সড়কে হাট-বাজার-পথের ঝুঁকিই দ্বিগুণ হয় মাত্র

সান্তাহার রেলওয়ে জংশন এলাকায় অবৈধ বাজার গড়ে ওঠায় দুর্ঘটনার যে আশঙ্কা শনিবার সমকালের প্রতিবেদনে ব্যক্ত হয়েছে, গোপালগঞ্জের বৌলতলী হাটে দেখা গেল তার দুর্ভাগ্যজনক নজির। অস্বীকার করা যাবে না যে, ওই হাটে ট্রাকচাপায় সাতজনের মৃত্যুর দায় সরাসরি বাজারের নয়।


ফেনী থেকে মোরেলগঞ্জগামী ট্রাকটিই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাটুরে লোকজনকে চাপা দেয়। পথের মধ্যে চাকা ফেটে গেলে চালকেরই বা দোষ কতটুকু? এটা ঠিক, যাত্রা শুরুর আগে চাকাসহ সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সহজ হয়। কিন্তু সড়ক যদি হয় চন্দ্রপৃষ্ঠের মতো, যানবাহনের জন্য কারিগরি সতর্কতা কতটুকু ভরসা হতে পারে? বাস-ট্রাকের টায়ারের স্বল্পায়ু এবং সে কারণে দুর্ঘটনার জন্য এদেশের বেহাল সড়কও কম দায়ী নয়। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক একটি ব্যবস্থা হতে পারে সড়ক-মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার ও ব্যবসাকেন্দ্রকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা। বৌলতলীতে যদি এ ধরনের হাট না থাকত, তাহলে সাতটি প্রাণ বেঁচেও যেতে পারত। নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকটি খাদে পড়লেও আরোহীরা সবাই অক্ষত রয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা। সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হোক। আমরা জানি, দেশের অন্যান্য রেলপথ ও স্টেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কেনা-বেচার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থা। এ-ও সত্য যে, সরকার ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগী হয়েছে। বাজারগুলো উচ্ছেদ করা হোক সবার আগে। সড়কপথেও গোপালগঞ্জের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। কেবল দুর্ঘটনার ঝুঁকি নয়, এতে করে যানবাহনের গতিও দারুণভাবে ব্যাহত হয়। আর তাতে করে শ্লথ হয় অর্থনীতির গতিও। মনে রাখা জরুরি, যত্রতত্র হাট-বাজার সরকারের রাজস্ব আদায় যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তেমনি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারও নিশ্চিত হয় না। সার্বিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থেই মহাসড়কগুলোকে হাট-বাজারমুক্ত করার কাজটি অবিলম্বে শুরু করতে বলব। সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে যাত্রীদের জীবন এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কে সড়কে বাজার বসিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার জীবন বিপন্ন করে তোলার মানে নেই। পথের ঝুঁকি দ্বিগুণ করা নয়, কমানোর দিকেই নজর দেওয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.