কেমন আছেন ভাষাসৈনিকরা-আহমদ রফিক লেখালেখি নিয়েই মগ্ন by আজিজুল পারভেজ
লেখালেখি আর গবেষণায় মগ্ন এখন ভাষাসৈনিক
আহমদ রফিক। ব্যক্তিজীবনে নিঃসঙ্গ এই গুণী মানুষের একাকিত্ব কাটে লেখালেখি
আর গবেষণায়। সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি নিয়মিত লেখেন সংবাদপত্রে। গবেষণা করেন
রবীন্দ্রনাথের ওপর। লেখেন কবিতাও।
ছাত্রজীবনে সেই যে
জড়িয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে, এখনো সেই আন্দোলনেই আছেন। সর্বত্র বাংলা ভাষার
প্রচলন নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তাঁর বর্তমান আন্দোলনের স্লোগান
'বাংলায় বলুন বাংলায় লিখুন'। কাজ করছেন জাতির মননশীলতার বিকাশ নিয়ে।
আহমদ রফিকের বয়স এখন ৮৪ বছর। জন্মেছিলেন কুমিল্লার শাহবাজপুরে ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে। সাহিত্য সাধনা আর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে নড়াইল মহকুমা স্কুলে অধ্যয়নকালে। নেতাজী সুভাষ বসুর আন্দোলন আর কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা তাঁকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করে। যোগ দিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের ছাত্র কংগ্রেসে। সে ধারায় দেশভাগের পর যোগ দেন বাম রাজনীতিতে। ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। বায়ান্নর ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের বৈঠক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নিয়েছেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেছেন। কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আত্মগোপনে থাকা রাজনৈতিক নেতা ও মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারীদের যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের পর আহমদ রফিক আন্দোলনকারীদের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছিলেন মেডিক্যাল ব্যারাক প্রাঙ্গণে। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনের এই অন্যতম সংগঠক এখনো সক্রিয় সাহিত্য-সংস্কৃতির বহুমাত্রিক কাজে। ১৯৮৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় 'রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র' নামের একটি ট্রাস্ট। তিনি এ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। 'একুশে চেতনা পরিষদের'ও সভাপতি তিনি। এই সংগঠনটি কাজ করছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিয়ে। এবার একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, দোকানপাটের নাম বাংলায় রাখার এবং বাংলায় ফলক ও পরিচিতি লেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণার জন্য তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, রবীন্দ্র পদক এবং রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
আহমদ রফিক বসবাস করেন নিউ ইস্কাটনের একটি ভাড়া বাসায়। স্ত্রী মারা গেছেন ২০০৬ সালে। তিনি নিঃসন্তান। তাঁকে দেখাশোনার জন্য আছেন দুজন। তারাই এখন তার আপনজন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আমি ভালোই আছি। একাকিত্ব অনুভব করি না। লেখালেখি নিয়েই মগ্ন থাকি।' ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''ভাষা আন্দোলন শুধুই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল না; অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও ছিল। আমাদের প্রথম স্লোগান ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। এর অর্থ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি সর্বত্র বাংলার প্রচলন ও বিকাশ। দ্বিতীয় স্লোগান ছিল 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই'। তার মানে তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। সেখানে অনেক কিছুর মধ্যে প্রধানত রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন ছিল।"
আহমদ রফিকের মতে, ভাষা আন্দোলনের প্রথম দাবিটাই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সর্বত্র বাংলার প্রচলন হয়নি। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা অনুপস্থিত। উচ্চ আদালতেও বাংলা নেই। তার ওপর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন এক প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যাদের কাছে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি অনুপস্থিত। শ্রেণী বৈষম্যের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, স্বাধীনতার পর সমাজের উচ্চ শ্রেণী এতটাই পরিপুষ্ট যে, অন্যদের দিকে তাকানোর সময় তাদের নেই। তারাই শাসনকার্য পরিচালনা করছে। শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন না হলে এ অবস্থা থেকে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে না।
আহমদ রফিক আশাবাদী বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে। তিনি বলেন, যে ছাত্র তরুণরা ভাষা আন্দোলনের মতো বিস্ফোরক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, তারাই আবার জেগে উঠবে।
আহমদ রফিকের বয়স এখন ৮৪ বছর। জন্মেছিলেন কুমিল্লার শাহবাজপুরে ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে। সাহিত্য সাধনা আর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে নড়াইল মহকুমা স্কুলে অধ্যয়নকালে। নেতাজী সুভাষ বসুর আন্দোলন আর কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা তাঁকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করে। যোগ দিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের ছাত্র কংগ্রেসে। সে ধারায় দেশভাগের পর যোগ দেন বাম রাজনীতিতে। ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। বায়ান্নর ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের বৈঠক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নিয়েছেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেছেন। কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আত্মগোপনে থাকা রাজনৈতিক নেতা ও মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারীদের যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের পর আহমদ রফিক আন্দোলনকারীদের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছিলেন মেডিক্যাল ব্যারাক প্রাঙ্গণে। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনের এই অন্যতম সংগঠক এখনো সক্রিয় সাহিত্য-সংস্কৃতির বহুমাত্রিক কাজে। ১৯৮৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় 'রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র' নামের একটি ট্রাস্ট। তিনি এ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। 'একুশে চেতনা পরিষদের'ও সভাপতি তিনি। এই সংগঠনটি কাজ করছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিয়ে। এবার একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, দোকানপাটের নাম বাংলায় রাখার এবং বাংলায় ফলক ও পরিচিতি লেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণার জন্য তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, রবীন্দ্র পদক এবং রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
আহমদ রফিক বসবাস করেন নিউ ইস্কাটনের একটি ভাড়া বাসায়। স্ত্রী মারা গেছেন ২০০৬ সালে। তিনি নিঃসন্তান। তাঁকে দেখাশোনার জন্য আছেন দুজন। তারাই এখন তার আপনজন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আমি ভালোই আছি। একাকিত্ব অনুভব করি না। লেখালেখি নিয়েই মগ্ন থাকি।' ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''ভাষা আন্দোলন শুধুই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল না; অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও ছিল। আমাদের প্রথম স্লোগান ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'। এর অর্থ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি সর্বত্র বাংলার প্রচলন ও বিকাশ। দ্বিতীয় স্লোগান ছিল 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই'। তার মানে তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। সেখানে অনেক কিছুর মধ্যে প্রধানত রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন ছিল।"
আহমদ রফিকের মতে, ভাষা আন্দোলনের প্রথম দাবিটাই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সর্বত্র বাংলার প্রচলন হয়নি। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা অনুপস্থিত। উচ্চ আদালতেও বাংলা নেই। তার ওপর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন এক প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যাদের কাছে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি অনুপস্থিত। শ্রেণী বৈষম্যের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, স্বাধীনতার পর সমাজের উচ্চ শ্রেণী এতটাই পরিপুষ্ট যে, অন্যদের দিকে তাকানোর সময় তাদের নেই। তারাই শাসনকার্য পরিচালনা করছে। শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন না হলে এ অবস্থা থেকে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে না।
আহমদ রফিক আশাবাদী বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে। তিনি বলেন, যে ছাত্র তরুণরা ভাষা আন্দোলনের মতো বিস্ফোরক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, তারাই আবার জেগে উঠবে।
No comments