কামারপুকুর ও জয়রামবাটীতে by কৃষ্ণা চন্দ
বরিশালের গৈলা দাশের বাড়ির সত্যরঞ্জন দাশগুপ্ত সাধক পুরুষ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এ মন্দিরটি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবন ও কর্মের সঙ্গে জড়িত। দেবীমূর্তির সামনে অবস্থানকালে তিনি যেন শুনতে পেলেন অজ্ঞাত স্থান থেকে ভেসে আসা কণ্ঠ_ 'আমি তো তোর নিজের মন্দিরেই আছি।
এখানে কেন এসেছিস?' তিনি ফিরে এলেন বাড়িতে এবং পরবর্তী চার দশকের পুরোটাই কাটিয়ে দেন সেখানে। গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর নামক স্থানে গিয়েছিলাম ঐতিহাসিক কয়েকটি মন্দির দেখার জন্য। এগুলোর স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের যথেষ্ট মিল রয়েছে। বিষ্ণুপুরের শাড়িও বিখ্যাত এবং সেখানে তাঁতিদের কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। বিষ্ণুপুরে গিয়ে জানতে পারি শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুর এবং শ্রীমা সারদা দেবীর জন্মস্থান জয়রামবাটী গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েক ভ্রমণেই যাওয়া যায়। আমরা চারজন সেখানে যাই। প্রথম গন্তব্য ছিল জয়রামবাটী। চমৎকার পরিবেশ সেখানে। সারদা দেবীর পুরান ও নতুন ঘর যেমন ছিল, তেমনই রাখা হয়েছে। আরও কয়েকটি মাটির ঘর রয়েছে পাশাপাশি লাগোয়া। মূল মন্দিরটিতে ভক্তদের ভিড় লেগেই আছে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায়
ফুলের সমারোহ। অতিথিদের থাকার আয়োজনও সুন্দর।
জয়রামবাটী বাঁকুড়া জেলায়, কামারপুকুর হুগলীতে। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান হওয়ার কারণে তা এখন বিশ্বের নানা অঞ্চলে সুপরিচিত। এখানেও রামকৃষ্ণের মাটির কুটির যেমন ছিল তেমনই রাখা হয়েছে। ঘরের ছাউনি খড়ের। ঘরে শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যবহৃত বিছানাপত্র রাখা আছে। ওই পবিত্র প্রাঙ্গণে পা রেখেই কেন যেন মনে হলো, আমার শ্বশুর সত্যরঞ্জন দাশগুপ্ত এখানে এসেছিলেন। পরিবারের কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারল না, কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ দেব তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই।
শ্রীরামকৃষ্ণের বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির প্রাঙ্গণে একটি আমগাছ সবার নজরে পড়ে। গাছটি শ্রীরামকৃষ্ণ লাগিয়েছিলেন। এর একটি ফেঁকড়া বেরিয়ে আরেকটি গাছ বেড়ে উঠেছে, যেন পাশাপাশি দুটি গাছ। এ গাছের চারা বিভিন্ন জন সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এটি যাতে কালের ছোবলে ধ্বংস না হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষ যত্নবান রয়েছে। মন্দির ও বাসগৃহ এবং অন্যান্য স্থাপনাসহ গোটা অঙ্গনটি ফুলে ফুলে ভরা।
মূল মন্দিরের অভ্যন্তরে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর পরিকল্পনায় শ্রীরামকৃষ্ণের একটি শ্বেত পাথরের ধ্যানমগ্ন মূর্তি স্থান পেয়েছে। মন্দিরে নিত্য সকাল-সন্ধ্যা পূজা, আরতি ও ভোগ এবং সন্ধ্যায় শাস্ত্র পাঠ, কথামৃত পাঠ ও সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব, শিবরাত্রি, চৈত্রে শিবের গাজন ও মনসা পূজা, আষাঢ়ে রথযাত্রা, আশ্বিনে দুর্গাপূজা, পৌষে কল্পতরু উৎসব ও বৈশাখে চবি্বশ প্রহর হরিবাসরের আয়োজনে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রতিদিন দুপরের দিকে উপস্থিত সবার জন্য খাবারের
আয়োজন করা হয়।
জয়রামবাটী ও কামারপুকুর উভয় স্থানেই গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা_ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আশ্রম। এর সবই দর্শনীয়। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদা দেবীর স্মৃতিঘেরা বিভিন্ন স্থানও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আপনি তাদের অনুসারী হতে পারেন, না-ও পারেন_ এমনকি যে কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারেন। কিন্তু দুটি স্থানই আপনার পছন্দ হবে। বিশ্বের অনেক দেশে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন রয়েছে। এগুলোতে ধর্মচর্চা যেমন হয়, তেমনি রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নানা আয়োজন। সব ধর্মের মানুষের কাছেই মিশনের দ্বার উন্মুক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সুনামের সঙ্গে।
ফুলের সমারোহ। অতিথিদের থাকার আয়োজনও সুন্দর।
জয়রামবাটী বাঁকুড়া জেলায়, কামারপুকুর হুগলীতে। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান হওয়ার কারণে তা এখন বিশ্বের নানা অঞ্চলে সুপরিচিত। এখানেও রামকৃষ্ণের মাটির কুটির যেমন ছিল তেমনই রাখা হয়েছে। ঘরের ছাউনি খড়ের। ঘরে শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যবহৃত বিছানাপত্র রাখা আছে। ওই পবিত্র প্রাঙ্গণে পা রেখেই কেন যেন মনে হলো, আমার শ্বশুর সত্যরঞ্জন দাশগুপ্ত এখানে এসেছিলেন। পরিবারের কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারল না, কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ দেব তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই।
শ্রীরামকৃষ্ণের বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির প্রাঙ্গণে একটি আমগাছ সবার নজরে পড়ে। গাছটি শ্রীরামকৃষ্ণ লাগিয়েছিলেন। এর একটি ফেঁকড়া বেরিয়ে আরেকটি গাছ বেড়ে উঠেছে, যেন পাশাপাশি দুটি গাছ। এ গাছের চারা বিভিন্ন জন সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এটি যাতে কালের ছোবলে ধ্বংস না হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষ যত্নবান রয়েছে। মন্দির ও বাসগৃহ এবং অন্যান্য স্থাপনাসহ গোটা অঙ্গনটি ফুলে ফুলে ভরা।
মূল মন্দিরের অভ্যন্তরে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর পরিকল্পনায় শ্রীরামকৃষ্ণের একটি শ্বেত পাথরের ধ্যানমগ্ন মূর্তি স্থান পেয়েছে। মন্দিরে নিত্য সকাল-সন্ধ্যা পূজা, আরতি ও ভোগ এবং সন্ধ্যায় শাস্ত্র পাঠ, কথামৃত পাঠ ও সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব, শিবরাত্রি, চৈত্রে শিবের গাজন ও মনসা পূজা, আষাঢ়ে রথযাত্রা, আশ্বিনে দুর্গাপূজা, পৌষে কল্পতরু উৎসব ও বৈশাখে চবি্বশ প্রহর হরিবাসরের আয়োজনে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রতিদিন দুপরের দিকে উপস্থিত সবার জন্য খাবারের
আয়োজন করা হয়।
জয়রামবাটী ও কামারপুকুর উভয় স্থানেই গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা_ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আশ্রম। এর সবই দর্শনীয়। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদা দেবীর স্মৃতিঘেরা বিভিন্ন স্থানও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আপনি তাদের অনুসারী হতে পারেন, না-ও পারেন_ এমনকি যে কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারেন। কিন্তু দুটি স্থানই আপনার পছন্দ হবে। বিশ্বের অনেক দেশে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন রয়েছে। এগুলোতে ধর্মচর্চা যেমন হয়, তেমনি রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নানা আয়োজন। সব ধর্মের মানুষের কাছেই মিশনের দ্বার উন্মুক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সুনামের সঙ্গে।
No comments