এখানে রাজনৈতিক সমাবেশে সহযোগিতার সংস্কৃতি নেই by ড. শওকত আরা হোসেন

১২ মার্চের বিএনপি আহূত মহাসমাবেশে সরকারের সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা করার খুব একটা সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের সমাবেশে সহযোগিতা করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে নেই।


বিগত দিনেও কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে অথবা ক্ষমতাসীন কোনো দল বা জোটের মধ্যে বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার মনোভাব দেখা যায়নি। এখানে বিরোধী দলকেই অধিক দায়িত্বের পরিচয় দিতে হবে। স্বাভাবিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের বটে, কিন্তু মহাসমাবেশ ঘিরে যে আয়োজন তার ব্যবস্থা বিরোধী দলকেই করতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও মানসিকতা ত্যাগ করে লক্ষ রাখতে হবে যেন জনদুর্ভোগ বেড়ে না যায়, মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধিত না হয়। এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
বিরোধী দলের ঢাকা চলো কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে। তখন থেকেই তাদের একটি প্রস্তুতি আছে। কথা ঠিক যে এ সমাবেশ সামনে রেখে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কিত হওয়াটা স্বাভাবিক। আমাদের দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে গঠনমূলক কোনো ফলাফল আসে না, বরং সমাজে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এ অস্থিরতা যেন জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে এবং অস্থির আবহ যেন প্রলম্বিত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন আছে। জনগণ সব কিছুর ঊধর্ে্ব নিরাপদে এবং শান্তিতে বসবাস করতে চায়। যে রাজনৈতিক কর্মসূচি জনগণের জন্য তা যদি দুর্ভোগের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে তাহলে সেই কর্মসূচির কোনো রাজনৈতিক মূল্যও থাকে না। গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশে ঠিক সেভাবে বিরোধী দল থাকে না। বিরোধী দলের একটি প্রতিশ্রুতি আছে দেশের জনগণের ওপর। কিন্তু নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে লাগাতার সংসদ বর্জন করে যাওয়াটা তো কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। সংসদ উপেক্ষা করে মহাসমাবেশ কোনো বিশেষ গণতন্ত্র এনে দিতে পারে না। এ ধরনের সমাবেশ শুধু সহিংসতাই এনে দিতে পারে, বিদ্যমান নূ্যনতম গণতন্ত্র চর্চাটাকেই ব্যাহত করতে পারে। সুতরাং এটুকু জোর দিয়ে বলা যায়, বিরোধী দল বিএনপির ডাকা ১২ মার্চের সমাবেশ গণতন্ত্রকে সুরক্ষা অথবা গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কোনো সহায়ক কর্মসূচি নয়। এটি যতটা না দেশের গণতন্ত্র বিকাশের সমাবেশ, এর চেয়ে বরং দলীয় কর্মী সমাবেশ বলাই সংগত মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.