সরকার ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে by ড. মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার
আমি সাধারণ নাগরিক। সাধারণ নাগরিক হিসেবেই মন্তব্য করতে পারি। সরকার রোডমার্চ কিংবা এ ধরনের কর্মসূচির প্রতি উদারতা দেখিয়েছে। বিরোধী দল রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে। সরকার প্রথম অবস্থায় যে আচরণ করছে, তাতে মনে হয়েছিল যে তারা নিশ্চিতভাবে বাধা প্রদান করবে বিরোধী দলের এ কর্মসূচিতে।
প্রধানমন্ত্রী নাকি এমন কথাও বলেছিলেন যে গাড়ির নম্বরগুলোও টুকে রাখবেন। তাতে মনে হয়েছিল, রোডমার্চে না জানি কোন সংঘাত হয়। কিন্তু আমরা দেখলাম, খুব ভালোভাবেই বিরোধী দল রোডমার্চের মতো কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার সেখানে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। চট্টগ্রামে যে বিশাল রোডমার্চ হলো, সেটা সফল হয়েছে। আমি মনে করি, হরতাল-ধর্মঘটের চেয়ে এই গণতান্ত্রিক আচরণটি খুবই ভালো। বিরোধী দল এই রোডমার্চ কর্মসূচিতে শুধু সফল হয়নি, তাদের সাংগঠনিক সাফল্যও এসেছে। বিশেষ করে এই কর্মসূচির সুবাদে তাদের মধ্যে যে গ্রুপিং ছিল, তার প্রভাব থেকে দলকে অনেকাংশে মুক্ত করতে পেরেছে। গ্রুপিংয়ের জন্য কোথাও তাদের রোডমার্চ ব্যর্থ হয়েছে এমন কথা শোনা যায়নি। ফলে এই রোডমার্চ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের যে সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো ছিল তা কিন্তু অনেকাংশে কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এখন আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বলেন কিংবা চারদিকে তাদের সাফল্যের পর তারা 'ঢাকা চলো' ডাক দিতেই পারে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বিভিন্ন জায়গায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে ঢাকা চলো কর্মসূচির বিষয়ে মত চেয়েছেন। তারা কিন্তু তাঁকে সেই কর্মসূচির ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং খালেদা জিয়ার সেই আহ্বানে ঢাকায় প্রচুর লোকসমাগম হবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা শুধু তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমাবেশই হবে, তা নয়। সেখানে অনেক সাধারণ মানুষও থাকবে। কারণ সাধারণ মানুষ কিন্তু সরকারের কৃতকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। দ্রব্যমূল্য, শেয়ারবাজার, সীমান্ত পরিস্থিতি, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে স্বচ্ছ আচরণ করছে বলে মনে হয় না। এ ধরনের ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে আনীত কর্মসূচিকে সমর্থন দিতেই পারে। ১২ মার্চ তা হবে বলে মনে করা যায়। আমাদের এখানে রেওয়াজও তাই। একসময় মানুষ সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন কমিয়ে দিতে থাকে। বিগত সময়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলোতে সরকারি দলের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২৫৪টি পৌরসভা নির্বাচনে অনেক জায়গায়ই দেখা গেছে, বিরোধীদলীয় সদস্যরা বেশি আসন পেয়েছেন। তার পরও ১২ মার্চকে এত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। ভাবতে হবে বাংলাদেশ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য কিংবা থাইল্যান্ড নয়। এখানে সে রকম কিছু হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। সরকারের উচিত হবে বিরোধী দলকে তাদের কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা দেওয়া। বিরোধী দল হয়তো সেদিন তাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মেনে নেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দিতে পারে। তারা সংসদেও ফিরে যেতে পারে। সেখানে হয়তো তারা এ বিষয়ে একটা রূপরেখাও দিতে পারে। এমন হলে রাজনৈতিক উত্তাপ কমে যাবে। আবার সরকারও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। ১২ মার্চের আগে সরকার যদি ঘোষণা দেয় যে বিষয়টি নিয়ে তারা সংসদে আলোচনা করতে যাচ্ছে; কিংবা কোনো প্রস্তাব যদি তারা পেশও করে তাহলে রাজনৈতিক উত্তাপ কমে যাবে এবং ১২ মার্চের সমাবেশেও তার প্রতিফলন হবে।
গ্রন্থনা : মোস্তফা হোসেইন ও মহসীন হাবিব
No comments