১২ মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশ-ঢাকায় ঢুকতে মানা
বিরোধী দলের ১২ মার্চের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কৌশল নিয়েছে সরকার। বিএনপি অভিযোগ করছে, তাদের কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতে রাজধানীর প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে এবং বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়ে কাউকে ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রায় একই অবস্থা নৌপথেরও। ১২ মার্চ মহাসমাবেশ ঘিরে ‘নাশকতার আশঙ্কার’ কথা বলে গতকাল চাঁদপুর, পিরোজপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
গতকাল চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধিকে বলেছেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী সব নৌযান ও সড়কে বাস চলাচল ১২ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরে বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শুনেছি, সরকারের নির্দেশে এটি করা হয়েছে।’
গতকাল বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানের পরিবহনমালিকেরা ঢাকার সঙ্গে বাস চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন।
ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখছে। ক্ষেত্রবিশেষে তল্লাশি বা গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া গণহারে যাত্রীবাহী বাস রিকুইজিশনের (পুলিশের কাজে ব্যবহারের জন্য দখলে নেওয়া) কারণে গতকাল বিকেল থেকে রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরেও বাস চলাচল কমে যায়। একই সঙ্গে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ২০০টি নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ছোট যানবাহনগুলো তল্লাশি করছে। এ কারণে নগরে অটোরিকশা, ট্যাক্সি, কার-মাইক্রো চলাচলও গতকাল বিকেল থেকে কমে গেছে।
ঢাকার বাইরে চাঁদপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৪৫টি বাস ও লঞ্চ রিকুইজিশন করেছে পুলিশ। নরসিংদীর পুলিশ জানিয়েছে, আজ রোববার থেকে তারা যানবাহন রিকুইজিশন করা শুরু করবে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ কোথাও কাউকে বাধা দিচ্ছে না। গাড়ি আটক বা গাড়ি বন্ধ রাখতে ভয় দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে অনেক আশঙ্কার খবর আছে। সেসব আশঙ্কা সামনে রেখে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে রিকুইজিশনের আতঙ্কে কিছু বাস কমে গেছে।
বিএনপির অভিযোগ: বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকার পুলিশ দিয়ে ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলো ৯ মার্চ থেকে তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। তারও আগে থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। এখন ঢাকায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আটক ও হয়রানি করা হচ্ছে। সারা দেশের সঙ্গে সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার।
গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরা বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে চরম অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। লঞ্চের টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে, অথচ সরকার বাধা দিচ্ছে। এর পরিণতি শুভ হবে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির তিন হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলমসহ বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদলের নেতাদের বাড়ি অকারণে তল্লাশি করেছে পুলিশ।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গতকাল আরও ৪২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত চার দিনে রাজধানীর ৪১ থানায় প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এরা বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি বা দুর্বৃত্ত। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে এরা ধরা পড়েছে।
বাসমালিকদের অভিযোগ: একাধিক বাসমালিক অভিযোগ করেছেন, ‘১২ মার্চের মহাসমাবেশে সংঘাত হবে’ বলে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে গতকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদের লোকজনকে বাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।
তবে মালিক সমিতির নেতারা বাস বন্ধ রাখার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন না।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু মহাসমাবেশ উপলক্ষে ভাঙচুর হতে পারে, এই আতঙ্কে সবাই বাস চালানো কমিয়ে দিচ্ছে।
এ ছাড়া একাধিক পরিবহনমালিক জানিয়েছেন, গতকাল থেকে পুলিশ গণহারে বাস রিকুইজিশন শুরু করেছে। এ কারণে রাজধানীতেও গতকাল বিকেলে বাস চলাচল ব্যাপকভাবে কমে যায়।
ঢাকায় সিএনজিচালিত বাসমালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি খোন্দকার রফিকুল হোসেন বলেন, তাঁর কোম্পানির (সূচনা পরিবহন) আটটি বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। অন্য কোম্পানির বাসও এভাবে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে।
বাস টার্মিনালের চিত্র: গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। গতকাল বিকেলের পর অনেক বাসের পূর্বনির্ধারিত যাত্রা বাতিল করা হয়।
গতকাল রাতে ঢাকার বাইরে থেকেও বাস আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বাস বন্ধ হয়ে যাবে—এ আশঙ্কায় গতকাল দুপুরের দিকে গাবতলী, মহাখালী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরসহ বেশ কিছু স্থানে বিপুলসংখ্যক যাত্রী দেখা যায়।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নাম করে দুই ব্যক্তিকে প্রতিটি কাউন্টারে গিয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।
টেকনিক্যাল মোড়ে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে বলা হয়, ১১ ও ১২ তারিখের টিকিট বিক্রি বন্ধ।
মহাখালী বাস টার্মিনালেও এভাবে এক ব্যক্তিকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে। এই প্রতিবেদক নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। মালিক সমিতির একাধিক নেতা জানান, তাঁরা সমিতির কেউ নন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশেই টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে নূর মোহাম্মদ নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ১২ মার্চ ফরিদপুরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যাবে শুনে তড়িঘড়ি করে টার্মিনালে এসেছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটার সময় বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে হাঁক দেওয়া হচ্ছিল—এটাই শেষ বাস। মহাখালীর অনন্যা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, বিকেলের পর বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল জানান, ‘ঢাকায় বিভিন্ন মেসে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। অনেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে শুনেছি। তাই ১২ মার্চের আগেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
প্রায় একই অবস্থা নৌপথেরও। ১২ মার্চ মহাসমাবেশ ঘিরে ‘নাশকতার আশঙ্কার’ কথা বলে গতকাল চাঁদপুর, পিরোজপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
গতকাল চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকের হোসাইন প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধিকে বলেছেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী সব নৌযান ও সড়কে বাস চলাচল ১২ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরে বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শুনেছি, সরকারের নির্দেশে এটি করা হয়েছে।’
গতকাল বিকেল থেকে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানের পরিবহনমালিকেরা ঢাকার সঙ্গে বাস চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন।
ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখছে। ক্ষেত্রবিশেষে তল্লাশি বা গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া গণহারে যাত্রীবাহী বাস রিকুইজিশনের (পুলিশের কাজে ব্যবহারের জন্য দখলে নেওয়া) কারণে গতকাল বিকেল থেকে রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরেও বাস চলাচল কমে যায়। একই সঙ্গে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ২০০টি নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ছোট যানবাহনগুলো তল্লাশি করছে। এ কারণে নগরে অটোরিকশা, ট্যাক্সি, কার-মাইক্রো চলাচলও গতকাল বিকেল থেকে কমে গেছে।
ঢাকার বাইরে চাঁদপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৪৫টি বাস ও লঞ্চ রিকুইজিশন করেছে পুলিশ। নরসিংদীর পুলিশ জানিয়েছে, আজ রোববার থেকে তারা যানবাহন রিকুইজিশন করা শুরু করবে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ কোথাও কাউকে বাধা দিচ্ছে না। গাড়ি আটক বা গাড়ি বন্ধ রাখতে ভয় দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে অনেক আশঙ্কার খবর আছে। সেসব আশঙ্কা সামনে রেখে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ দাবি করেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে রিকুইজিশনের আতঙ্কে কিছু বাস কমে গেছে।
বিএনপির অভিযোগ: বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকার পুলিশ দিয়ে ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলো ৯ মার্চ থেকে তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। তারও আগে থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। এখন ঢাকায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আটক ও হয়রানি করা হচ্ছে। সারা দেশের সঙ্গে সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার।
গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরা বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে চরম অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। লঞ্চের টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে, অথচ সরকার বাধা দিচ্ছে। এর পরিণতি শুভ হবে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির তিন হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলমসহ বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদলের নেতাদের বাড়ি অকারণে তল্লাশি করেছে পুলিশ।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গতকাল আরও ৪২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত চার দিনে রাজধানীর ৪১ থানায় প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এরা বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি বা দুর্বৃত্ত। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে এরা ধরা পড়েছে।
বাসমালিকদের অভিযোগ: একাধিক বাসমালিক অভিযোগ করেছেন, ‘১২ মার্চের মহাসমাবেশে সংঘাত হবে’ বলে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে গতকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদের লোকজনকে বাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।
তবে মালিক সমিতির নেতারা বাস বন্ধ রাখার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন না।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের স্বত্বাধিকারী রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু মহাসমাবেশ উপলক্ষে ভাঙচুর হতে পারে, এই আতঙ্কে সবাই বাস চালানো কমিয়ে দিচ্ছে।
এ ছাড়া একাধিক পরিবহনমালিক জানিয়েছেন, গতকাল থেকে পুলিশ গণহারে বাস রিকুইজিশন শুরু করেছে। এ কারণে রাজধানীতেও গতকাল বিকেলে বাস চলাচল ব্যাপকভাবে কমে যায়।
ঢাকায় সিএনজিচালিত বাসমালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি খোন্দকার রফিকুল হোসেন বলেন, তাঁর কোম্পানির (সূচনা পরিবহন) আটটি বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। অন্য কোম্পানির বাসও এভাবে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে।
বাস টার্মিনালের চিত্র: গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা। গতকাল বিকেলের পর অনেক বাসের পূর্বনির্ধারিত যাত্রা বাতিল করা হয়।
গতকাল রাতে ঢাকার বাইরে থেকেও বাস আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বাস বন্ধ হয়ে যাবে—এ আশঙ্কায় গতকাল দুপুরের দিকে গাবতলী, মহাখালী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরসহ বেশ কিছু স্থানে বিপুলসংখ্যক যাত্রী দেখা যায়।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নাম করে দুই ব্যক্তিকে প্রতিটি কাউন্টারে গিয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।
টেকনিক্যাল মোড়ে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে বলা হয়, ১১ ও ১২ তারিখের টিকিট বিক্রি বন্ধ।
মহাখালী বাস টার্মিনালেও এভাবে এক ব্যক্তিকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে। এই প্রতিবেদক নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। মালিক সমিতির একাধিক নেতা জানান, তাঁরা সমিতির কেউ নন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশেই টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে নূর মোহাম্মদ নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ১২ মার্চ ফরিদপুরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যাবে শুনে তড়িঘড়ি করে টার্মিনালে এসেছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটার সময় বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকে হাঁক দেওয়া হচ্ছিল—এটাই শেষ বাস। মহাখালীর অনন্যা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, বিকেলের পর বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল জানান, ‘ঢাকায় বিভিন্ন মেসে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। অনেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে শুনেছি। তাই ১২ মার্চের আগেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
No comments