সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় by মাহবুব তালুকদার


আজ ১৬ জানুয়ারি ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মহামিলনমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি একটি অনন্য অনুষ্ঠান এবং উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটিও একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান বললে অত্যুক্তি হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীরা আজ দিনব্যাপী মিলনমেলায় মাতোয়ারা হয়ে থাকবেন।
প্রত্যেকেই একান্ত করে পাবেন তাদের অতীত দিনের সতীর্থ বন্ধু-বান্ধবীদের, যাদের উষ্ণ সান্নিধ্য নতুন স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকবে সারা জীবনের জন্য। শীতের এই রোমাঞ্চকর দিনটি ভরে উঠবে আনন্দময় গল্পে, গানে, স্মৃতিচারণায়। প্রাণবন্যার উচ্ছ্বাস ও উত্তাপ ছড়িয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে।

‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’র জন্ম ছয় দশক আগে ১৯৪৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। প্রথমে এর নাম দেয়া হয়েছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন’। পরবর্তী সময়ে এর নাম দেয়া হয় ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি ওল্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।’ ১৯৬০ সালে এ সংগঠনের পুনঃনামকরণ করা হয় ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ নামে। বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও মিজানুর রহমান এ সংগঠনের প্রথম সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন। এরা উভয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভকালীন গ্রাজুয়েট। পরবর্তী সভাপতি ডক্টর এম ওসমান গনি ১৯৬৩-৬৯ কার্যকালে দায়িত্ব পালন করেন এবং ওই সময়ে বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত একাদিক্রমে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ডক্টর এম ইন্নাস আলী। তবে দীর্ঘদিন এ প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো কার্যকারিতা ছিল না। বিগত কয়েক বছরে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আকস্মিকভাবে যেন নবযৌবনপ্রাপ্ত হয়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশাল চোখ ধাঁধানো সুসজ্জিত অ্যালামনাই ফ্লোর হয়েছে। এটি কেবল প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ঠিকানা নয়, সতীর্থ ও সুহৃদদের মিলনকেন্দ্র বলা চলে। এর বিভিন্ন কক্ষের নামায়ন হয়েছে নানা ফুলের নামে। যেমন অ্যালামনাই ফ্লোরের মেম্বারস লাউঞ্জের নাম রজনীগন্ধা, মাল্টিফাংশনাল লাউঞ্জের নাম হাসনাহেনা, রিডিং কর্নার বা লাইব্রেরির নাম সূর্যমুখী, কনফারেন্স রুমের নাম শাপলা, সেক্রেটারিয়েট কর্নার বা মহাসচিবের কক্ষের নাম দোলনচাঁপা, সাইবার ক্যাফের নাম গন্ধরাজ ইত্যাদি।
লেখার প্রারম্ভেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছি। অসাধারণ এজন্য যে, এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিটি সদস্যের গভীর আবেগ-অনুভূতির নিবিড় বন্ধন রয়েছে। সে বন্ধন গড়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে যা-কিছু অর্জন, তার দায় পরিশোধের আন্তরিক অভিলাস থেকে। মায়ের মমতায় এই বিশ্ববিদ্যালয় একদা আমাদের লালন পালন করেছে, যুগিয়েছে জীবনপথের পাথেয়, আমাদের মেধা ও মননকে করেছে উদ্দীপ্ত। আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার এই শিক্ষায়াতন জীবন প্রতিষ্ঠায় সাফল্যের চাবিকাঠি তুলে দিয়েছে আমাদের প্রত্যেকের হাতে। এ ঋণ কখনও পরিশোধযোগ্য নয়। কিন্তু তা স্বীকার করার মাধ্যমে আমরা সতত স্বীয় বিদ্যাপীঠের স্নেহ-মমতাকে মনের মণিকোঠায় জাগিয়ে রাখি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আজকের মহামিলন মেলায় ৮০০০-এর অধিক সাবেক ছাত্রছাত্রী ও তাদের স্পাউজরা অংশ নেবেন। এত বড় মিলনমেলা সাধারণত কমই অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর গুরুত্ব কেবল সংখ্যার দিক থেকে নয়। এই মিলনমেলায় উপস্থিত হবেন দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ, যাদের অভিন্ন পরিচয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রী হিসেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও এতে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী হিসেবেই। এই আনন্দঘন দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ অ্যালামনাই হিসেবে আমি সতীর্থদের জানাই সাদর সম্ভাষণ ও অভিনন্দন।
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক, বিএ অনার্স ১৯৬২, এমএ ১৯৬৩
ই-মেইল: mahbubtalukdar@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.