুকগতির আমলাতন্ত্র যতটা সম্ভব সুশীল সমাজের জায়গা সংকুচিত করতে সচেষ্ট থাকে। তবে বন্যা-আক্রান্ত জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি জানানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের নজিরবিহীন বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো দিতে না পারায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষভাবে পীড়াদায়ক ছিল আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রটোকল সক্রিয় করা কিংবা অন্তত আহ্বান করার ক্ষেত্রেও সার্কের ব্যর্থতা। কোনো সদস্যদেশ আঞ্চলিক এই চুক্তিকে কেন উজ্জীবিত করল না, তা বোধগম্য হয়নি।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সুশীল সমাজ, চিকিৎসক, ওষুধ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মতো গোষ্ঠীর কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান কোনো স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করেনি বলে বেশ জোরালো অভিযোগ উঠেছিল। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র মানুষে মানুষে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তব বা কল্পিত—যে ধরনের প্রতিবন্ধকতাই থাকুক না কেন, তা দূর করতে হবে। ভারত থেকে পাকিস্তানে ত্রাণসহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না। কেননা কেউ চায় না যে এমন লোকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, যারা সব ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ মনোভাব জারি রাখতে চায়, এমনকি প্রতিবেশী দেশের ত্রাণসহায়তার প্রস্তাবকেও তারা অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবিক কাজে সহযোগিতা আমাদের দক্ষিণ এশীয় পরিচয় এবং আমাদের নিয়তি যে একই—এ ধারণাকে জোরালো করবে। আবদুল সাত্তার ইধি ও বেশ কিছু পাকিস্তানি কয়েক বছর আগে ভারতের গুজরাট রাজ্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার সময় সেটা বেশ ভালোভাবেই দেখা গেছে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে সতর্ক মানবাধিকারকর্মীর পক্ষেও অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় কাশ্মীর উপত্যকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড কিংবা শ্রীলঙ্কায় কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থা কায়েমের দিকে যাত্রা, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গণমাধ্যমের ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো। কিন্তু সম্মেলনটিতে একধরনের ইতস্তত ভাব কাজ করেছে যে, এসব ব্যাপার নিয়ে উচ্চবাচ্যের ফল ইতিবাচক না হয়ে নেতিবাচকও হতে পারে। কোনো অবস্থাতে, কোনো প্রকারে যেন মানবাধিকার খর্ব না হয়, এ ব্যাপারে অংশগ্রহণকারীরা আন্তরিক প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আফগানিস্তান বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল বেশ খোলা মনে। আফগান জনগণের ভাগ্য নির্মাণে নিজস্ব মতকে আরও প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সম্মেলনে মতৈক্য দেখা গেছে। বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটিতে সদর্প পদচারণ চালিয়ে যাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর উপস্থিতি সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যারই অংশ—এমন কথা বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছে। আফগানিস্তানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না থেকে ভারত ও পাকিস্তানের উচিত পারস্পরিক আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটিতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য যৌথভাবে একটি দক্ষিণ এশীয় উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়া।
পাকিস্তানে আটক থাকা ৪৫০ জন ভারতীয় জেলের মুক্তি ও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার ঘটনাটি ছিল প্রতিনিধিদের জন্য একমাত্র স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। সুশীল সমাজের সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা প্রশংসিত হয়। পাকিস্তান ও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যত দ্রুত এবং যেমন দরদি ভূমিকা নিয়েছিল, তা সার্কভুক্ত কোনো দেশের নাগরিকের অন্য দেশে বন্দী থাকার বিষয় মীমাংসার ক্ষেত্রে শুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়। এ-সংক্রান্ত আলোচনা ছিল মূলত পাকিস্তান ও ভারতকেন্দ্রিক। এ দুটি দেশের মধ্যে বন্দীদের ব্যাপারে মীমাংসায় পৌঁছার বিষয়টি অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
এ সম্মেলনে জোর দাবি তোলা হয়, বন্দীদের বিষয় দেখার জন্য দক্ষিণ এশীয় কনভেনশন/প্রটোকল গঠন করা হোক, যেখানে উঠে আসবে বিদেশের মাটিতে বিচার, দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ এবং সাজা খাটার পর তাৎক্ষণিকভাবে বন্দীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার মতো বিষয়গুলো।
এ সম্মেলনের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় ছিল সন্ত্রাসবাদ। সব অংশগ্রহণকারী পুরোপুরি একমত হন যে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর স্থিতিশীলতা, অখণ্ডতা ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ হুমকি সন্ত্রাসবাদ। তা সে যে নামেই পরিচালিত হোক না কেন। রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক কিংবা গোষ্ঠীগত স্বার্থে যারাই নিরপরাধ মানুষ হত্যা করুক কিংবা যে গোষ্ঠীই এর ফায়দা লুটুক না কেন, তা এই হুমকি তৈরি করে। সন্ত্রাসবাদের দ্বারা কোনো বিভক্তি সৃষ্টি হতে না দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি সম্মিলিত পাটাতন তৈরি করা উচিত—এ ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন।
পাশাপাশি এ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডের সুযোগে যথাযথ প্রক্রিয়া না মানা এবং মৌলিক অধিকার খর্ব করার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনি আটকাদেশ, বিচার-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, দায়মুক্তি দেওয়ার হার অনেক বেড়ে যাওয়া এবং হঠাৎ অন্তর্ধানের মতো বিষয়গুলো সমালোচিত হয়। দক্ষিণ এশীয় সব রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের কনভেনশন অন ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাসহকারে এবং যৌক্তিক পথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি যৌথ কর্মকৌশল প্রণয়ন করার জন্য এ সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রান্তে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ক্ষয় বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক হয়। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যকর ও স্বচ্ছ রাজনীতি তৈরির বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্যে পৌঁছা সম্ভব হয়েছিল। জনগণের, বিশেষত তরুণদের, রাজনীতির প্রতি নিস্পৃহতা দূর করার জন্য এবং অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ ও স্বার্থান্বেষী দলবাজদের করায়ত্ত থেকে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করার জন্য এটা প্রয়োজনীয়।
যে মানবাধিকারকর্মীরা সমাজে দুর্দশার পেছনের কারণগুলো যাচাই করতে চেষ্টা করেছেন, তাঁরা এ কাজের গুরুত্ব বা শক্তি সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তি থেকে তা করেননি। তাঁদের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস আছে, ভেজাল রাজনীতির ভাঁড়ামি আর লম্বা-চওড়া কথার চেয়ে যাঁরা চাপে-থাকা-জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগের অংশীদার, তাঁদের কণ্ঠস্বর গণমাধ্যম ও অন্য গণপরিসরে উঠে আসা অনেক বেশি সংগত।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
আই এ রহমান: পাকিস্তানি প্রবীণ সাংবাদিক।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সুশীল সমাজ, চিকিৎসক, ওষুধ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মতো গোষ্ঠীর কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান কোনো স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করেনি বলে বেশ জোরালো অভিযোগ উঠেছিল। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র মানুষে মানুষে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তব বা কল্পিত—যে ধরনের প্রতিবন্ধকতাই থাকুক না কেন, তা দূর করতে হবে। ভারত থেকে পাকিস্তানে ত্রাণসহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না। কেননা কেউ চায় না যে এমন লোকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, যারা সব ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ মনোভাব জারি রাখতে চায়, এমনকি প্রতিবেশী দেশের ত্রাণসহায়তার প্রস্তাবকেও তারা অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবিক কাজে সহযোগিতা আমাদের দক্ষিণ এশীয় পরিচয় এবং আমাদের নিয়তি যে একই—এ ধারণাকে জোরালো করবে। আবদুল সাত্তার ইধি ও বেশ কিছু পাকিস্তানি কয়েক বছর আগে ভারতের গুজরাট রাজ্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার সময় সেটা বেশ ভালোভাবেই দেখা গেছে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে সতর্ক মানবাধিকারকর্মীর পক্ষেও অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় কাশ্মীর উপত্যকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড কিংবা শ্রীলঙ্কায় কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থা কায়েমের দিকে যাত্রা, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গণমাধ্যমের ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো। কিন্তু সম্মেলনটিতে একধরনের ইতস্তত ভাব কাজ করেছে যে, এসব ব্যাপার নিয়ে উচ্চবাচ্যের ফল ইতিবাচক না হয়ে নেতিবাচকও হতে পারে। কোনো অবস্থাতে, কোনো প্রকারে যেন মানবাধিকার খর্ব না হয়, এ ব্যাপারে অংশগ্রহণকারীরা আন্তরিক প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আফগানিস্তান বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল বেশ খোলা মনে। আফগান জনগণের ভাগ্য নির্মাণে নিজস্ব মতকে আরও প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সম্মেলনে মতৈক্য দেখা গেছে। বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটিতে সদর্প পদচারণ চালিয়ে যাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর উপস্থিতি সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যারই অংশ—এমন কথা বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছে। আফগানিস্তানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না থেকে ভারত ও পাকিস্তানের উচিত পারস্পরিক আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটিতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য যৌথভাবে একটি দক্ষিণ এশীয় উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়া।
পাকিস্তানে আটক থাকা ৪৫০ জন ভারতীয় জেলের মুক্তি ও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার ঘটনাটি ছিল প্রতিনিধিদের জন্য একমাত্র স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। সুশীল সমাজের সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা প্রশংসিত হয়। পাকিস্তান ও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যত দ্রুত এবং যেমন দরদি ভূমিকা নিয়েছিল, তা সার্কভুক্ত কোনো দেশের নাগরিকের অন্য দেশে বন্দী থাকার বিষয় মীমাংসার ক্ষেত্রে শুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়। এ-সংক্রান্ত আলোচনা ছিল মূলত পাকিস্তান ও ভারতকেন্দ্রিক। এ দুটি দেশের মধ্যে বন্দীদের ব্যাপারে মীমাংসায় পৌঁছার বিষয়টি অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
এ সম্মেলনে জোর দাবি তোলা হয়, বন্দীদের বিষয় দেখার জন্য দক্ষিণ এশীয় কনভেনশন/প্রটোকল গঠন করা হোক, যেখানে উঠে আসবে বিদেশের মাটিতে বিচার, দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ এবং সাজা খাটার পর তাৎক্ষণিকভাবে বন্দীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার মতো বিষয়গুলো।
এ সম্মেলনের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় ছিল সন্ত্রাসবাদ। সব অংশগ্রহণকারী পুরোপুরি একমত হন যে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর স্থিতিশীলতা, অখণ্ডতা ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ হুমকি সন্ত্রাসবাদ। তা সে যে নামেই পরিচালিত হোক না কেন। রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক কিংবা গোষ্ঠীগত স্বার্থে যারাই নিরপরাধ মানুষ হত্যা করুক কিংবা যে গোষ্ঠীই এর ফায়দা লুটুক না কেন, তা এই হুমকি তৈরি করে। সন্ত্রাসবাদের দ্বারা কোনো বিভক্তি সৃষ্টি হতে না দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি সম্মিলিত পাটাতন তৈরি করা উচিত—এ ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন।
পাশাপাশি এ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডের সুযোগে যথাযথ প্রক্রিয়া না মানা এবং মৌলিক অধিকার খর্ব করার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনি আটকাদেশ, বিচার-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, দায়মুক্তি দেওয়ার হার অনেক বেড়ে যাওয়া এবং হঠাৎ অন্তর্ধানের মতো বিষয়গুলো সমালোচিত হয়। দক্ষিণ এশীয় সব রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের কনভেনশন অন ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাসহকারে এবং যৌক্তিক পথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি যৌথ কর্মকৌশল প্রণয়ন করার জন্য এ সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রান্তে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ক্ষয় বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক হয়। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যকর ও স্বচ্ছ রাজনীতি তৈরির বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্যে পৌঁছা সম্ভব হয়েছিল। জনগণের, বিশেষত তরুণদের, রাজনীতির প্রতি নিস্পৃহতা দূর করার জন্য এবং অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ ও স্বার্থান্বেষী দলবাজদের করায়ত্ত থেকে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করার জন্য এটা প্রয়োজনীয়।
যে মানবাধিকারকর্মীরা সমাজে দুর্দশার পেছনের কারণগুলো যাচাই করতে চেষ্টা করেছেন, তাঁরা এ কাজের গুরুত্ব বা শক্তি সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তি থেকে তা করেননি। তাঁদের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস আছে, ভেজাল রাজনীতির ভাঁড়ামি আর লম্বা-চওড়া কথার চেয়ে যাঁরা চাপে-থাকা-জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগের অংশীদার, তাঁদের কণ্ঠস্বর গণমাধ্যম ও অন্য গণপরিসরে উঠে আসা অনেক বেশি সংগত।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
আই এ রহমান: পাকিস্তানি প্রবীণ সাংবাদিক।
No comments