নিত্যজাতম্-ভারতীয় ভিসা : আবেগকে মূল্য দিতে হবে by মহসীন হাবিব
আশি ও নব্বইয়ের দশকেও আমরা দেখেছি, পশ্চিম বাংলায় যেতে ভিসার জন্য বেশির ভাগ মানুষ দৌড়ঝাঁপ করত না। প্রয়োজনে টিকিট কেটে বর্ডারে গিয়ে ওখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে আবার অন্য গাড়িতে কলকাতা।
সবাই মনে মনে জানত, ভারত ও বাংলাদেশের সরকারও জানত এটি অন্যায়, তবে কাউকে শাস্তি দেওয়ার মতো অন্যায় বা অপরাধ বলে গণ্য করার পরিবেশ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নেই। দুই দেশের দণ্ডবিধিতে যা-ই লেখা থাকুক, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জওয়ান- সবাই জানতেন, বাধা দেওয়ার তেমন কিছু নেই। অসংখ্য মানুষের পাসপোর্ট ছাড়া পারাপার হওয়াটা একটা নিয়মিত ব্যাপার বলেই বিবেচনা করা হতো। মানবিক বিষয়টাও দুই সরকারের লোকেরা অনুধাবন করতেন। এপারে মা থাকেন তো ওপারে ছেলে; ওপারে ভাই তো এপারে বোন। দূর থেকে সীমান্তরক্ষীরা দেখতেন, মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে। তাঁরাও জানতেন এই আত্মীয়তার কথা। কখনো কখনো দেখেও না দেখার ভান করতেন। মাঝেমধ্যে মৃদু নিয়ন্ত্রণও করতেন বিশেষ দুটি কারণে। একটি হলো, লোক পারাপার ঘিরে, অর্থাৎ ক্ষেত-খামারের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়াকে একদল মানুষ পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যাদের দালাল বলা হয়। এই মানুষগুলো সীমান্তে টু-পাইস বখরা দিত সীমান্তরক্ষীদের, যাতে অবাধে লোকগুলোকে পার করতে পারে। কিন্তু মাঝেমধ্যে অভিযান না চালালে ওরা বখরাটা ঠিকমতো দিত না। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল, শত হলেও তো দুটো ভিন্ন দেশের সীমান্ত, শতভাগ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে দিলে বহু নতুন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে জনগণ মনে করত, সর্বদা ভিসার জন্য অপেক্ষা করা, ভিসা গ্রহণ করতে গিয়ে বাড়তি অর্থ খরচ করা, রাজধানী ঢাকায় অথবা কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি উপহাইকমিশনে ধরনা দেওয়া বড় ঝামেলার বিষয়। তাই ছয় ফুট অথবা গলা ধাক্কায় (এই চমৎকার শব্দ দুটোর প্রচলন ছিল সীমান্ত এলাকায় যাঁরা যাতায়াত করতেন, তাঁরা জানতেন, পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে বিনা পাসপোর্টে যাওয়াকে ছয় ফুট বলা হতো পাসপোর্টের সঙ্গে শব্দের মিল থাকায়। যার হাতে কোনো কাগজ নেই, তাকে করুণা করে চলে যেতে দেওয়ার মর্মার্থ হলো, গলা ধাক্কা)। লক্ষণীয় বিষয়, পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে দুই সতিনের মতো সম্পর্কের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনটি বড় ধরনের যুদ্ধ হয়ে গেলেও এবং বাংলাদেশ পাঞ্জাবি শাসকদের অধীনে থাকা সত্ত্বেও দুই বাংলার মধ্যে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু সে দৃশ্য মাত্র এক দশকেই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ২০০১ সালের পর দিন দিন যেন শক্ত থেকে শক্ত হয়ে উঠেছে সীমান্ত-দেয়াল। তা যেমন কিছুটা নিরাপত্তার স্বার্থে, আবার কিছুটা দুপাশেই সাম্প্রদায়িক চেতনা ফুঁসে ওঠার কারণেও। এ কারণেই এই সৌহার্দ্যের সীমান্তকে বৈরী হয়ে উঠতে দেখা গেছে অনেকবার।
ওপরের সব কথাই আবেগের কথা। অন্তত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো অথবা কোনো কনফেডারেশন না হলে দুটি পৃথক দেশের সীমান্তে অবাধ যাতায়াত বন্ধ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে হলে এখন পর্যন্ত মানুষের পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। ভিসামুক্ত পৃথিবীর জন্য এই পৃথিবীর মানুষ এখনো উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। সুতরাং ভিসা নিয়ে কোনো কথা নেই। কথা অন্যখানে।
বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের ভিসাপ্রাপ্তি রীতিমতো দুরূহ হয়ে আছে। সেটা ভারতের ভিসা না দেওয়ার প্রবণতা থেকে নয়; ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে ভিসা-প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও কঠোর স্ক্রুটিনি শুরু হয়। সেটা অবশ্য অযৌক্তিক ছিল না। বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু জঙ্গি, চরমপন্থী ভারতে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে এমন কিছু কাণ্ড ঘটিয়েছে, যাতে আমরা অস্বস্তিতে পড়েছি। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনকে বুঝতে হবে, সে অবস্থা এখন আর নেই। সশস্ত্র জঙ্গি তৎপরতা অনেক প্রশমিত হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, এ দেশ থেকে যদি কেউ নাশকতার জন্য ভারতে প্রবেশ করে, তাহলে সে পাসপোর্টসহ কাগজপত্র হাতে ও ব্যাগভর্তি বোমা নিয়ে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পার হবে না। এটা খুব সাধারণ জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। এ দেশ থেকে বেশির ভাগ মানুষ যায় হয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে, অথবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। এই দুই শ্রেণীর ভিসাপ্রার্থীকে দেখলেই বোঝা যায়। ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বহু দূরের মানুষ নন। তাঁরা এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত। মানুষের চেহারা দেখলেই তাঁরা বুঝতে পারেন, কার কী মতলব, কার কতটা ভারত সফর প্রয়োজন। কিন্তু কী দিয়ে যে কী হলো, ভারতের ভিসার জন্য উদ্বেগের সঙ্গে দিনের পর দিন বসে থাকতে দেখছি চিকিৎসার জন্য ভিসাপ্রার্থীকে। তাই আশা জেগে উঠল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর দেখে। এবার বুঝি বিড়ম্বনা কমল।
একটি চার্টার্ড প্লেনে করে ১৫ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। ঝটিকা সফরই বলা যায়। ২৮ জানুয়ারি এসে ২৯ জানুয়ারি চলে গেলেন। অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুটি চুক্তি সেরে গেলেন। একটি বন্দিবিনিময় চুক্তি, আরেকটি হলো সংশোধিত ভিসা-বিষয়ক চুক্তি। এটি মূলত ২০০১ সালের চুক্তির সংশোধন। কূটনীতিক ক্যাটাগরিতে ভিসার মেয়াদ ৩০ দিনের বদলে ৪৫ দিন করা হয়েছে। সেখানে প্রচেষ্টা ছিল অবশ্যই ভিসা-বিষয়ক জটিলতা যেন দূর হয়, তা সমাধান করার। অফিসিয়াল ক্যাটাগরিতে আগে ভিসা ছাড়া প্রবেশাধিকার ছিল না, এবার সেটা করার পাশাপাশি ৪৫ দিন অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব খুবই ইতিবাচক ব্যবস্থা। কিন্তু গোড়ার একটি সমস্যা বিবেচনায় রাখা দরকার। তা হলো, ভিসা-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ঝামেলা। এ জন্য কোনো চুক্তির দরকার নেই, শুধু প্রয়োজন একটু অধিক আন্তরিকতা এবং দুই দেশের মানুষের আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া।
শিব নারায়ণ রায়ের উক্তি উল্লেখ না করে পারছি না। তিনি লিখেছেন, 'মাঝে মাঝে শোনা যায়, পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রব্রাজন বন্ধ করবার জন্য হাজার মাইলব্যাপী কাঁটাতারের বেড়া নাকি ভারত সরকার খাড়া করবে। এর চাইতে পাগলামি আর কী হতে পারে? আমার ছাড়পত্রে লেখা আছে, আমি ভারতীয় নাগরিক এবং যেহেতু এই ছাড়পত্র না থাকলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আমার প্রবেশ ও চলাফেরা নিষিদ্ধ হতো, এটিকে আমি সযত্নে রক্ষা করতে বাধ্য। নাগরিক হিসেবে এ দেশের আইনকানুন-ব্যবস্থাদি মেনে আমাকে চলতে হয় বটে; কিন্তু এ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাষ্ট্রিক-আর্থিক- প্রতিষ্ঠিত সব ব্যবস্থার আমূল রূপান্তর আমার কাম্য। গত ৫০ বছর ধরে সে কথা আমি বলে ও লিখে আসছি।'
তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোয়ালবাগানে। কিন্তু পিতৃভূমি বরিশালকেই মনে করতেন নিজের ঠিকানা। সদ্যপ্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেকে আমৃত্যু মাদারীপুরের মানুষ বলেই মনে করেছেন। দুই দেশেই এখনো এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের হৃদয় পড়ে আছে কাঁটাতারের বেড়ার অন্য পাশে। রাষ্ট্রিক আইনকানুন আছে বটে; কিন্তু রাষ্ট্র কি এই বিপুলসংখ্যক মানুষের আবেগকে চোখ বুজে অবহেলা করবে? যদি তা না করে, তাহলে ভারতীয় হাইকমিশনকে অনুরোধ করব, বৃদ্ধ শয্যাশায়ী যে মা ভিসার জন্য অপেক্ষা করে আছেন ১০ দিন ধরে, নাই বা দেখা হোক তাঁর কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে। সে আন্তরিকতার দাবি ভারতের কাছে বাংলাদেশ করতেই পারে।
লেখক : সাংবাদিক
mohshinhabib@yahoo.com
অন্যদিকে জনগণ মনে করত, সর্বদা ভিসার জন্য অপেক্ষা করা, ভিসা গ্রহণ করতে গিয়ে বাড়তি অর্থ খরচ করা, রাজধানী ঢাকায় অথবা কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি উপহাইকমিশনে ধরনা দেওয়া বড় ঝামেলার বিষয়। তাই ছয় ফুট অথবা গলা ধাক্কায় (এই চমৎকার শব্দ দুটোর প্রচলন ছিল সীমান্ত এলাকায় যাঁরা যাতায়াত করতেন, তাঁরা জানতেন, পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে বিনা পাসপোর্টে যাওয়াকে ছয় ফুট বলা হতো পাসপোর্টের সঙ্গে শব্দের মিল থাকায়। যার হাতে কোনো কাগজ নেই, তাকে করুণা করে চলে যেতে দেওয়ার মর্মার্থ হলো, গলা ধাক্কা)। লক্ষণীয় বিষয়, পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে দুই সতিনের মতো সম্পর্কের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনটি বড় ধরনের যুদ্ধ হয়ে গেলেও এবং বাংলাদেশ পাঞ্জাবি শাসকদের অধীনে থাকা সত্ত্বেও দুই বাংলার মধ্যে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু সে দৃশ্য মাত্র এক দশকেই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ২০০১ সালের পর দিন দিন যেন শক্ত থেকে শক্ত হয়ে উঠেছে সীমান্ত-দেয়াল। তা যেমন কিছুটা নিরাপত্তার স্বার্থে, আবার কিছুটা দুপাশেই সাম্প্রদায়িক চেতনা ফুঁসে ওঠার কারণেও। এ কারণেই এই সৌহার্দ্যের সীমান্তকে বৈরী হয়ে উঠতে দেখা গেছে অনেকবার।
ওপরের সব কথাই আবেগের কথা। অন্তত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো অথবা কোনো কনফেডারেশন না হলে দুটি পৃথক দেশের সীমান্তে অবাধ যাতায়াত বন্ধ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে হলে এখন পর্যন্ত মানুষের পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। ভিসামুক্ত পৃথিবীর জন্য এই পৃথিবীর মানুষ এখনো উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। সুতরাং ভিসা নিয়ে কোনো কথা নেই। কথা অন্যখানে।
বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের ভিসাপ্রাপ্তি রীতিমতো দুরূহ হয়ে আছে। সেটা ভারতের ভিসা না দেওয়ার প্রবণতা থেকে নয়; ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে ভিসা-প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও কঠোর স্ক্রুটিনি শুরু হয়। সেটা অবশ্য অযৌক্তিক ছিল না। বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু জঙ্গি, চরমপন্থী ভারতে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে এমন কিছু কাণ্ড ঘটিয়েছে, যাতে আমরা অস্বস্তিতে পড়েছি। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনকে বুঝতে হবে, সে অবস্থা এখন আর নেই। সশস্ত্র জঙ্গি তৎপরতা অনেক প্রশমিত হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, এ দেশ থেকে যদি কেউ নাশকতার জন্য ভারতে প্রবেশ করে, তাহলে সে পাসপোর্টসহ কাগজপত্র হাতে ও ব্যাগভর্তি বোমা নিয়ে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পার হবে না। এটা খুব সাধারণ জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। এ দেশ থেকে বেশির ভাগ মানুষ যায় হয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে, অথবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। এই দুই শ্রেণীর ভিসাপ্রার্থীকে দেখলেই বোঝা যায়। ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বহু দূরের মানুষ নন। তাঁরা এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত। মানুষের চেহারা দেখলেই তাঁরা বুঝতে পারেন, কার কী মতলব, কার কতটা ভারত সফর প্রয়োজন। কিন্তু কী দিয়ে যে কী হলো, ভারতের ভিসার জন্য উদ্বেগের সঙ্গে দিনের পর দিন বসে থাকতে দেখছি চিকিৎসার জন্য ভিসাপ্রার্থীকে। তাই আশা জেগে উঠল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর দেখে। এবার বুঝি বিড়ম্বনা কমল।
একটি চার্টার্ড প্লেনে করে ১৫ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। ঝটিকা সফরই বলা যায়। ২৮ জানুয়ারি এসে ২৯ জানুয়ারি চলে গেলেন। অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুটি চুক্তি সেরে গেলেন। একটি বন্দিবিনিময় চুক্তি, আরেকটি হলো সংশোধিত ভিসা-বিষয়ক চুক্তি। এটি মূলত ২০০১ সালের চুক্তির সংশোধন। কূটনীতিক ক্যাটাগরিতে ভিসার মেয়াদ ৩০ দিনের বদলে ৪৫ দিন করা হয়েছে। সেখানে প্রচেষ্টা ছিল অবশ্যই ভিসা-বিষয়ক জটিলতা যেন দূর হয়, তা সমাধান করার। অফিসিয়াল ক্যাটাগরিতে আগে ভিসা ছাড়া প্রবেশাধিকার ছিল না, এবার সেটা করার পাশাপাশি ৪৫ দিন অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব খুবই ইতিবাচক ব্যবস্থা। কিন্তু গোড়ার একটি সমস্যা বিবেচনায় রাখা দরকার। তা হলো, ভিসা-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ঝামেলা। এ জন্য কোনো চুক্তির দরকার নেই, শুধু প্রয়োজন একটু অধিক আন্তরিকতা এবং দুই দেশের মানুষের আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া।
শিব নারায়ণ রায়ের উক্তি উল্লেখ না করে পারছি না। তিনি লিখেছেন, 'মাঝে মাঝে শোনা যায়, পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রব্রাজন বন্ধ করবার জন্য হাজার মাইলব্যাপী কাঁটাতারের বেড়া নাকি ভারত সরকার খাড়া করবে। এর চাইতে পাগলামি আর কী হতে পারে? আমার ছাড়পত্রে লেখা আছে, আমি ভারতীয় নাগরিক এবং যেহেতু এই ছাড়পত্র না থাকলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আমার প্রবেশ ও চলাফেরা নিষিদ্ধ হতো, এটিকে আমি সযত্নে রক্ষা করতে বাধ্য। নাগরিক হিসেবে এ দেশের আইনকানুন-ব্যবস্থাদি মেনে আমাকে চলতে হয় বটে; কিন্তু এ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাষ্ট্রিক-আর্থিক- প্রতিষ্ঠিত সব ব্যবস্থার আমূল রূপান্তর আমার কাম্য। গত ৫০ বছর ধরে সে কথা আমি বলে ও লিখে আসছি।'
তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোয়ালবাগানে। কিন্তু পিতৃভূমি বরিশালকেই মনে করতেন নিজের ঠিকানা। সদ্যপ্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেকে আমৃত্যু মাদারীপুরের মানুষ বলেই মনে করেছেন। দুই দেশেই এখনো এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের হৃদয় পড়ে আছে কাঁটাতারের বেড়ার অন্য পাশে। রাষ্ট্রিক আইনকানুন আছে বটে; কিন্তু রাষ্ট্র কি এই বিপুলসংখ্যক মানুষের আবেগকে চোখ বুজে অবহেলা করবে? যদি তা না করে, তাহলে ভারতীয় হাইকমিশনকে অনুরোধ করব, বৃদ্ধ শয্যাশায়ী যে মা ভিসার জন্য অপেক্ষা করে আছেন ১০ দিন ধরে, নাই বা দেখা হোক তাঁর কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে। সে আন্তরিকতার দাবি ভারতের কাছে বাংলাদেশ করতেই পারে।
লেখক : সাংবাদিক
mohshinhabib@yahoo.com
No comments