চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি-মহাসমাবেশ হোক নির্বিঘ্ন
চারদলীয় জোটের আগামীকালের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্রই প্রশ্ন_ কী ঘটতে চলেছে ১২ মার্চ। অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই সম্ভবত এমন শঙ্কা।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানুয়ারির প্রথম দিকে চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে অনুষ্ঠিত বড় ধরনের এক সমাবেশে 'চলো চলো ঢাকা চলো' কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টির জন্য বিরোধী দল সারাদেশ থেকে কর্মী-সমর্থকদের রাজধানীতে সমাবেশ করতেই পারে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখায় সব ধরনের সহায়তা প্রদান। অন্যদিকে, কর্মসূচির আয়োজকদের সতর্ক থাকা উচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না ঘটে। গত কয়েক দিনে উভয় পক্ষের কোনো কোনো নেতার সভা-সমাবেশ ও গণমাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্যে জনগণ আদৌ স্বস্তিবোধ করছে না। ১২ মার্চকে সামনে রেখে ধরপাকড়, রাজধানীমুখী যানবাহন ও ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি, আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিথি রাখার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ এমন কিছু পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করছে যা অনভিপ্রেত এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অন্যদিকে, সরকার বলছে, বিরোধীরা সমাবেশকে নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে যে, বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের অধিকার রয়েছে এবং তাতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা সমীচীন নয়। বিরোধীদের মোকাবেলায় কোনো ধরনের হঠকারী পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার বা দলের শীর্ষ পর্যায় না চাইলেও অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। গত বছরের জুলাই মাসে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি নির্যাতনের তিক্ত স্মৃতি নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টরা মনে রাখবেন। খালেদা জিয়া আগামীকালের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দল ও জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি তার আহ্বান_ সংঘাত-সংঘর্ষ-উস্কানি এড়িয়ে যে কোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখা। দেশবাসী আশা করবে, সরকার দলমত নির্বিশেষে সবার গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। ১২ মার্চের কর্মসূচি সফল করে তোলায় সব ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশিত। একইভাবে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব হবে কর্মী-সমর্থকদের সম্ভাব্য সব উপায়ে সংযত রাখা। গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর বিপুলসংখ্যক ক্যাডার রাজপথে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি বিরোধীদের সংসদ অধিবেশনে যোগদানও কাম্য। তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা একমাত্র সংসদেরই রয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার ইতিমধ্যেই সদিচ্ছার মনোভাব দেখিয়েছে। আমরা আশা করব, বিরোধী দল সংসদে গিয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। তবে এখন সবকিছুই নির্ভর করবে বিরোধী দলের আগামীকালের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার ওপর। এর দায়-দায়িত্ব উভয়পক্ষের ওপরই বর্তায়।
No comments