মেহেন্দীগঞ্জে নদীভাঙন -অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দুই সহস্রাধিক স্থাপনা মেঘনার গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নই ভাঙনকবলিত। এর মধ্যে দুটি ইউনিয়নের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ইতিমধ্যে এসব ইউনিয়নের বহু বাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।


স্থানীয় প্রকৌশলীদের মতে, বর্ষার আগে মাত্র ৫০ লাখ টাকার কাজ করা গেলেও ইউনিয়ন দুটি রক্ষা করা যেত। কিন্তু সেই ৫০ লাখ টাকার প্রাপ্তি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ফলে এখানকার কয়েক হাজার বাসিন্দা সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সারা দেশেই নদী ভরাট ও নাব্য সংকট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। নদী যত ভরাট হবে ও নদীর গতিপথ যত বেশি ব্যাহত হবে, পানি তত বেশি তীরে আঘাত হানবে এবং ভাঙনের সৃষ্টি করবে। প্রতিবছর এভাবে সারা দেশে হাজার হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয় এবং সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে। এরা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক নয়? তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া কি রাষ্ট্রের কর্তব্য নয়? তাহলে মেহেন্দীগঞ্জের দুই সহস্রাধিক স্থাপনা রক্ষায় মাত্র ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিতে এত গড়িমসি কেন? হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেতু বানাতে পারলেও নদীগুলোর নাব্য পুনরুদ্ধারে আমরা কোনো উদ্যোগ নিতে পারি না। নদী যদি না বাঁচে, নদীগুলো যদি ভরাট হয়ে যায়, তাহলে এসব সেতু কোন কাজে আসবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আমরা মনে করি, সারা দেশে যেহেতু নদীভাঙন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, তাই এ ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। প্রথমত, নদীগুলোর ভাঙন ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, তার পরও যেসব পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাবে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, স্থায়ী সমাধান হিসেবে নিয়মিত নদীগুলো খনন করতে হবে এবং নদীগুলোর গভীরতা ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে নদীর পানি তীরে কম আঘাত হানে। চতুর্থত, নদীর তীর রক্ষায় ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কথায় বলে, সাপে কাটলেই কেবল সাপের বিষের বেদনা অনুভব করা যায়। নদীভাঙনের শিকার হয়ে যেসব মা-বাবা ছেলেমেয়ে নিয়ে পথের ধারে আশ্রয় নেন, তাঁরাই কেবল এভাবে নিঃস্ব হওয়ার বেদনা অনুভব করতে পারেন। আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের কিছুটা হলেও সেসব বেদনার প্রকৃতি অনুভব করতে হবে। আর তা না করলেই কেবল ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিতে গিয়ে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি হবে। ফলে সময়ের কাজ কখনো সময়মতো সম্পন্ন হবে না। মেহেন্দীগঞ্জের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষজনকে রক্ষায় অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া হোক। এখানে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.