খোলা হাওয়া-অনেকগুলো কুড়াল, দুটোমাত্র পা by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

আমার পড়া সব সাহিত্যেই দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, ফলে মায়ের মতো দেশেরও পা যে দুটি, সে রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও অযৌক্তিক নয়। ওই দুটি পায়ের ওপর ভর করে দেশমাতৃকা দাঁড়ান এবং তাঁর কোলে-কাঁখে আদরের সন্তানদের বয়ে নিয়ে বেড়ান। দেশমাতৃকার জন্য পা-জোড়া তাই মূল্যবান; আরও মূল্যবান তাঁর সন্তানদের জন্য।


উন্নত অর্থনীতি-রাজনীতির দেশে সন্তানেরা দেশমাতৃকার পদসেবা করে; তাঁর পায়ে যাতে কোনো চোট না লাগে, সেদিকে তীক্ষ দৃষ্টি রাখে। তারা জানে, দেশমাতৃকার পা যত শক্ত হবে, সবল হবে, তত তাদের নিজেদের সুরক্ষা; তত তাদের তেজিভাব, সফল দুনিয়াদারি।
অনুন্নত অর্থনীতি-রাজনীতির দেশে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন, কোনো কোনো দেশে একেবারে উল্টো। দেশমাতৃকার স্বাস্থ্য ভগ্ন হলে তাঁর পা যে টলবে, সে তো নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাঁর সন্তানেরা তখন থাকে বিপদে, তাদের সামনে থাকে অনিশ্চয়তার অন্ধকার। তার পরও অনেক সন্তান মায়ের পদসেবা করে, তাঁকে কিছুটা হলেও শক্তি জোগায়। তাতে তাঁর রুগ্ণতা কিছুটা কাটে। কিন্তু কোনো কোনো দেশে প্রকৃতির কোন খেয়ালে, তা শুধু অবোধ্য প্রকৃতিই বলতে পারে—সন্তানেরা দেশমাতৃকার পদসেবা দূরে থাকুক, তাঁর পদযুগলকে কুড়াল মেরে রক্তাক্ত করে তাঁকে অচল করে দেয়। দিয়ে পরম শান্তি পায়। ভাঙা-কাটা-বিকল পা নিয়ে দেশমাতৃকা মাটিতে গড়াগড়ি দেন, আর কুড়াল হাতে সন্তানেরা উল্লাস করে, আরও আঘাতের জন্য কুড়াল উঁচিয়ে ধরে।
তারা কেন এই মাতৃঘাতী এবং আত্মঘাতী কাজে নামে এবং নেমে তাদের অন্ধ আক্রোশ মেটায় এবং কী সেই আক্রোশ, তার কারণ ব্যাখ্যা করা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ক্ষমতার অতীত। ওই মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করবেন, তেমন ফ্রয়েড সাহেব এখনো জন্মাননি। জন্মালেও এই ফ্রয়েড-উত্তর মনস্তত্ত্বের যুগে তিনি কতটা সফল হবেন, কে বলতে পারে।
ফলে ব্যাখ্যাহীন, যুক্তিহীন মাতৃঘাতের দৃশ্যটাই শুধু আমরা দেখে যেতে পারি, এর কারণ ব্যাখ্যা আমাদের জ্ঞানে কুলায় না।

২.
দেশের পায়ে কুড়াল মারার ঘটনাটি নিয়মিতই ঘটছে বাংলাদেশে এবং তাতে শামিল হচ্ছেন অনেকেই। জেনে, না-জেনে; জ্ঞাতসারে, অজ্ঞাতসারে। তবে যত দিন যাচ্ছে, জেনেবুঝে কুড়াল মারার দলটি সংখ্যায় বাড়ছে। একজন অর্থনীতিবিদ, একজন শিক্ষক, একজন ব্যারিস্টার তথা আইনের মানুষ অথবা একজন প্রকৌশলী কেন বুঝবেন না, দেশের পায়ে কুড়াল মারাটা আত্মঘাতী? তাঁরা তো যুক্তি কী, তা জানেন; বুদ্ধিও তাঁদের তীক্ষ, তাঁরা নিজেদের ব্যাপারে যুক্তিতর্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন, নিজেদের নিরাপত্তা ষোলোআনাই নিশ্চিত করে চলেন। তাহলে দেশের ব্যাপারে কেন যুক্তি ভুলে যান, দূরের লাভের আশায় বর্তমানকে বিষিয়ে তোলেন? একটা মন্ত্রিত্ব, প্রতিমন্ত্রিত্ব, ক্ষমতার ছোটখাটো একটা আসন, ঢাকায় একটি প্লট-ফ্ল্যাট, শুল্কমুুক্ত গাড়ি, ভিআইপি স্টিকার, মাগনা বিদেশ ভ্রমণ অথবা নিছক নেতাগিরির লোভে কেন দেশের পায়ে কুড়াল মেরে দেশটাকে বিকলাঙ্গ করে দেন?
ব্যাপারটা দিনে দিনে বোধের অগম্য হচ্ছে। কিছুদিন পর তাঁরাও হয়তো কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। শুধু কুড়াল চালিয়ে যাবেন। এবং অনেক নতুন অনুসারীকে উদ্বুদ্ধ করবেন কুড়াল চালাতে।

৩.
মাত্র আড়াই বছর আগে একটা নির্বাচনে পরিবর্তনের পক্ষে এক বিশাল ম্যান্ডেট জমা পড়েছিল। অসংখ্য তরুণ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছিল, যে পরিবর্তনের প্রথম কথাটাই ছিল দেশের পায়ে আর কুঠার হানা নয়। দেশমাতৃকার পদসেবা করার, তাঁকে শক্ত দুই পায়ের ওপর দাঁড় করানোর একটা নতুন চর্চা, নতুন সংস্কৃতি চেয়েছিল সেই তরুণেরা। তাদের বিশ্বাস ছিল, দুটি বড় দলেই যেহেতু অর্থনীতিবিদ-শিক্ষক-ব্যারিস্টার-প্রকৌশলী রয়েছেন, যাঁরা সাংসদ হয়েছেন অথবা দল দুটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, পরিবর্তনের ম্যান্ডেটটি তাঁরা গ্রহণ করবেন; যেহেতু তাঁরা যুক্তি বোঝেন, ভালোমন্দ বিষয়ে তাঁদের চুলচেরা বিশ্লেষণ আছে এবং তাঁরা দেশকে নিয়ে ভাবেন। নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হয়েছিলেন, তাঁরা যেমন পরিবর্তনের স্লোগান দিয়েছিলেন, যাঁরা হেরেছিলেন, তাঁরাও। এবং শুধু তরুণ কেন, আমাদের মতো ঘরপোড়া গরুরাও আনন্দিত একটি প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়েছিলাম সামনের দিনগুলোর দিকে। তরুণ-প্রবীণ সবাই আমরা ভেবেছিলাম, বাংলাদেশের প্রতি পরশুরামরা এবার উদ্যত কুঠার নামিয়ে ঘরে ফিরে যাবে, দেশমাতৃকার পায়ে উঠে দাঁড়ানোর-ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি আসবে এবং একসময় সবল-প্রবল, পদশক্তি-জীবনশক্তি নিয়ে দেশটি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তরুণেরা সব সময় স্বপ্ন দেখে, তাদের প্রত্যাশাও তাদের সব আকাঙ্ক্ষার যোগফলের সমান। আমাদের মতো ঘরপোড়াদের প্রত্যাশা সীমিত, তবু স্বীকার করতে লজ্জা নেই, সিঁদুরে মেঘকে সিঁদুরে মেঘ ভেবেই আমরাও প্রত্যাশার একটা ছোটখাটো ডালি সাজিয়েছিলাম। ডালি যে আদৌ আমরা সাজিয়েছিলাম, তার পেছনে ছিল ১/১১-এর পরের ভয়াবহ দিনগুলোর অভিজ্ঞতা। রাজনীতিকদের (অনেক ক্ষেত্রে সস্ত্রীক) কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নেওয়া হচ্ছে ঘর থেকে, তুখোড় বক্তৃতাবান ব্যারিস্টার আর ডাকসাইটে মাঠকাঁপানো নেতা, পরাক্রমশালী গডফাদার আর ঝানু ব্যবসায়ী, সবাই প্রতাপ ভুলে ঠোঁটে চাবি মেরে চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে ছুটছেন, আর মধ্যরাতে চোখ বেঁধে গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের। এ রকম দৃশ্য ছিল ওই দুই বছরের নৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বড়-ছোট সব দলের ছিল, তাই সম্মুখমুখী চিন্তা, অন্তত নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে সে রকমই তুলে ধরা হয়েছিল। বড় দুটি দলের নির্বাচনী মেনিফেস্টো আমি জোগাড় করে খুব মন দিয়ে পড়েছিলাম। স্বীকার করতেই হবে, এ দুটি ছিল খুব উঁচুদরের সাহিত্যকর্ম। মহৎ সাহিত্য পড়ে আমরা যেমন গভীর একটা পুলক বোধ করি, অজান্তেই অনুপ্রাণিত হই, এ দুটি পুস্তিকা পড়ে আমিও তেমনি হয়েছিলাম। তবে কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক মিশেলের জন্য আমি এগুলোকে কল্পবিজ্ঞান শ্রেণীতেই ফেলেছিলাম। আমার মতে, ২০০৯ সালের বিশ্ব শ্রেষ্ঠ কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পুরস্কারটি এ দুটি মেনিফেস্টোর পাওয়া উচিত ছিল। যাকগে, সে কথা।
তরুণ-প্রবীণ মিলিয়ে যে কয়টি বিষয়ে আমরা আশায় কোমর বেঁধেছিলাম, যেগুলোর একটা হ্রস্ব তালিকা করলে এই দাঁড়াবে:
—দেশে প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা হবে; জাতীয় সংসদ হবে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র।
—রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর গণতন্ত্রচর্চা হবে; দুটি বড় দল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আলাপ-আলোচনা করবে, একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
—সহিংস রাজনীতির অবসান হবে; এবং সবচেয়ে বড় কথা, হরতালের দিন শেষ হবে।
—সহিংস ও লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির (এক লেজুড়বৃত্তির পেশাজীবী সংগঠনগুলোর) অবসান হবে।
—দুর্নীতির মহামারিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, নির্মূল করা সম্ভব না হলেও।
—যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
আগেই বলেছি, তরুণদের তালিকাটা ছিল আরও দীর্ঘ, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু কেতাবে নয়, গোয়ালেও চেয়েছে; চাকরি ও সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা চেয়েছে, মাদকের ছোবল থেকে মুক্তি চেয়েছে, শিক্ষার অধিকার চেয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটা দেশে কোনো সরকারই পাঁচ বছরে যা দিতে পারবে না, তারা তাও চেয়েছে। অন্য কোনো দেশ হলে তাদের এই চাওয়াটাকে সম্মান জানিয়ে সরকার তাদের ইচ্ছাপূরণে নেমে যেত। এবং সরকারের সঙ্গে সহযোগীর ভূমিকায় থাকত বিরোধী দল। কিন্তু দেশটি বাংলাদেশ—দেশ ও মায়ের পায়ে কুড়াল মারার কৃতিত্বে গর্বিত বাংলাদেশ। এ দেশে একটার পর একটা অঘটন ঘটিয়ে সরকার ও বিরোধী দল শুধু দেশের নয়, নিজেদের পায়েও কুড়াল মারে। আর তাদের যুব-ছাত্র-শিক্ষক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়। সরকারের কোনো বাহিনী ১৭ বছরের একটি ছেলের পেছনে লাগলেও ওই সংগঠনগুলো (এমনকি শিক্ষক সংগঠনগুলোও) কোনো প্রতিবাদ করে না; কোনো নেত্রীর পুত্রের দুর্নীতি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে তাঁকে দোষী করলেও নেত্রীর সহযোগী শিক্ষক (ও পেশাদার) সংগঠন একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করে কর্মসূচি দেয়। সত্যিই কী বিচিত্র এই পা-কাটা পড়া দেশ!
নির্বাচনের আড়াই বছর পর দেখা যাচ্ছে, দেশমাতৃকার পায়ে কুড়াল পড়ছেই। এই কুড়াল মারার যে কিছু পূর্বশর্ত আছে—অন্ধ ও প্রতিকারহীন আক্রোশ, বিবেকহীনতা, দেশের প্রতি সামান্য ভালোবাসা না থাকা, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে (ব্যক্তিগত ৮০ ও দলীয় ২০ শতাংশ) হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যাওয়া—এসবই পূর্ণোদ্যমে এ দেশে বিরাজমান। নির্বাচনের পর সংসদে গেল না বিরোধী দল। তাদের দাবি, তারা শিশু, সংসদে তাদের মুখ সরকারি দল হাত দিয়ে চেপে রাখবে, ফলে রাজপথই উত্তম। সরকারও চলছে সরকারের নিজের মতো করে। বিরোধী দলের সঙ্গে কথাবার্তা বলার আগ্রহ সামান্যই—পঞ্চম সংশোধনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করার মতো সিদ্ধান্ত তারা নিল একতরফাভাবে। দরজায় তালা লাগিয়ে তারা বলল, বিরোধীরা তো আসে না। বিরোধীরাও কুড়াল হাতে প্রস্তুত। কুড়াল দিয়ে ওই তালা তারা ভাঙবে না—না, তা করলে তো আবার ভেতরে যেতে হয়। তারা বরং দেশমাতৃকার পায়ে চালাল হরতালের কুড়াল। বিরোধী এক বড় নেতা বললেন, হরতালের কী দেখেছেন, ঈদটা যাক, তারপর দেখবেন। অর্থাৎ, দেশের পায়ে এখন তো সবে একটা-দুটা কোপ দিচ্ছি, যখন কুড়ালটা হাড্ডি ভেঙে পা-টা আলাদা করে ফেলবে, তখন বুঝবেন, কুড়াল মারা কাকে বলে।
ক্রমাগত হরতালে দেশ রক্তাক্ত হয় না—ওই নেতার পাঁচ বছরের নাতনিটাও তা বলবে না, এবং সে জিব কেটে বলবে, কী যে বলেন! কিন্তু নেতা তা স্বীকার করবেন না। নেতা ও নেত্রীরা বরং বলবেন, হরতালে হরতালে ওদের টেনে নামাব।
তারপর?
তারপর আমরা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হব, ভিআইপি-ভিভিআইপি হব, শিক্ষক নেতারা ডিসি-প্রক্টর (অথবা শিক্ষা উপদেষ্টা-প্রতিমন্ত্রী) হবেন। আমাদের ওপর যত মিথ্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা ঝুলছে, সব তুলে নেওয়া হবে। তারপর আমরা আমাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো অনুযায়ী কাজ করে দেশটাকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেব।
তা ওরা তখন কী করবে?—আমরা ঘরপোড়ারা ভীরু প্রশ্ন করব।
ওদের জনগণ ইতিহাসের ভাগাড়ে ফেলে দেবে। ওদের বিচার হবে, কঠিন সাজা হবে, সব ষড়যন্ত্রের যোগ্য উত্তর তারা পাবে।
যদিও ঘরপোড়ারা জানি, নতুন সরকারের এক বছরও যাবে না, আবার হরতাল শুরু হবে। কারণ, তাদের কুড়ালে গুরুতর জখম অথবা কাটা-পড়া পায়ের দেশকে তারা টেনে তুলতে পারবে না। তা ছাড়া তারাও থাকবে আখের গোছাতে ব্যস্ত। ফলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধীরা আবার রাজপথে নামবে। বিরোধীদের হরতাল এরপর হবে আরও কঠিন। দেশমাতৃকার জন্য তখন মাটিতে পড়ে থাকাই হবে নিরাপদ।
হরতাল যদি সবকিছুর সমাধান হতো, তাহলে বাংলাদেশে ৩৬৪/৩৬৫ দিনই হরতাল হতো।
দেশটাকে নিয়ে খুব কষ্ট হয়, তরুণদের জন্যও। কিছুতেই তারা উঠে দাঁড়াতে পারছে না, কাটা পা নিয়ে উঠে দাঁড়াবে, এমন স্বাস্থ্য কি দেশটার কখনো ছিল?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.