মাদকে পরিণত হচ্ছে ফেইসবুক
প্রথমত কম্পিউটার, তারপর ইন্টারনেট গোটা বিশ্বের যোগাযোগ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এমনকি সামাজিক আচার-আচরণও ব্যাপকভাবে পাল্টে দিয়েছে। ইন্টারনেটের মধ্য দিয়েই উদ্ভাবিত হয় বেশ কিছু সামাজিক নেটওয়ার্ক, যার ভেতর ফেইসবুক নামের নেটওয়ার্কটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৃহৎ। ২০০৪ সালে এই ফেইসবুক চালু হলেও এখন বিশ্বব্যাপী ৬০ কোটির
অধিক মানুষ এ জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক সার্ভিস ব্যবহার করছে। এ নেটওয়ার্ক চালুর উদ্দেশ্য ছিল ইতিবাচক। কথা ছিল, মানুষের সামাজিক যোগাযোগ বাড়বে, নতুন নতুন বন্ধুতা সৃষ্টি হবে, সামাজিক সচেতনতায় কেউ কেউ অন্যকে উদ্বুদ্ধ করবে, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নানা মাত্রায় মতবিনিময় ধরনের কর্মকাণ্ডের দ্বারা ব্যক্তিকে সচেতন করবেন, সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু সব ধরনের উদ্ভাবনেই যেমন ইতিবাচক ব্যবহারের পাশাপাশি অতি ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়, তেমনি ফেইসবুকের ব্যবহারও এখন এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ফেইসবুক যেন একটি মাদক উপকরণে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি ConsumersReports.org-এর এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ৭৫ লাখ শিশু এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, যাদের বয়স ১৩ বছরের নিচে। এদের প্রায় ৫০ লাখের বয়স ১০ বছরের নিচে। শুধু সদস্য হলেও এক কথা ছিল, এই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফলে এসব শিশুর একদিকে যেমন লেখাপড়ার সময় অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সামাজিক অপরাধের সঙ্গে। প্রলুব্ধ হয়ে অচেনা মানুষের বন্ধুতার ফাঁদে পা দিয়ে কচি মনের এ শিশুরা হচ্ছে নানা দুর্ঘটনার শিকার। শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে পর্নোগ্রাফি। শুধু তাই নয়, ফেইসবুকের নেশায় পড়ে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা, শারীরিক কসরৎ থেকে সরে যাচ্ছে। যার ফলে সুঠাম দেহ নিয়ে বেড়ে ওঠা ব্যাপকভাবে বিঘি্নত হতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ফেইসবুকের নিয়ম অনুসারে ১৩ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের এটি ব্যবহারের অনুমতি নেই। কিন্তু জন্ম তারিখসহ নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব শিশু ফেইসবুক ব্যবহার করে থাকে।
এমন পরিস্থিতি প্রতিহত করা প্রয়োজন। তা না হলে নৈতিক স্খলন অব্যাহতভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকবে। দৈহিকভাবে এসব শিশু আর প্রাণবন্ত থাকবে না। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে, বিশ্বব্যাপী এত বড় এই নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা যাবে? বিশ্বে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেসব সংগঠনের রয়েছে আইনগত সীমাবদ্ধতা। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর বহুজাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন দেশকে সমাজের সঙ্গে সংগতি রেখে ইন্টারনেট রেগুলেটরি কমিশন গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে দক্ষ একটি জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে সরকারের। তাতে কিছুটা হলেও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
No comments