সরল গরল-প্রধান বিচারপতি কিংবা প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ by মিজানুর রহমান খান
প্রধান বিচারপতি পদে বিচারপতি মো. আবদুল মতিনকে নিয়োগ করা হলে জ্যেষ্ঠতার নীতি রক্ষা পেত। কিন্তু আমরা মনে করি না যে শুধু জ্যেষ্ঠতার নীতি মেনে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাওয়া উচিত। জ্যেষ্ঠতার কথা বলে, আবার কখনো মেধার নামেও আমরা অনাচার দেখেছি। আইন ও বিচারমন্ত্রী শফিক আহমেদ সেদিন বললেন,
যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে। হঠাৎ ‘যোগ্যতম’ শব্দটির প্রয়োগ সন্দেহ জাগায়। গতকাল সেই সন্দেহ সত্যি হলো। যোগ্যতম কথাটি কোথাও সংজ্ঞায়িত নেই। এর কোনো রেওয়াজও নেই। শুধু ভালো রায় দিতে ও লিখতে পারা যোগ্যতা নয়, এর সঙ্গে উচ্চ নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত। আর যোগ্যতম যদি নিক্তি হতো, তাহলে বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে তাঁর স্বপদে দেখার কথা নয়।
বিচারপতি এম এ মতিনকেই আমরা নতুন প্রধান বিচারপতি পদে আশা করেছিলাম। এই পদ ছিল তাঁর প্রাপ্য। এখন শুধু তাঁকে নয়, দুজনকে ডিঙানো হলো। এটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ জানতে পারব না। বিচারপতি এম এ মতিনের অনেক রায়ের ব্যাপারে আমরা একমত না হতে পারি। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের অনেকের সঙ্গে একমত হতে পারি না। তাঁরা অনেকে স্মরণ করছেন যে তিনি জোট সরকারের আমলে বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছিলেন! সেটা কী রকম? বিচারালয় অঙ্গনে সভা-স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গলাবাজি করা, দলীয় নিশান দেখিয়ে নিজ নিশান ওড়ানোর সস্তা রাজনীতি সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আর বিরল নয়; বরং ছাত্রদল-ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মতো অবস্থা বিরাজমান। বিচারপতি আবদুল মতিন ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন; অবশ্য সেটাও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনুসরণে। কিন্তু মুশকিল হলো, ওই রায়ের সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তাদের সমর্থকদের তখন ওই রায় আরামদায়ক মনে হয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে ওই রায় কার্যকর করার মতো পরিবেশ সুপ্রিম কোর্ট ক্যাম্পাসে নেই। সুতরাং ওই রায় সংস্কৃতিগতভাবে অকার্যকর। সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি ও আওয়ামী-তরিকার আইনজীবীদের মৌতাত চলছে। এটা রায় দিয়ে ভাঙা যাবে না। আমরা অনেকটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লেজুড়বৃত্তি কখনো বন্ধ হলে তখন ওই রায় কার্যকর করার সময় আসবে; এর আগে নয়।
আপিল বিভাগে থাকার কথা ১১ জন বিচারক। আছেন ছয়জন। এ ঘটনায় বিচার বিভাগের প্রতি সরকারের অন্যায্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। জ্যেষ্ঠতম হলেন বিচারপতি এম এ মতিন। তাঁর পরেই বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তাঁরা উভয়ে নিয়োগ পান ১৯৯৬ সালের ১ জুন। তাঁদের অবসরে যাওয়ার তারিখ যথাক্রমে ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ ও ১৪ নভেম্বর ২০১১। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাবেন ১৭ মে ২০১১। আগে শোনা গিয়েছিল, বিচারপতি এম এ মতিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এখন আরেকটা হিসাব আছে। সেটা দেখা যাবে ২০১১ সালের মে মাসে।
বিচারপতি নাঈমকেও ডিঙানো হলো। চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা বাতিলে তাঁর ঐতিহাসিক রায় আছে। কেন তাঁকে ডিঙানো হলো? তাঁকে প্রধান বিচারপতি করার সুযোগ অবশ্য অঙ্কের হিসাবে শেষ হয়নি। বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গেলে বিচারপতি নাঈম দায়িত্বে থাকতে পারেন প্রায় ছয় মাস। আর তখন তিনিই হবেন সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টা। এই সরকারের আমলেই আমরা একটি চমক দেখেছি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ও তাঁর পূর্বসূরির মধ্যকার ডিঙানো-সমঝোতা। তাঁরা ‘যোগ্যতম’ বলেই এসব অঘটন ঘটেনি। কিন্তু সেটা বিচারপতি নাঈমের ক্ষেত্রে হবে না বলে অনেকেই ধরে নিতে চান। তাঁকে নিয়ে কী সমস্যা? তিনি বিএনপির নেতা ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহ আবদুল হান্নানের ভাই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি নাকি আইনজীবীর খাতায় (ওই সময়ে বিচারকের দায়িত্ব পালনকারীও অবশ্য প্রধান বিচারপতি হয়েছেন) নাম লেখান। এই যদি দোষ, তাহলে কেন তাঁকে আপিল বিভাগে নেওয়া হলো? উড়ো খবর পাই, শাসক দলের মনে তাঁকে নিয়ে যথেষ্ট খুঁতখুঁতানি। কিন্তু চক্ষুলজ্জা বলে কথা। জরুরি অবস্থার কঠিন সময়ে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে বহুল আলোচিত রায় দেন! শেখ হাসিনার আইনজীবীরা মামলার কোয়াশমেন্ট চাননি। তিনি তাঁর রায়ে সেই প্রতিকার দিয়েছিলেন। সে কারণে বিলম্বে হলেও আপিল বিভাগে যাওয়ার দরজা খুলে যায়। হাইকোর্ট বিভাগের অন্য জ্যেষ্ঠরা বহুদিন ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সে কারণেই বলি, আইনমন্ত্রীর ‘যোগ্যতম’ কথাটির রূপরঙ্গরস আমাদের বুঝতে হবে। এটা সময়ে সময়ে বদলায়।
যদি বিচারপতি মতিনকে প্রধান বিচারপতি করা হতো, তখন স্মরণ করা হতো তিনি ইনডেমনিটি বাতিল রায়ের অন্যতম লেখক ছিলেন। এখন তাঁকে ডিঙানো হলো। এখন হয়তো বলা হবে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিব্রত হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনী পাসের সময় একটি উদারতা কিন্তু দেখানো হলো। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ক্ষমতার ভাগ দিলেন। বাহাত্তরের সংবিধানমতে প্রধানমন্ত্রীর বাধ্যতামূলক পরামর্শে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান ছিল। সেই বিধান ছাঁটা হলো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমল। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে যাতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা না থাকে, সে জন্য ওই সংশোধনী আনা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাপরম্পরা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে সেটা সুফল দেয়নি। এমনকি আইনমন্ত্রী গতকাল তাঁর দপ্তরে আমাকে বেশ অবাক ও বিহ্বল করলেন। তিনি জানালেন, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদমতে আইন মন্ত্রণালয় পাঁচজনের নামের তালিকা-সংবলিত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বললাম, সেটা কেন? সংবিধান তো তা পাঠাতে বারণ করেছে। তবুও আইনমন্ত্রী জানালেন, বঙ্গভবনে সরাসরি ফাইল পাঠানোর নিয়ম নেই! আমার মত হলো, রুলস অব বিজনেসে তা লেখা থাকলে এটি আইনসিদ্ধ নয়। সেটা সংশোধন করতে হবে। বিধি সংবিধানকে খাটো করতে পারে না।
কোনো সন্দেহ নেই, নব্বইয়ের দশকের চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মান নিচে নেমে গেছে। সে কারণে আজ আর এ সমাজে কেউ ভাবে না যে রাষ্ট্রপতি নামের একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান আছে। সে কারণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে মাত্র একটি ক্ষেত্রে পুরো স্বাধীন করলেও তার যথার্থ প্রয়োগ আমরা দেখি না। রাষ্ট্রপতিরাও স্বাতন্ত্র্য বজায়ের ঝুঁকি নিতে চান না। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী দুই ধরনের শিক্ষা ও নজির সৃষ্টি করে গেছেন। এ ধারা একান্ত পাল্টাতে চাইলে নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা ব্যাপকভিত্তিক সাংবিধানিক সংস্কারের সপক্ষে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের ক্ষমতা ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা কথা বলা দরকার। নতুন নেতৃত্ব লাগবে। পাকিস্তানে সংবিধানের বড় সংস্কার তেমন কাজ দিচ্ছে না। আসিফ আলী জারদারিদের টেন পার্সেন্ট চরিত্র বড় বাধা।
কোনো সভ্য রাষ্ট্র জনগণের আস্থাভাজন থাকতে পারে না, যদি বিচার বিভাগীয় রায় শাসকবর্গীয় লোকদের ইচ্ছা পূরণ করে বলে প্রতীয়মান হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর কারণে বিচার বিভাগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আজ শুধু প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নয়, সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগেরও দিন। রাজনীতিকেরা রাজনীতিকে দূরে রাখলেন। তাই তাঁরা সংসদকে ৯০ দিনের জন্য উধাও করলেন। আনলেন তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা। এই অসুস্থ অনুশীলন তাঁদের সেই কুঁজো লোকটার মতো করেছে। হতভাগা লোকটা কুঁজ ফেলে দিলে প্রাণ হারাবে। তাই কুঁজ নিয়ে তাঁকে বাঁচতে হবে। তদুপরি বলি, কুঁজ নিয়ে বাঁচুন। তবে বিচার বিভাগকে ক্ষমা করুন। বিচারকদের প্রধান উপদেষ্টা বানানোর বিধানটুকু বিলোপ করুন।
বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হলেন। এর সঙ্গে সরকার এখন একটি ঘোষণা দিতে পারে যে প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারকদের নিয়োগ-প্রথা বিলোপ করা হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবশ্যই রাখা হবে। আমরা কখনো আম-ছালা দুটোই খোয়ানোর আশঙ্কা করি। ভাইমার (জার্মানি) নামে একটি প্রজাতন্ত্র ছিল। সে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ভেঙে পড়েছিল। তাই রাষ্ট্র টেকেনি।
বিএনপি কি নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সস্তা রাজনীতি করবে? বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। উপরন্তু তিনি খুনি ফারুকের ভায়রা ভাই ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষে তাঁকে মানা কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি বিচারক হিসেবে দক্ষ ছিলেন। তাঁর সুনাম কম ছিল না। বিএনপি নিশ্চয় সেটা হিসাবে রেখেছিল। তাই তারা অঙ্ক কষে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনে। বিচারকদের বয়স দুই বছর বাড়ায়। আর তাতে বিচারপতি কে এম হাসান প্রধান উপদেষ্টা পদে ফিট হন। তেমনি এখন বিচারপতি খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করা হলো। এখন অঙ্ক কষা সম্ভব, তিনি হতে পারেন আগামী নির্বাচনের প্রধান উপদেষ্টা। বিচারপতি মতিন ও বিচারপতি নাঈম বাদ পড়লেন। এর পরে যে দুজন আপিল বিভাগে আছেন এবং হাইকোর্টের শীর্ষ চারজনের যাঁকেই পরবর্তী প্রধান করা হোক, তাঁরা ২০১৫ সালের আগে অবসরে যাবেন না।
আমরা মনে রাখব, বিচারপতি কে এম হাসানের এমন কোনো সাধারণ কিংবা রাজনৈতিক রায় ছিল না, যাকে ইস্যু করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের এমন একাধিক ‘রাজনৈতিক রায়’ আছে। পঞ্চম সংশোধনী তিনি শুধু বাতিল করেননি, ইংল্যান্ডের স্বৈরশাসক জেনারেল ক্রমওয়েলের সঙ্গে জেনারেল জিয়ার তুলনা করেছেন। ক্রমওয়েলের মরণোত্তর বিচার হয়েছিল। তাই পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার হতে পারে, তারও একটা আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে ওই রায়ে। জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মিথও ভেঙেছেন তিনি। এসব রায়ের চেতনার পুরোটা এবং অধিকাংশ পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তাঁর রায়গুলো দলীয়ভাবে বিবেচনা করা উচিত নয় বলে মনে করি। কিন্তু এক-এগারোর ঝুঁকি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কে এম হাসানকে নাকচ করতে ছাড়েনি। তিনি একদা বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, সে কথা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করেছে। এখন তার চেয়ে বড় সুযোগ পেয়েও তাদের প্রতিপক্ষ তা হাতছাড়া করবে, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে বিএনপিপন্থীরা। তাঁরা শিগগিরই কোর্ট বয়কটের মতো অবস্থায় যাবেন না। না গেলেও আন্দোলন বেগবান হলে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য হবে। তখন তাঁরা উঠতে-বসতে এই নিয়োগের শাপান্ত করতে ছাড়বেন না। এবং তখন সেটা এই বিভক্ত সমাজে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে।
সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে সস্তা স্লোগান ও দলবাজি তীব্র হবে। আর সেটা বন্ধে বিচারপতি মতিনের সেই ‘বিএনপিপন্থী’ রায় তখন নব মাহাত্ম্যে হয়তো ধরা দেবে আওয়ামী আইনজীবীদের কাছে। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। এবারে শুধু ভাঙচুর, বিচারকদের ধর্মঘট ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের মতো কাণ্ডকীর্তির মধ্যে পরিস্থিতি সীমিত থাকবে তো?
প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সাফল্য আমরা কামনা করি। তাঁর সামনে অনেক কাজ। তবে বড় চ্যালেঞ্জ বিচারক নিয়োগের ক্ষয়িষ্ণু প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্যতা আনা। সংবিধানে জুডিশিয়াল কমিশন আনতে হবে। উচ্চ আদালতে যাঁকেই যে পদে নিয়োগ করা হোক, বিবেচনাধীন নামগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রকাশ করতে হবে। জনগণের সমালোচনা গ্রহণ ও তা পরীক্ষা করতে হবে। চুপকে চুপকে অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। শপথ পাঠ করিয়ে এখন মানুষকে চমকে দেওয়া হচ্ছে। এই যে রেওয়াজ চলছে, সেটা আমার কাছে সামরিক ফরমানের মতো মনে হয়। উচ্চ আদালতের পরিবেশদূষণ ঠেকাতে বিচারপতি খায়রুল হকের একটি রায় ভরসা। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা ইত্যাদি পদে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়োগ-প্রথা কার্যত বাতিল করেছেন। আমরা সেই রায় কার্যকর দেখতে চাই। কারণ, আমরা এ ক্ষেত্রে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু পরিহাস হলো, সংবিধান সংশোধন কমিটির আলোচনা কিংবা তাদের নথিপত্রের কোথাও আমাদের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির সেই নন্দিত রায়ের কোনো উল্লেখ দেখি না।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
বিচারপতি এম এ মতিনকেই আমরা নতুন প্রধান বিচারপতি পদে আশা করেছিলাম। এই পদ ছিল তাঁর প্রাপ্য। এখন শুধু তাঁকে নয়, দুজনকে ডিঙানো হলো। এটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ জানতে পারব না। বিচারপতি এম এ মতিনের অনেক রায়ের ব্যাপারে আমরা একমত না হতে পারি। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের অনেকের সঙ্গে একমত হতে পারি না। তাঁরা অনেকে স্মরণ করছেন যে তিনি জোট সরকারের আমলে বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছিলেন! সেটা কী রকম? বিচারালয় অঙ্গনে সভা-স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গলাবাজি করা, দলীয় নিশান দেখিয়ে নিজ নিশান ওড়ানোর সস্তা রাজনীতি সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আর বিরল নয়; বরং ছাত্রদল-ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মতো অবস্থা বিরাজমান। বিচারপতি আবদুল মতিন ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন; অবশ্য সেটাও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনুসরণে। কিন্তু মুশকিল হলো, ওই রায়ের সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তাদের সমর্থকদের তখন ওই রায় আরামদায়ক মনে হয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে ওই রায় কার্যকর করার মতো পরিবেশ সুপ্রিম কোর্ট ক্যাম্পাসে নেই। সুতরাং ওই রায় সংস্কৃতিগতভাবে অকার্যকর। সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি ও আওয়ামী-তরিকার আইনজীবীদের মৌতাত চলছে। এটা রায় দিয়ে ভাঙা যাবে না। আমরা অনেকটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লেজুড়বৃত্তি কখনো বন্ধ হলে তখন ওই রায় কার্যকর করার সময় আসবে; এর আগে নয়।
আপিল বিভাগে থাকার কথা ১১ জন বিচারক। আছেন ছয়জন। এ ঘটনায় বিচার বিভাগের প্রতি সরকারের অন্যায্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। জ্যেষ্ঠতম হলেন বিচারপতি এম এ মতিন। তাঁর পরেই বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তাঁরা উভয়ে নিয়োগ পান ১৯৯৬ সালের ১ জুন। তাঁদের অবসরে যাওয়ার তারিখ যথাক্রমে ২৫ ডিসেম্বর ২০১০ ও ১৪ নভেম্বর ২০১১। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাবেন ১৭ মে ২০১১। আগে শোনা গিয়েছিল, বিচারপতি এম এ মতিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এখন আরেকটা হিসাব আছে। সেটা দেখা যাবে ২০১১ সালের মে মাসে।
বিচারপতি নাঈমকেও ডিঙানো হলো। চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা বাতিলে তাঁর ঐতিহাসিক রায় আছে। কেন তাঁকে ডিঙানো হলো? তাঁকে প্রধান বিচারপতি করার সুযোগ অবশ্য অঙ্কের হিসাবে শেষ হয়নি। বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গেলে বিচারপতি নাঈম দায়িত্বে থাকতে পারেন প্রায় ছয় মাস। আর তখন তিনিই হবেন সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টা। এই সরকারের আমলেই আমরা একটি চমক দেখেছি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ও তাঁর পূর্বসূরির মধ্যকার ডিঙানো-সমঝোতা। তাঁরা ‘যোগ্যতম’ বলেই এসব অঘটন ঘটেনি। কিন্তু সেটা বিচারপতি নাঈমের ক্ষেত্রে হবে না বলে অনেকেই ধরে নিতে চান। তাঁকে নিয়ে কী সমস্যা? তিনি বিএনপির নেতা ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহ আবদুল হান্নানের ভাই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি নাকি আইনজীবীর খাতায় (ওই সময়ে বিচারকের দায়িত্ব পালনকারীও অবশ্য প্রধান বিচারপতি হয়েছেন) নাম লেখান। এই যদি দোষ, তাহলে কেন তাঁকে আপিল বিভাগে নেওয়া হলো? উড়ো খবর পাই, শাসক দলের মনে তাঁকে নিয়ে যথেষ্ট খুঁতখুঁতানি। কিন্তু চক্ষুলজ্জা বলে কথা। জরুরি অবস্থার কঠিন সময়ে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে বহুল আলোচিত রায় দেন! শেখ হাসিনার আইনজীবীরা মামলার কোয়াশমেন্ট চাননি। তিনি তাঁর রায়ে সেই প্রতিকার দিয়েছিলেন। সে কারণে বিলম্বে হলেও আপিল বিভাগে যাওয়ার দরজা খুলে যায়। হাইকোর্ট বিভাগের অন্য জ্যেষ্ঠরা বহুদিন ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সে কারণেই বলি, আইনমন্ত্রীর ‘যোগ্যতম’ কথাটির রূপরঙ্গরস আমাদের বুঝতে হবে। এটা সময়ে সময়ে বদলায়।
যদি বিচারপতি মতিনকে প্রধান বিচারপতি করা হতো, তখন স্মরণ করা হতো তিনি ইনডেমনিটি বাতিল রায়ের অন্যতম লেখক ছিলেন। এখন তাঁকে ডিঙানো হলো। এখন হয়তো বলা হবে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিব্রত হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনী পাসের সময় একটি উদারতা কিন্তু দেখানো হলো। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ক্ষমতার ভাগ দিলেন। বাহাত্তরের সংবিধানমতে প্রধানমন্ত্রীর বাধ্যতামূলক পরামর্শে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান ছিল। সেই বিধান ছাঁটা হলো। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমল। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে যাতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা না থাকে, সে জন্য ওই সংশোধনী আনা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাপরম্পরা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে সেটা সুফল দেয়নি। এমনকি আইনমন্ত্রী গতকাল তাঁর দপ্তরে আমাকে বেশ অবাক ও বিহ্বল করলেন। তিনি জানালেন, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদমতে আইন মন্ত্রণালয় পাঁচজনের নামের তালিকা-সংবলিত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বললাম, সেটা কেন? সংবিধান তো তা পাঠাতে বারণ করেছে। তবুও আইনমন্ত্রী জানালেন, বঙ্গভবনে সরাসরি ফাইল পাঠানোর নিয়ম নেই! আমার মত হলো, রুলস অব বিজনেসে তা লেখা থাকলে এটি আইনসিদ্ধ নয়। সেটা সংশোধন করতে হবে। বিধি সংবিধানকে খাটো করতে পারে না।
কোনো সন্দেহ নেই, নব্বইয়ের দশকের চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মান নিচে নেমে গেছে। সে কারণে আজ আর এ সমাজে কেউ ভাবে না যে রাষ্ট্রপতি নামের একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান আছে। সে কারণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে মাত্র একটি ক্ষেত্রে পুরো স্বাধীন করলেও তার যথার্থ প্রয়োগ আমরা দেখি না। রাষ্ট্রপতিরাও স্বাতন্ত্র্য বজায়ের ঝুঁকি নিতে চান না। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী দুই ধরনের শিক্ষা ও নজির সৃষ্টি করে গেছেন। এ ধারা একান্ত পাল্টাতে চাইলে নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা ব্যাপকভিত্তিক সাংবিধানিক সংস্কারের সপক্ষে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের ক্ষমতা ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা কথা বলা দরকার। নতুন নেতৃত্ব লাগবে। পাকিস্তানে সংবিধানের বড় সংস্কার তেমন কাজ দিচ্ছে না। আসিফ আলী জারদারিদের টেন পার্সেন্ট চরিত্র বড় বাধা।
কোনো সভ্য রাষ্ট্র জনগণের আস্থাভাজন থাকতে পারে না, যদি বিচার বিভাগীয় রায় শাসকবর্গীয় লোকদের ইচ্ছা পূরণ করে বলে প্রতীয়মান হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর কারণে বিচার বিভাগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আজ শুধু প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নয়, সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগেরও দিন। রাজনীতিকেরা রাজনীতিকে দূরে রাখলেন। তাই তাঁরা সংসদকে ৯০ দিনের জন্য উধাও করলেন। আনলেন তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা। এই অসুস্থ অনুশীলন তাঁদের সেই কুঁজো লোকটার মতো করেছে। হতভাগা লোকটা কুঁজ ফেলে দিলে প্রাণ হারাবে। তাই কুঁজ নিয়ে তাঁকে বাঁচতে হবে। তদুপরি বলি, কুঁজ নিয়ে বাঁচুন। তবে বিচার বিভাগকে ক্ষমা করুন। বিচারকদের প্রধান উপদেষ্টা বানানোর বিধানটুকু বিলোপ করুন।
বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হলেন। এর সঙ্গে সরকার এখন একটি ঘোষণা দিতে পারে যে প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারকদের নিয়োগ-প্রথা বিলোপ করা হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবশ্যই রাখা হবে। আমরা কখনো আম-ছালা দুটোই খোয়ানোর আশঙ্কা করি। ভাইমার (জার্মানি) নামে একটি প্রজাতন্ত্র ছিল। সে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ভেঙে পড়েছিল। তাই রাষ্ট্র টেকেনি।
বিএনপি কি নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সস্তা রাজনীতি করবে? বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। উপরন্তু তিনি খুনি ফারুকের ভায়রা ভাই ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষে তাঁকে মানা কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি বিচারক হিসেবে দক্ষ ছিলেন। তাঁর সুনাম কম ছিল না। বিএনপি নিশ্চয় সেটা হিসাবে রেখেছিল। তাই তারা অঙ্ক কষে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনে। বিচারকদের বয়স দুই বছর বাড়ায়। আর তাতে বিচারপতি কে এম হাসান প্রধান উপদেষ্টা পদে ফিট হন। তেমনি এখন বিচারপতি খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করা হলো। এখন অঙ্ক কষা সম্ভব, তিনি হতে পারেন আগামী নির্বাচনের প্রধান উপদেষ্টা। বিচারপতি মতিন ও বিচারপতি নাঈম বাদ পড়লেন। এর পরে যে দুজন আপিল বিভাগে আছেন এবং হাইকোর্টের শীর্ষ চারজনের যাঁকেই পরবর্তী প্রধান করা হোক, তাঁরা ২০১৫ সালের আগে অবসরে যাবেন না।
আমরা মনে রাখব, বিচারপতি কে এম হাসানের এমন কোনো সাধারণ কিংবা রাজনৈতিক রায় ছিল না, যাকে ইস্যু করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের এমন একাধিক ‘রাজনৈতিক রায়’ আছে। পঞ্চম সংশোধনী তিনি শুধু বাতিল করেননি, ইংল্যান্ডের স্বৈরশাসক জেনারেল ক্রমওয়েলের সঙ্গে জেনারেল জিয়ার তুলনা করেছেন। ক্রমওয়েলের মরণোত্তর বিচার হয়েছিল। তাই পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার হতে পারে, তারও একটা আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে ওই রায়ে। জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মিথও ভেঙেছেন তিনি। এসব রায়ের চেতনার পুরোটা এবং অধিকাংশ পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তাঁর রায়গুলো দলীয়ভাবে বিবেচনা করা উচিত নয় বলে মনে করি। কিন্তু এক-এগারোর ঝুঁকি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কে এম হাসানকে নাকচ করতে ছাড়েনি। তিনি একদা বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, সে কথা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করেছে। এখন তার চেয়ে বড় সুযোগ পেয়েও তাদের প্রতিপক্ষ তা হাতছাড়া করবে, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে বিএনপিপন্থীরা। তাঁরা শিগগিরই কোর্ট বয়কটের মতো অবস্থায় যাবেন না। না গেলেও আন্দোলন বেগবান হলে স্বার্থের সংঘাত অনিবার্য হবে। তখন তাঁরা উঠতে-বসতে এই নিয়োগের শাপান্ত করতে ছাড়বেন না। এবং তখন সেটা এই বিভক্ত সমাজে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে।
সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে সস্তা স্লোগান ও দলবাজি তীব্র হবে। আর সেটা বন্ধে বিচারপতি মতিনের সেই ‘বিএনপিপন্থী’ রায় তখন নব মাহাত্ম্যে হয়তো ধরা দেবে আওয়ামী আইনজীবীদের কাছে। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। এবারে শুধু ভাঙচুর, বিচারকদের ধর্মঘট ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের মতো কাণ্ডকীর্তির মধ্যে পরিস্থিতি সীমিত থাকবে তো?
প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সাফল্য আমরা কামনা করি। তাঁর সামনে অনেক কাজ। তবে বড় চ্যালেঞ্জ বিচারক নিয়োগের ক্ষয়িষ্ণু প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্যতা আনা। সংবিধানে জুডিশিয়াল কমিশন আনতে হবে। উচ্চ আদালতে যাঁকেই যে পদে নিয়োগ করা হোক, বিবেচনাধীন নামগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রকাশ করতে হবে। জনগণের সমালোচনা গ্রহণ ও তা পরীক্ষা করতে হবে। চুপকে চুপকে অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। শপথ পাঠ করিয়ে এখন মানুষকে চমকে দেওয়া হচ্ছে। এই যে রেওয়াজ চলছে, সেটা আমার কাছে সামরিক ফরমানের মতো মনে হয়। উচ্চ আদালতের পরিবেশদূষণ ঠেকাতে বিচারপতি খায়রুল হকের একটি রায় ভরসা। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা ইত্যাদি পদে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়োগ-প্রথা কার্যত বাতিল করেছেন। আমরা সেই রায় কার্যকর দেখতে চাই। কারণ, আমরা এ ক্ষেত্রে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু পরিহাস হলো, সংবিধান সংশোধন কমিটির আলোচনা কিংবা তাদের নথিপত্রের কোথাও আমাদের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির সেই নন্দিত রায়ের কোনো উল্লেখ দেখি না।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments