প্রয়োজন সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান-পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

রাজধানীর উপকণ্ঠে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভ আপাতত প্রশমিত হয়েছে; গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সশরীরে আশুলিয়া গিয়ে বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হবে। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁরা বর্ধিত বেতন পাওয়া শুরু করবেন।


এতে আশ্বস্ত হয়ে শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে গেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত এটিই ছিল স্বস্তির খবর।
তবে রাতে বৈঠক করে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁদের পক্ষে বেতন বাড়ানো সম্ভব নয়। ফলে এই ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে সহিংসতা, ভাঙচুর ইত্যাদি হয়েছে। বুধবার শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে ২০ পুলিশসহ দেড় শতাধিক শ্রমিক আহত হন। বৃহস্পতিবার পুলিশ-শ্রমিক মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, প্রায় আড়াই শ যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে, একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ব্যাংক ও চীনা রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে।
শ্রমিকেরা দাবি করে আসছেন, বেতন বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, বেতন বৃদ্ধির ঘোষণার আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরবেন না। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বুধ ও বৃহস্পতিবার কোনো উৎপাদন হয়নি। বুধবারের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে তিন শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন পোশাক কারখানার মালিক, শ্রমিক, সাংসদ, পুলিশ, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বৃহস্পতিবার থেকে পোশাক কারখানাগুলো চালু করা হবে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবারও কারখানাগুলো চালু হয়নি। তবে যেহেতু শ্রমিকেরা শান্ত হয়েছেন, তাই আশা করা যায়, তাঁরা অচিরেই কাজে ফিরবেন।
শ্রমিকদের হঠকারী ও ধ্বংসাত্মক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব শ্রমিক কাজ ফেলে বিক্ষোভে অংশ নিতে চাননি, তাঁদের জোর করে বিক্ষোভে টেনে আনার চেষ্টা করাও অন্যায়। এভাবে পুরো পোশাকশিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই ক্ষতির মাশুল শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদেরও কিছু মাত্রায় গুনতে হয়। তা ছাড়া বিক্ষুব্ধ পোশাকশ্রমিকেরা নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টায় যখন রাস্তায় সাধারণ যানবাহন ভাঙচুর করেন, তখন ভারি অন্যায় করা হয়। কারণ, ওই সব যানবাহনের মালিক বা যাত্রীরা কোনোভাবে এর সঙ্গে জড়িত নন। আর বিপুলসংখ্যক যানবাহন ভাঙচুর করার ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটা গোটা জাতির ক্ষতি। সুতরাং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকদের বলপ্রয়োগ, ভাঙচুর, সহিংসতা ইত্যাদি কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
তবে পোশাকশিল্পের স্থিতিশীলতা, নির্বিঘ্ন-নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের পরিবেশ এবং সামগ্রিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করলে দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক। কারণ, যদি ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাঁদের আয় না বাড়ে; রুগ্ণ, ক্লিষ্ট শ্রমিকের জীবনযাত্রার আর্থিক চাপ যে মাত্রায় বেড়েছে, তা যদি লাঘব করার একটুখানি উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে কীভাবে তাঁদের দিয়ে কাজ করানো সম্ভব? তাই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বেতন বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যেন বাস্তবায়িত হয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। যদিও ঘোষণাটি আসতে হবে সরকার ও মালিকদের পক্ষ থেকে। আশা করা যায়, সব পক্ষ মিলে এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান করবে।

No comments

Powered by Blogger.