বঙ্গবন্ধুকে রেসকোর্সে নেয়া হয় কৌশলে, পথ পাল্টে- ৭ মার্চ হামলার আশঙ্কা ছিল ॥ সাক্ষাতকারে আব্দুর রাজ্জাক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার
নানা ষড়যন্ত্র চলছিল। শোনা যাচ্ছিল-এমনকি হতে পারে কমান্ডো হামলা। এমন
পরিস্থিতিতে রেসকোর্সে ভাষণের আগে-পরে বঙ্গবন্ধুকে আনা-নেয়ার দায়িত্ব ছিল
আমার ওপর।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেই
দায়িত্ব ছিল আমার। ধানম-ির ৩২ নম্বর বাসা থেকে সমাবেশস্থলে আনা-নেয়ায়
বিশেষ কৌশল নিতে হয়েছিল। পূর্ব পরিকল্পিত যাত্রাপথ পাল্টে বঙ্গবন্ধুকে আনা
হয় রেসকোর্সে। ভাষণের পরেও বদলাতে হয়েছিল পথ। ধানম-ি থেকে রেসকোর্স হয়ে
ফের বাসায় পেঁৗছে দেয়ার পরই স্বসত্মি বোধ করছিলাম। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর
রাজ্জাক এক সাৰাতকারে এ কথা জানান। বর্তমানে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও সংসদ
সদস্য জনাব রাজ্জাক জানান, ১৯৭১ সালে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ১ মার্চেই
বঙ্গবন্ধু সিদ্ধানত্ম দেন ৭ মার্চে ভাষণ দেবেন তিনি। এ সময় দলমত নির্বিশেষে
ছাত্র-যুবা, আওয়ামী লীগসহ শীর্ষনেতারা গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তাদের মতামত
দিতেন। ৩ মার্চ পলন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা আসে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে ভাষণ দেবেন। ওইদিন কী ঘোষণা দেবেন
বঙ্গবন্ধু? এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। আগের দিন (৬ মার্চ) ইকবাল হল থেকে সব
ছাত্র আমার কাছে এসে দাবি করল, কাল (৭ মার্চ) যেন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন
বঙ্গবন্ধু। রাতে ৩২ নম্বরে গেলাম। বঙ্গবন্ধু বাসার উপরতলায় ছিলেন। অনেকের
মাঝে স্বাধীনতার ডাক দেয়া নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে। তাদের মত, স্বাধীনতার ঘোষণা
দিলেই তো দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন-চুপ থাক। টিপিক্যাল
ওয়েতে বঙ্গবন্ধু আমাকে চোখ টিপ দিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, যথাসময়ে সঠিক কথাটাই
বলব আমি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুকে ৭ মার্চ রেসকোর্সে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করি। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া ও আনার। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকার।
৭ মার্চ। আমার জীবনের অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ একটি দিন। ৭ মার্চের সকাল থেকেই আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে। ঠিক হলো তিনটি গাড়ি আমাদের সঙ্গে রেসকোর্সে যাবে। দু'টি গাড়িতে থাকবে যাদের গোঁফ আছে এবং তাদের পরনে থাকবে পাঞ্জাবি। চুল থাকবে ব্যাক ব্রাশ করা। সামনের গাড়িতে আমরা। ঠিক দুইটার সময় ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বের হন বঙ্গবন্ধু।
আমি অত্যনত্ম চিনত্মিত ছিলাম। কোন অঘটন ঘটে কিনা! তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র চারদিকে। বলা হয়েছিল-কমান্ডো এ্যাটাক করে হত্যা করা হবে। আকাশে হেলিকপ্টারও ঘুরছে। এ্যাটাক হলে বাঁচানো যাবে না।
৩২ নম্বর থেকে এলিফ্যান্ট রোড, তৎকালীন পিজি হাসপাতালের পাশ দিয়ে রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়াদর্ী উদ্যান) যাওয়ার কথা।
যাত্রার শুরম্নতেই তাৎণিকভাবে আগের সব পরিকল্পনা বদলে ফেলি। আমি কৌশলটা নিলাম-যেভাবে যাওয়ার কথা ওভাবে যাবও না। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের গাড়িতে তুললাম। গাড়ির ভেতরে বঙ্গবন্ধুকে রেখে আমরা এমনভাবে দাঁড়ালাম যাতে তাকে দেখা না যায়।
এবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রওনা দিলাম নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে হাইকোর্টের পাশ দিয়ে রেসকোর্সের পথে। বিশাল জনতার ঢেউয়ের মধ্যে সোজা মঞ্চে উঠলেন তিনি। পেছনে দাঁড়িয়ে মহিউদ্দিন, আমি আর গাজীউল হক। সমাবেশে কোন সভাপতি ছিল না।
গিয়েই বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন, মাইকটা দে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু-সেস্নাগান দুটি দিতে দিতেই বঙ্গবন্ধুকে মাইক দিই।
এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। ১৭ মিনিটে ঐতিহাসিক ভাষণটি শেষ করেন তিনি।
লাখ-লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন প্রতিটি কথা। আর আমার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আশঙ্কার। কারণ মাথার উপরে তখনও হেলিকপ্টার ঘুরছে।
ওই ভাষণেই সব নির্দেশনা পেয়ে গেলাম আমরা। জাতির জনক ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, ডাক দেন স্বাধীনতা সংগ্রামের। মনে হলো, আজকে থেকেই আমরা লডাই শুরম্ন করে দিলাম। দেশ স্বাধীন হবেই। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ভাষণ দিয়ে নেমেই বঙ্গবন্ধু সোজা ওঠেন গাড়িতে। কেউ জানে না আমরা কোন্ দিকে কোথায় যাচ্ছি। সেই একই কায়দায় (আগের পরিকল্পনা পাল্টে)। সমাবেশস্থল থেকে শাহজাহানপুর, মতিঝিল কলোনির পাশ দিয়ে (আজকের) শেরে বাংলানগর হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে।
স্বসত্মি পেয়েছি, বঙ্গবন্ধুকে একেবারে সঠিকভাবে বাড়িতে পেঁৗছে দিতে পেরে।
আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু রাজাকারমুক্ত হয়নি। এটাই দুঃখজনক। আজ পর্যনত্ম দেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পায়নি। অর্থনৈতিক, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শানত্মি পাবে।
এখন বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমার তিনটি চাওয়া। দেশকে রাজাকারমুক্ত করতে হবে, সুখী সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর সোনার বাংলা গড়তে হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। এই তিনটি কাজই এগিয়ে নিয়ে যাক নতুন প্রজন্ম।
এদিকে বঙ্গবন্ধুকে ৭ মার্চ রেসকোর্সে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করি। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া ও আনার। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকার।
৭ মার্চ। আমার জীবনের অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ একটি দিন। ৭ মার্চের সকাল থেকেই আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে। ঠিক হলো তিনটি গাড়ি আমাদের সঙ্গে রেসকোর্সে যাবে। দু'টি গাড়িতে থাকবে যাদের গোঁফ আছে এবং তাদের পরনে থাকবে পাঞ্জাবি। চুল থাকবে ব্যাক ব্রাশ করা। সামনের গাড়িতে আমরা। ঠিক দুইটার সময় ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বের হন বঙ্গবন্ধু।
আমি অত্যনত্ম চিনত্মিত ছিলাম। কোন অঘটন ঘটে কিনা! তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র চারদিকে। বলা হয়েছিল-কমান্ডো এ্যাটাক করে হত্যা করা হবে। আকাশে হেলিকপ্টারও ঘুরছে। এ্যাটাক হলে বাঁচানো যাবে না।
৩২ নম্বর থেকে এলিফ্যান্ট রোড, তৎকালীন পিজি হাসপাতালের পাশ দিয়ে রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়াদর্ী উদ্যান) যাওয়ার কথা।
যাত্রার শুরম্নতেই তাৎণিকভাবে আগের সব পরিকল্পনা বদলে ফেলি। আমি কৌশলটা নিলাম-যেভাবে যাওয়ার কথা ওভাবে যাবও না। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের গাড়িতে তুললাম। গাড়ির ভেতরে বঙ্গবন্ধুকে রেখে আমরা এমনভাবে দাঁড়ালাম যাতে তাকে দেখা না যায়।
এবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রওনা দিলাম নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে হাইকোর্টের পাশ দিয়ে রেসকোর্সের পথে। বিশাল জনতার ঢেউয়ের মধ্যে সোজা মঞ্চে উঠলেন তিনি। পেছনে দাঁড়িয়ে মহিউদ্দিন, আমি আর গাজীউল হক। সমাবেশে কোন সভাপতি ছিল না।
গিয়েই বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন, মাইকটা দে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু-সেস্নাগান দুটি দিতে দিতেই বঙ্গবন্ধুকে মাইক দিই।
এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। ১৭ মিনিটে ঐতিহাসিক ভাষণটি শেষ করেন তিনি।
লাখ-লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন প্রতিটি কথা। আর আমার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আশঙ্কার। কারণ মাথার উপরে তখনও হেলিকপ্টার ঘুরছে।
ওই ভাষণেই সব নির্দেশনা পেয়ে গেলাম আমরা। জাতির জনক ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, ডাক দেন স্বাধীনতা সংগ্রামের। মনে হলো, আজকে থেকেই আমরা লডাই শুরম্ন করে দিলাম। দেশ স্বাধীন হবেই। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ভাষণ দিয়ে নেমেই বঙ্গবন্ধু সোজা ওঠেন গাড়িতে। কেউ জানে না আমরা কোন্ দিকে কোথায় যাচ্ছি। সেই একই কায়দায় (আগের পরিকল্পনা পাল্টে)। সমাবেশস্থল থেকে শাহজাহানপুর, মতিঝিল কলোনির পাশ দিয়ে (আজকের) শেরে বাংলানগর হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে।
স্বসত্মি পেয়েছি, বঙ্গবন্ধুকে একেবারে সঠিকভাবে বাড়িতে পেঁৗছে দিতে পেরে।
আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু রাজাকারমুক্ত হয়নি। এটাই দুঃখজনক। আজ পর্যনত্ম দেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পায়নি। অর্থনৈতিক, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শানত্মি পাবে।
এখন বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমার তিনটি চাওয়া। দেশকে রাজাকারমুক্ত করতে হবে, সুখী সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর সোনার বাংলা গড়তে হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। এই তিনটি কাজই এগিয়ে নিয়ে যাক নতুন প্রজন্ম।
No comments