কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত-নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করালে শিক্ষকের শাস্তি by মোশতাক আহমেদ
সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। এমনকি শিক্ষকেরা বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও পড়াতে পারবেন না। তবে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন।
সরকার-নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে।
এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা না মানলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জড়িত শিক্ষকের বেতনের সরকারি অংশ (এমপিও) বাতিল বা স্থগিত করা হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।
অন্যদিকে নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অসদাচরণের দায়ে সরকারের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়। এ সময় শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুনসহ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এখন থেকেই এ নীতিমালা কার্যকর হবে।’ গতকাল নীতিমালা চূড়ান্ত হলেও আদেশ আকারে জারি করতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক বিষয়ের জন্য ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকায় ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোনোক্রমেই এই টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না।
নিয়মিত কর্মঘণ্টার আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে বলে আনুষঙ্গিক খরচের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হবে। অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে। কোনোভাবেই এর কম নেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে বেশি ক্লাস নেওয়া যাবে।
নীতি অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি লাগবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা, রোল ও শ্রেণী উল্লেখ করে দিতে হবে।
কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তাঁরা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে উৎসাহিত বা বাধ্য করতে পারবেন না। এমনকি এ বিষয়ে কোনো প্রচার চালাতে পারবেন না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং-বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রচার এবং অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ ছাড়া কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে প্রণীত নীতিমালার প্রয়োগ এবং এ ধরনের কাজ নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
নীতিমালা না মানলে শাস্তি: এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত বা বাতিল হবে। ওই শিক্ষককে সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্ত করারও নির্দেশনা থাকছে। এমপিওর বাইরের কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে প্রতিষ্ঠানপ্রদত্ত বেতন-ভাতা স্থগিতের পাশাপাশি তাঁকে বরখাস্ত করা যাবে।
কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি বা অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তা পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা আপিল বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা তদারক কমিটি থাকবে। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে তদারক কমিটি কাজ করবে। এসব কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং-বাণিজ্য দেশের বড় সমস্যা। আমাদের উদ্দেশ্য, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করা। দেশে এই প্রথম কোচিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’ তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত কোচিংয়ের বিষয়ে আলাদা নীতিমালা করা হবে।
গতকালের সভায় উপস্থিত শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘এখন কোচিংমুখী হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের পড়ালেখা। অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে পড়তে চাপ দেন। পড়লে বেশি নম্বর দেন, প্রশ্ন বলে দেন। এতে শিক্ষার্থীদের হূদয়ের ওপর চাপ পড়ে। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ থাকায় এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। এখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই চেষ্টা। এর বাস্তবায়ন করতে হবে।’
নীতিমালায় বলা হয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণীর শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন। এটি বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অনেক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিংয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গত বছরের শেষ দিকে আদালতে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কেন কোচিং বন্ধে পরিপত্র জারি করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে নীতিমালাটি করা হয়েছে।
নীতিমালা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের বলব। তবে আমার মনে হয়, শিক্ষকেরা এটা না-ও মানতে পারেন।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের ভেতর অতিরিক্ত ক্লাস করার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই। প্রতি বিষয়ে মাসে ৩০০ টাকা করে রাখার সিদ্ধান্ত বেশিই মনে হয়েছে। কারণ, কোনো শিক্ষার্থী সব কটি বিষয় পড়লে এই টাকা অনেক হয়ে যাবে। তবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের না পড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়নি।’
এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা না মানলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জড়িত শিক্ষকের বেতনের সরকারি অংশ (এমপিও) বাতিল বা স্থগিত করা হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।
অন্যদিকে নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অসদাচরণের দায়ে সরকারের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়। এ সময় শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুনসহ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এখন থেকেই এ নীতিমালা কার্যকর হবে।’ গতকাল নীতিমালা চূড়ান্ত হলেও আদেশ আকারে জারি করতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মহানগর এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক বিষয়ের জন্য ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকায় ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোনোক্রমেই এই টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না।
নিয়মিত কর্মঘণ্টার আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে বলে আনুষঙ্গিক খরচের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হবে। অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে। কোনোভাবেই এর কম নেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে বেশি ক্লাস নেওয়া যাবে।
নীতি অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি লাগবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা, রোল ও শ্রেণী উল্লেখ করে দিতে হবে।
কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তাঁরা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে উৎসাহিত বা বাধ্য করতে পারবেন না। এমনকি এ বিষয়ে কোনো প্রচার চালাতে পারবেন না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং-বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রচার এবং অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ ছাড়া কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে প্রণীত নীতিমালার প্রয়োগ এবং এ ধরনের কাজ নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
নীতিমালা না মানলে শাস্তি: এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত বা বাতিল হবে। ওই শিক্ষককে সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্ত করারও নির্দেশনা থাকছে। এমপিওর বাইরের কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে প্রতিষ্ঠানপ্রদত্ত বেতন-ভাতা স্থগিতের পাশাপাশি তাঁকে বরখাস্ত করা যাবে।
কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি বা অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তা পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা আপিল বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা তদারক কমিটি থাকবে। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে তদারক কমিটি কাজ করবে। এসব কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং-বাণিজ্য দেশের বড় সমস্যা। আমাদের উদ্দেশ্য, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করা। দেশে এই প্রথম কোচিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’ তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত কোচিংয়ের বিষয়ে আলাদা নীতিমালা করা হবে।
গতকালের সভায় উপস্থিত শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘এখন কোচিংমুখী হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের পড়ালেখা। অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীকে তাঁদের কাছে পড়তে চাপ দেন। পড়লে বেশি নম্বর দেন, প্রশ্ন বলে দেন। এতে শিক্ষার্থীদের হূদয়ের ওপর চাপ পড়ে। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সুযোগ থাকায় এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। এখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই চেষ্টা। এর বাস্তবায়ন করতে হবে।’
নীতিমালায় বলা হয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণীর শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন। এটি বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অনেক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিংয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবক ঐক্য ফোরাম গত বছরের শেষ দিকে আদালতে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কেন কোচিং বন্ধে পরিপত্র জারি করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে নীতিমালাটি করা হয়েছে।
নীতিমালা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের কেউ কেউ। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের বলব। তবে আমার মনে হয়, শিক্ষকেরা এটা না-ও মানতে পারেন।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের ভেতর অতিরিক্ত ক্লাস করার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই। প্রতি বিষয়ে মাসে ৩০০ টাকা করে রাখার সিদ্ধান্ত বেশিই মনে হয়েছে। কারণ, কোনো শিক্ষার্থী সব কটি বিষয় পড়লে এই টাকা অনেক হয়ে যাবে। তবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের না পড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়নি।’
No comments