পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর একত্ববাদের মূল কথা সত্যকে জীবনে ধারণ ও অনুশীলন করা
৩৪. ক্বুল হাল মিন শুরাকা-য়িকুম্ মান
ইয়্যাবদাউল খালক্বা ছুম্মা ইঊঈদুহূ; ক্বুলিল্লা-হু ইয়াব্দাউল খালক্বা
ছুম্মা ইউঈদুহূ ফাআন্না- তু'ফাকূন। ৩৫. ক্বুল হাল মিন শুরাকা-য়িকুম্ মান
ইয়্যাহ্দী ইলাল হাক্কি; ক্বুলিল্লা-হু ইয়াহ্দী লিলহাক্কি; আফামান ইয়্যাহ্দী
ইলাল হাক্কি আহাক্কু আন ইয়্যুত্তাবাআ' আম্মান লা ইয়াহিদ্দী ইল্লা আন
ইউহ্দা-; ফামা- লাকুম কাইফা তাহ্কুমূন।
৩৬. ওয়া মা-
ইয়াত্তাবিউ' আকছারুহুম ইল্লা- যান্না-; ইন্নায্ যান্না লা-ইউগ্নী মিনাল
হাক্কি শাইআন, ইন্নাল্লা-হা আ'লীমুম্ বিমা- ইয়াফআ'লূন।
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩৪-৩৬]
অনুবাদ : ৩৪. হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা যাদের আল্লাহর শরিক বানাও, তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিরাজিকে সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথমে অস্তিত্বদান করেন। এরপর তাদের আত্মিক জগতে ফিরিয়ে আনেন। বলুন, আল্লাহই সৃষ্টিরাজিকে প্রথম সৃষ্টির মাধ্যমে অস্তিত্ব দান করেন। এরপর মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের আত্মিক জগতে ফিরিয়ে আনেন। এর পরও তোমাদের বিপথগামী করা হচ্ছে।
৩৫. বলুন, তোমরা যাদের আল্লাহর শরিক বানাও, তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে সত্যের পথ দেখায়? বলুন, আল্লাহই সত্যের পথ দেখান। যিনি সত্যের পথ দেখান তিনিই কি আনুগত্য পাওয়ার অধিক যোগ্য নন, তার চেয়ে যে নিজেই নিজের পথ খুঁজে পায় না, অন্য কেউ তাকে পথ দেখাতে হয়? আসলে তোমাদের কী হলো! কী ধরনের সিদ্ধান্ত তোমরা গ্রহণ করো!
৩৬. এদের মধ্যে (মুশরিকদের মধ্যে) অনেকেই কেবল অমূলক ধারণা অনুসরণ করে চলে। আর এটা তো নিশ্চিত যে সত্যের বিপরীতে অমূলক ধারণা কোনো কাজে আসে না। তারা যা কিছু করে, আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের তাৎপর্য ও স্বরূপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্বজগতের সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের পার্থিব ও আত্মিক জীবন সৃষ্টি ও আবর্তিত করার এই যে মহান অবস্থানে অধিষ্ঠিত আল্লাহ, তাঁর সঙ্গে শরিক করার কোনো যৌক্তিক কারণ একেবারেই নেই। অথচ মুশরিকরা তা করছে। ৩৪ নম্বর আয়াতে এ বিষয়টা খুব জোরালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। সৃষ্টি বা 'খালক' শব্দটির সঙ্গে এখানে 'প্রথম সৃষ্টি' শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিশ্লেষণেও আমরা দেখতে পাই, মানুষ মূলত কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু ও প্রকৃতিকে অবলম্বন করে মানুষ এর নতুন নতুন রূপদান করতে পারে। কিন্তু মূল সৃষ্টির ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। মানুষের ইহজাগতিক বাস্তব জীবন এবং পরকালীন আত্মিক জীবন একমাত্র আল্লাহরই সৃষ্টি, এমন সক্ষমতা অন্য কারো নেই- এ কথা মুশরিকরাও স্বীকার করত এবং সর্বকালের সব মানুষই স্বীকার করতে বাধ্য।
৩৫ নম্বর আয়াতে একত্ববাদের প্রায়োগিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, একত্ববাদ এবং বহুত্ববাদ নিতান্ত তাত্তি্বক আলোচনা। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই সে রকম নয়। জীবন ও জগতের সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য একত্ববাদ একান্ত প্রয়োজন। এক আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের প্রতিভূ। তিনি একমাত্র সত্য, ন্যায়, শান্তি ও সুন্দরের পথ দেখান। সুতরাং মানুষের উচিত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করা এবং যারা নিজেরাই বিভ্রান্ত বা নিজেদের পথ খুঁজে পেতেই অক্ষম, তাদের পরিহার করা। মানুষের জীবন এবং মানব সমাজে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একত্ববাদকে ধারণ করা যে একান্ত দরকার, সেটাই এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বিষয়টা এতটা স্পষ্ট হওয়ার পরও মানুষ কেন শিরক বা বহুত্ববাদের বিভ্রান্তির দিকে যায়, সে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।
৩৬ নম্বর আয়াতে সত্য এবং অমূলক ধারণার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর একত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করে, তারা আসলে অমূলক ধারণার ওপর নির্ভর করেই তা করে। কিন্তু অমূলক ধারণা দিয়ে সত্যকে নাকচ করার চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩৪-৩৬]
অনুবাদ : ৩৪. হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা যাদের আল্লাহর শরিক বানাও, তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিরাজিকে সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথমে অস্তিত্বদান করেন। এরপর তাদের আত্মিক জগতে ফিরিয়ে আনেন। বলুন, আল্লাহই সৃষ্টিরাজিকে প্রথম সৃষ্টির মাধ্যমে অস্তিত্ব দান করেন। এরপর মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের আত্মিক জগতে ফিরিয়ে আনেন। এর পরও তোমাদের বিপথগামী করা হচ্ছে।
৩৫. বলুন, তোমরা যাদের আল্লাহর শরিক বানাও, তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে সত্যের পথ দেখায়? বলুন, আল্লাহই সত্যের পথ দেখান। যিনি সত্যের পথ দেখান তিনিই কি আনুগত্য পাওয়ার অধিক যোগ্য নন, তার চেয়ে যে নিজেই নিজের পথ খুঁজে পায় না, অন্য কেউ তাকে পথ দেখাতে হয়? আসলে তোমাদের কী হলো! কী ধরনের সিদ্ধান্ত তোমরা গ্রহণ করো!
৩৬. এদের মধ্যে (মুশরিকদের মধ্যে) অনেকেই কেবল অমূলক ধারণা অনুসরণ করে চলে। আর এটা তো নিশ্চিত যে সত্যের বিপরীতে অমূলক ধারণা কোনো কাজে আসে না। তারা যা কিছু করে, আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের তাৎপর্য ও স্বরূপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্বজগতের সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের পার্থিব ও আত্মিক জীবন সৃষ্টি ও আবর্তিত করার এই যে মহান অবস্থানে অধিষ্ঠিত আল্লাহ, তাঁর সঙ্গে শরিক করার কোনো যৌক্তিক কারণ একেবারেই নেই। অথচ মুশরিকরা তা করছে। ৩৪ নম্বর আয়াতে এ বিষয়টা খুব জোরালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। সৃষ্টি বা 'খালক' শব্দটির সঙ্গে এখানে 'প্রথম সৃষ্টি' শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের বিশ্লেষণেও আমরা দেখতে পাই, মানুষ মূলত কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু ও প্রকৃতিকে অবলম্বন করে মানুষ এর নতুন নতুন রূপদান করতে পারে। কিন্তু মূল সৃষ্টির ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। মানুষের ইহজাগতিক বাস্তব জীবন এবং পরকালীন আত্মিক জীবন একমাত্র আল্লাহরই সৃষ্টি, এমন সক্ষমতা অন্য কারো নেই- এ কথা মুশরিকরাও স্বীকার করত এবং সর্বকালের সব মানুষই স্বীকার করতে বাধ্য।
৩৫ নম্বর আয়াতে একত্ববাদের প্রায়োগিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, একত্ববাদ এবং বহুত্ববাদ নিতান্ত তাত্তি্বক আলোচনা। কিন্তু বিষয়টা একেবারেই সে রকম নয়। জীবন ও জগতের সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য একত্ববাদ একান্ত প্রয়োজন। এক আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের প্রতিভূ। তিনি একমাত্র সত্য, ন্যায়, শান্তি ও সুন্দরের পথ দেখান। সুতরাং মানুষের উচিত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করা এবং যারা নিজেরাই বিভ্রান্ত বা নিজেদের পথ খুঁজে পেতেই অক্ষম, তাদের পরিহার করা। মানুষের জীবন এবং মানব সমাজে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একত্ববাদকে ধারণ করা যে একান্ত দরকার, সেটাই এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বিষয়টা এতটা স্পষ্ট হওয়ার পরও মানুষ কেন শিরক বা বহুত্ববাদের বিভ্রান্তির দিকে যায়, সে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।
৩৬ নম্বর আয়াতে সত্য এবং অমূলক ধারণার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর একত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করে, তারা আসলে অমূলক ধারণার ওপর নির্ভর করেই তা করে। কিন্তু অমূলক ধারণা দিয়ে সত্যকে নাকচ করার চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments