চমকের আশা করতেই পারেন by মাশরাফি বিন মুর্তজা

প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, আমি জয়ের কথা ভেবেই মাঠে নামি। টুর্নামেন্ট যত বড়ই হোক, শিরোপার স্বপ্নও উঁকি দিয়ে যায় মনে। এশিয়া কাপ কেন ব্যতিক্রম হবে? এখানেও প্রতিটি ম্যাচেই সঙ্গী থাকবে জয়ের স্বপ্ন। তবে শিরোপা জয়ের স্বপ্নও কি দেখব?


বাস্তবতা তা দেখতে দিচ্ছে না। কারণ ভালোমতোই জানি, এশিয়ার তিন পরাশক্তিকে টপকে ট্রফিটা হাতে নেওয়ার সামর্থ্য আমাদের এখনো হয়নি। আমাদের প্রতিপক্ষ তিন দলই সাবেক ও বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এদের বিপক্ষে খেলা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে আগে দুটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠতে হবে। তার মানে, তিনটি ম্যাচে জয় চাই। কাজটা কত কঠিন, আপনিও তা জানেন। আমার মন্ত্র তাই একটাই—ভালো ক্রিকেট খেলা। ভালো খেলার সামর্থ্যও আছে আমাদের। যদিও মাঠে সব সময় এর প্রতিফলন ঘটে না।
একজন ভালো ব্যাটিং করল। কিন্তু তাকে যোগ্য সমর্থন দিতে পারল না কেউ। এটা হলে চলবে না। বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা। আসলে ভালো বোলিং ছাড়া ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন। পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও। তো সব বিভাগেই জ্বলে ওঠার বিকল্প দেখছি না। গড়পড়তা গোটা টিমটাকেই একসূত্রে গাঁথতে হবে। একজন ব্যাটিংয়ে ৭০-৮০ করল, আরও দুজনের অন্তত ৩৫-৪০ করে করা চাই। তাহলেই আপনি একটা ভালো স্কোর পাবেন এবং তখনই জেতার কথা ভাবা সম্ভব। আমি মনে করি, আমাদের খেলোয়াড়ি ক্ষমতা আছে। ইতিবাচক মানসিকতাই বেশি দরকার।
বরাবরই আমি বিশ্বাস করে এসেছি, মনের জোর না থাকলে বড় কিছু অর্জন অসম্ভব। আমাদের সমস্যাটা হলো সামর্থ্য আছে, কিন্তু আমরা মানসিকভাবে দুর্বল।
তবে এটা ক্রিকেট। ক্রিকেটে অনেক কিছুই সম্ভব। তবে সেটি মনে রেখেও বলব, বাকি তিনটি দল আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। চাপ সামাল দেওয়ার অনেক অভিজ্ঞতা আছে এই দলগুলোর। আমরাও কখনো কখনো চাপ সামলে কিছু অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু তফাতটা হলো, ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা চাপ সামাল দেয় প্রতিনিয়ত। বড় পার্থক্যটা এখানেই।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। তার পরও যদি আপনার মনে প্রশ্ন আসে, আমরা একটি ম্যাচ জিতলে সেটি কার বিপক্ষে? কিংবা আমি নিজে কোন ম্যাচটা জেতার কথা বেশি ভাবছি? এই সব কৌতূহল মেটাতে আমি নির্দিষ্ট কোনো দলের নাম বলব না। নিজেদের দিনে আমরা জ্বলে উঠলে ফল আমাদের অনুকূলে আসবে, প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন।
তার জন্যই এটা বলব না, অমুক দলটাকে হারাতে চাই বা অমুক দলের বিপক্ষে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে
যেখানেই থাকি না কেন, সব সময়ই খেলার ব্যাপারটাকে এভাবেই দেখি আমি।
তবে এটুকু বলব, পাকিস্তান সব সময় একটু বেশিই শক্তিশালী আমাদের জন্য। কারণ, আমাদের যেটা শক্তির দিক, মানে আমাদের স্পিন, সেই স্পিনে আবার পাকিস্তান খুবই ভালো। হাফিজ, আকমল, আফ্রিদি—ওদের স্পিন আক্রমণও দারুণ।
তার অর্থ এই নয় যে, ভারত-শ্রীলঙ্কা পিছিয়ে আছে। মোটেও না। ভারত বাজে একটা সময় কাটিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তারা নিশ্চয়ই ঢাকায় ফাটাফাটি কিছু করতে চাইবে। ঢাকায় ভারত আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলতে চাইবে। ভারত-শ্রীলঙ্কা মূলত ব্যাটিংনির্ভর। শ্রীলঙ্কার অবশ্য বোলিংটাও ভালো। যদিও মালিঙ্গার মতো বোলারও অস্ট্রেলিয়ায় তেমন কিছু করতে পারেনি। সব মিলিয়ে এশিয়া কাপ হবে পাকিস্তানের বোলিং আর ভারত-শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের লড়াই।
যদি আমার কাছে জানতে চান, তিন পরাশক্তির মধ্যে কারা এগিয়ে? আমার চোখে পাকিস্তান। সেটি তাদের ওই ক্ষুরধার স্পিন আক্রমণের জন্য। আমাদের স্পিন উইকেটে তো সেটি আরও বেশি প্রযোজ্য। গুলও যেকোনো কন্ডিশনে ভালো পেসার।
যা-ই হোক, আমরা এশিয়া কাপ খেলতে নামছি, এটা যেন মনে না আনি। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, আমরা কাপ জেতার জন্য খেলছি না। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। কেউ আমাদের বলছে না, তোমাদের এশিয়া কাপ জিততে হবে। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। মানুষ আমাদের কাছে ভালো ক্রিকেট চায় এবং সেটি খেলতে পারলে আমরা জিতেও যেতে পারি। সেদিক থেকে চমকের আশা তো আপনি করতেই পারেন। আমরাও চাইব চমক দিতে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ কিছু দিন পর ফিরছি। জানি, সবাই আলাদা করে দেখবে, আমি কেমন করি। আমি নিজে কিন্তু কোনো লক্ষ্য দাঁড় করাইনি। শুধু এবার নয়, কখনোই করি না। হ্যাঁ, দলে জায়গা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা সবারই থাকে। আমিও ব্যতিক্রম নই। তার জন্য যা করণীয়, সবই করব আমি।

No comments

Powered by Blogger.