বিস্মৃত স্মৃতিচিহ্ন by জাহিরুল ইসলাম

আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের 'শেষ স্মৃতিচিহ্ন' হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের এবোটাবাদের যে বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়েছিল তা যাতে ভবিষ্যতে তীর্থস্থানে পরিণত না হয়, এই ভয়ে দেশটির সরকার বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করেছে। পাঠকের মনে থাকার কথা, গত বছরের মে মাসে লাদেনকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন ওই বাড়িটির আশপাশে উৎসুক মানুষের কমতি ছিল না।


শুধু ওইদিন নয়, এরপর অনেক সময় পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্র ছিল বাড়িটি। শুধু বাড়ির অবকাঠামো নয়, খুঁটিনাটি প্রত্যেকটি জিনিসই। তাতে কী এমন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল, যা ব্যবহার করে লাদেন গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাঁচ বছর সেখানে আত্মগোপন করে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন_ এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। কারণ এবোটাবাদ পাকিস্তানের সুরক্ষিত সামরিক শহর। ওই শহরেই অবস্থিত পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমি। আর মিলিটারি একাডেমির অদূরেই অবস্থিত লাদেনের বহুল আলোচিত সেই বাড়ি।
বাড়িটি ভাঙতে যাতে কোনো ঝামেলা তৈরি না হয় সেজন্য আশপাশের এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। আগে থেকেই অধিবাসীদের নিষেধ করা হয়েছিল বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য। এছাড়া অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে নেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সরকার মনে করে, এই বাড়িটিই বিদেশে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করেছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এই বাড়িটিই হয়ে উঠতে পারে জঙ্গিবাদীদের তীর্থস্থান। আর তাই সব দিক বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সন্দেহ নেই, আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন জঙ্গিবাদের অন্যতম হোতা। কিন্তু টুইন টাওয়ারে হামলার যে অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা করেছে তা তারা গত এক দশকে প্রমাণ করতে পারেনি। যাকে ধরার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে আফগানিস্তান নামক দেশটি ধ্বংস করা হয়েছে তাকে বাগে পেয়েও কেন গ্রেফতার করা হয়নি, বিনা বিচারে তাকে কেন হত্যা করা হলো_ এসব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তীর্থস্থানে পরিণত হওয়ার ভয়ে তার লাশ কবরে সমাহিত না করে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেই একই ভয়ে এবার তার বাড়িটিও নিশ্চিহ্ন করা হলো।
এ কথা ঠিক, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করতে গিয়ে পাকিস্তানও এখন ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন। বেলুচিস্তান সংকটের পাশাপাশি লাদেন হত্যা ইস্যুতে দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তার শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ঠিক একই কারণে লাদেনের অনুসারীরা এখন দূরের মার্কিন মুল্লুক নয়, খোদ পাকিস্তানের জন্যও হুমকি। দলের শীর্ষ নেতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে তালেবান জঙ্গিরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শুধু ন্যাটো বাহিনী কিংবা স্থাপনাই নয়, নির্বিচারে তারা একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলায় প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন দিন খুব কমই রয়েছে, যেদিন দেশটির কোথাও আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেনি। এসবের মাধ্যমে তালেবান বরং এ কথাই জানান দিতে চাইছে_ 'আমরা আছি।' দেখা যাচ্ছে তাদের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে_ স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করে অনুসারীদের মন থেকে লাদেনকে মুছে দেওয়া আদৌ কি সম্ভব? উল্টো তাকে স্মরণের পথই প্রশস্ত হলো না তো?
zahirul.du@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.