সিরিজ কিলিং ॥ নীলনক্সা তৈরি by মামুন-অর-রশিদ
রাজধানীতে সিরিজ কিলিংয়ের নীলনক্সা প্রণয়ন
করা হয়েছে। বাজেট করা হয়েছে বড় অঙ্কের টাকা। পিছনে রয়েছে প্রভাবশালী একটি
মহল। পুরনো ঢাকার সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এরই আলামত বহন করছে।
নগরীর
কিংবা দেশের বিভিন্ন এলাকার পেশাদার খুনীদের সঙ্গে এই মহলটি বিভিন্ন
এ্যাসাইনমেন্টে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। কারাবন্দী অনেক সন্ত্রাসী জেলখানার ভেতর
থেকেই এদের হয়ে কাজ করছে। নানা অঘটনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
ঘটানোর পাশাপাশি চলবে দেশ-বিদেশে পরিকল্পিত সরকার বিরোধী অপপ্রচার।
প্রতিশ্রম্নত উন্নয়ন কর্মকা- স্থবির করে দিয়ে সরকারকে ব্যর্থ করাই হবে এদের
সর্বশেষ লৰ্য। মহলটি ইতোপূর্বে আমলাতন্ত্রকে নানা প্রলোভনে নিয়ন্ত্রণের
কার্যক্রম শুরম্ন করার পর আন্দোলন চাঙ্গা করতে পেশীশক্তিকে কাজে লাগানোর
পরিকল্পনা নিয়েছে। এৰেত্রে সরকারী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগে ছদ্মবেশে
অনুপ্রবেশকারী শিবিরের রগকাটা বাহিনীকে কাজে লাগানোর ছকও রয়েছে। কঠোর
গোয়েন্দা নজরদারির কারণে কিছু পরিকল্পনা অবশ্য ভেসত্মে গেছে। সরকারের শীর্ষ
মহলে গোয়েন্দা রিপোর্টে এসব জানানো হয়েছে। সংশিস্নষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য
নিশ্চিত করেছে।
খুনের মিশন বাসত্মবায়নে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অতীতে অস্ত্র ও রগকাটার সংস্কৃতিতে অভ্যসত্ম দু'টি ছাত্র সংগঠনকে। একটি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর কিলারদের রয়েছে বিশেষ সখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কোন্দলে হামলার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়েছে। জীবন দিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে । এই নেতা ঢাকার আশপাশের কিলারদের ঢাকায় এনে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই খুনীরা খুব শীঘ্রই বীভৎস খুনের মহড়ায় বেড়ে উঠতে পারে। খুনের মিশনে থাকা তিন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের এক জনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন। বিচরণ ৰেত্র পুরনো ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও সদরঘাট এলাকা। একটি বিশেষ বাহিনীপ্রধান তিনি। নিজেরই রয়েছে বেশ কিছু অস্ত্র। ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতার বন্ধু হিসেবে সে প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করত। 'ই' আদ্যৰর নামধারী এই যুবক খুবই চটপটে এবং বাতাসের বেগে চলাফেরা করে। তাকে দেয়া হয়েছে বিশেষ মিশন। এছাড়া লালবাগ এলাকার সাবেক এক এমপির অনুসারী পেশাদার এক খুনীকে বিশেষ অপারেশনের জন্য দু'লাখ টাকার দেয়া হয়েছে। পেশাদার এই খুনী ইদানীং আওয়ামী লীগ সমর্থক এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেন। বড় ভাইয়ের পরামর্শে এই খুনী তাকে দেয়া এ্যাসাইনমেন্ট বাতিল করে দিয়ে দু'লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বড় ভাই অবশ্য তাকে একটি ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন পেশাদার খুনী পরিচয়ের পথ ছেড়েছে এই যুবক।
নগরীর পলাশী এলাকার ঠা-া মাথার এক পেশাদার খুনীকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না এই লোক মানুষ খুন করতে পারে। দেখতে-শুনতে শানত্ম। কথা বলে নরম স্বরে। কোন এ্যাসাইনমেন্ট নিলে সে যে কোন মূল্যে হোক তা বাসত্মবায়ন হবেই। পেশাদার এই খুনী লালবাগের সাবেক এমপির ছোট ভাইয়ের খুব ঘনিষ্ঠ। তারও রয়েছে বিশাল বাহিনী। তিনি এখন বিশেষ মিশন ছাড়া সাধারণ অপারেশনে নিজে যান না। তার অনুগত বাহিনীই সাধারণ অপারেশনের কাজ করে। এক বিশেষ স্থানে সে মুখ ফসকে বলে ক'দিন অপেৰা করেন। দেখবেন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। অতীতে বিভিন্ন সময় তার এ ধরনের মনত্মব্য ও তথ্য শোনা গেছে। সে সব তথ্য সঠিক হয়েছে। এই ব্যক্তি বিরোধী মহলের নানা পরিকল্পনার কথা জানেন। বিশেষ করে বোরকা পরে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক মিছিলে অংশ নেয়া কয়েকটি ছাত্রী কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ ঢাকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর কারণ হতে পারে। আর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যার কোন দাফতরিক হিসাব নিকাশ না থাকায় ছদ্মবেশী শিবির এবং ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী বোরকাধারী এই নারী কর্মীদের ছাত্রলীগের নানান পদ পজিশনে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে কোনভাবেই বেগ পেতে হয় না। তিনিই বলেছেন, 'পুরান ঢাকা থেকেই সিরিজ কিলিং মিশন শুরম্ন হবে। ধীরে ধীরে তা গোটা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়বে।' তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাধারণ কিলিংয়ের জন্য কনটাক্ট হচ্ছে দু'থেকে তিন লাখ টাকা। বিশিষ্ট কাউকে হত্যার জন্য কন্টাক্ট হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা এবং শীর্ষ পর্যায়ের টার্গেট কিলিং মিশন বাসত্মবায়নে ১০/১৫ লাখ থেকে শুরম্ন করে আরও বেশি হতে পারে। সকল হত্যকা-ের আগেই খুনীরা সংশিস্নষ্ট এলাকায় বার বার রেকি করে অপারেশন করে নীরবে কেটে পড়ার পথ খুঁজে রাখে। ঢাকার হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁ-বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে খুনের মিশন বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকা মেডিক্যাল এলাকায় যে গ্রম্নপটিকে মিশন বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অভ্যনত্মরীণ বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গেটে কোটি টাকার বড় একটা মাদক চোরাচালানের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই বিরোধ তৈরি হয়। পেশাদার খুনীদের দু'একজন গোয়েন্দাদের সঙ্গে ছলচাতুরীর কারণে গোয়েন্দারা বিষয়টি ধরতে পারেনি। গোয়েন্দাদের বিভ্রানত্ম করে যারা তথ্য দিয়েছে তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা রয়েছে কঠোর অবস্থানে। কিলিং মিশন বাসত্মবায়নে সরকারবিরোধী শিবিরের অর্থের কোন অভাব নেই। রাতের অাঁধারে প্রয়োজনের সব টাকা দিয়ে যাচ্ছে 'গৌরি সেন'। একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার লৰ্যে অঢেল টাকা ঢালছে বলে জানা গেছে। ছাত্রদলের বর্তমান শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আহত হওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসি উদ্ধার করতে গেলে তিনি ওসিকে বলেন, 'আমি আর বাংলাদেশে থাকব না। পাকিসত্মান চলে যাব। এই মুহূর্তে আমাকে বাঁচান'।
বিগত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে দুর্নীতির মহামারী, জনপ্রশাসনে নজীরবিহীন দলীয়করণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের সূচনা, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে হত্যা, দখল, জঙ্গীবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় লালন, সাংবাদিক নির্যাতন-হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে নিমর্ূলসহ জোটের বিরম্নদ্ধে নানা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগ গত নির্বাচনে বিএনপি রাজনীতিতে লালবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অতীতের অপকর্ম ঢাকতে নিজেরা যেসব অপকর্ম করেছে বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে সেই সব অভিযোগ তুলছে। বিরোধী দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালাতে মাঠে নেমেছে। এমনকি তারা আনত্মর্জাতিক পর্যায় পর্যনত্ম সরকারবিরোধী অপপ্রচার শুরম্ন করেছে। বিরোধী দলের পৰে নামা বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক নেতাকর্মীসহ পেশাজীবীরা বিভিন্ন এলাকায় উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং বিভ্রানত্মিকর তথ্য দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরম্নদ্ধে বিষিয়ে তুলতে চাইছে। বিএনপি ঘরানার এই বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি সমর্থকদের মালিকানাধীন বেসরকারী টেলিভিশনে সরকারবিরোধী প্রচারণার জন্য চিহ্নিত কয়েকটি মুখের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছে 'টকশো সার্কিট'। কথিত এই বুদ্ধিজীবীরা এদেশে 'দুর্নীতির প্রতীক' তারেক গংয়ের পথ প্রশসত্ম করতে নানা অলঙ্করণের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি তারা তারেক জিয়াকে নবাব সিরাজউদদৌলা কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলা বানানোর চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং নিজেদের চলার পথ প্রশসত্ম করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপির বহুমুখী ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ ছিল বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার পুত্র পবনের বোমা হামলার ঘটনা। কোনভাবে পবন চিহ্নিত না হলে তখন বেগম জিয়াকে হত্যার হুমকি বলে বেগম জিয়ার সরকারী নিরাপত্তা আরও জোরদার করার দাবি জানানো হতো। প্রয়োজনে দলীয় চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা ইসু্যতে তারা আন্দোলনের কথা বলত। পবনের বোমা বিস্ফোরণ পরিকল্পনা ছক অনুযায়ী বাসত্মবায়িত হলে ঢাকা মহানগর বিএনপি কিংবা মহানগর যুবদলের ভাল পদে রাখার প্রতিশ্রম্নতিও ছিল বলে পবনের বন্ধুদের সূত্রে জানা গেছে। মহাজোট সরকার পতনে বিডিআর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পরই সরকারবিরোধীরা নানা কৌশলে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এই কৌশলের সর্বশেষ এবং চূড়ানত্ম পরিকল্পনা হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরম্নদ্ধে ৰেপিয়ে তোলা। যে কারণে তারা ঢাকা শহরে সিরিজ কিলিং মিশন বাসত্মবায়নের লেনদেন করেছে।
আকস্মিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক হত্যাকা-, প্রায় একই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেনকে শিবিরের নির্মম হত্যা এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হত্যাকা- অদৃশ্য সুতার বন্ধনে গ্রথিত। সর্বশেষ চাঁদার দাবিতে জেলখানা থেকে বিশেষ নির্দেশে পুরনো ঢাকার প্রেমকৃষ্ণ হত্যা আপাতত মিশনহীন মনে হতে পারে। তবে জেলখানার অভ্যনত্মর থেকে যারা এসব হত্যাকা-ের কলকাঠি নাড়ছেন তাদের পুরনো পরিচিতি জাতীয়তাবাদী ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথাই বলছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশানত্ম করে তোলা, সেখানে একটি মাদ্রাসার ছাত্রদের পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই ও সংঘর্ষ সরকারবিরোধী মহলের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে।
খুনের মিশন বাসত্মবায়নে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অতীতে অস্ত্র ও রগকাটার সংস্কৃতিতে অভ্যসত্ম দু'টি ছাত্র সংগঠনকে। একটি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর কিলারদের রয়েছে বিশেষ সখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কোন্দলে হামলার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়েছে। জীবন দিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে । এই নেতা ঢাকার আশপাশের কিলারদের ঢাকায় এনে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই খুনীরা খুব শীঘ্রই বীভৎস খুনের মহড়ায় বেড়ে উঠতে পারে। খুনের মিশনে থাকা তিন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের এক জনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন। বিচরণ ৰেত্র পুরনো ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও সদরঘাট এলাকা। একটি বিশেষ বাহিনীপ্রধান তিনি। নিজেরই রয়েছে বেশ কিছু অস্ত্র। ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতার বন্ধু হিসেবে সে প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করত। 'ই' আদ্যৰর নামধারী এই যুবক খুবই চটপটে এবং বাতাসের বেগে চলাফেরা করে। তাকে দেয়া হয়েছে বিশেষ মিশন। এছাড়া লালবাগ এলাকার সাবেক এক এমপির অনুসারী পেশাদার এক খুনীকে বিশেষ অপারেশনের জন্য দু'লাখ টাকার দেয়া হয়েছে। পেশাদার এই খুনী ইদানীং আওয়ামী লীগ সমর্থক এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেন। বড় ভাইয়ের পরামর্শে এই খুনী তাকে দেয়া এ্যাসাইনমেন্ট বাতিল করে দিয়ে দু'লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বড় ভাই অবশ্য তাকে একটি ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন পেশাদার খুনী পরিচয়ের পথ ছেড়েছে এই যুবক।
নগরীর পলাশী এলাকার ঠা-া মাথার এক পেশাদার খুনীকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না এই লোক মানুষ খুন করতে পারে। দেখতে-শুনতে শানত্ম। কথা বলে নরম স্বরে। কোন এ্যাসাইনমেন্ট নিলে সে যে কোন মূল্যে হোক তা বাসত্মবায়ন হবেই। পেশাদার এই খুনী লালবাগের সাবেক এমপির ছোট ভাইয়ের খুব ঘনিষ্ঠ। তারও রয়েছে বিশাল বাহিনী। তিনি এখন বিশেষ মিশন ছাড়া সাধারণ অপারেশনে নিজে যান না। তার অনুগত বাহিনীই সাধারণ অপারেশনের কাজ করে। এক বিশেষ স্থানে সে মুখ ফসকে বলে ক'দিন অপেৰা করেন। দেখবেন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। অতীতে বিভিন্ন সময় তার এ ধরনের মনত্মব্য ও তথ্য শোনা গেছে। সে সব তথ্য সঠিক হয়েছে। এই ব্যক্তি বিরোধী মহলের নানা পরিকল্পনার কথা জানেন। বিশেষ করে বোরকা পরে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক মিছিলে অংশ নেয়া কয়েকটি ছাত্রী কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ ঢাকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর কারণ হতে পারে। আর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যার কোন দাফতরিক হিসাব নিকাশ না থাকায় ছদ্মবেশী শিবির এবং ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী বোরকাধারী এই নারী কর্মীদের ছাত্রলীগের নানান পদ পজিশনে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে কোনভাবেই বেগ পেতে হয় না। তিনিই বলেছেন, 'পুরান ঢাকা থেকেই সিরিজ কিলিং মিশন শুরম্ন হবে। ধীরে ধীরে তা গোটা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়বে।' তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাধারণ কিলিংয়ের জন্য কনটাক্ট হচ্ছে দু'থেকে তিন লাখ টাকা। বিশিষ্ট কাউকে হত্যার জন্য কন্টাক্ট হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা এবং শীর্ষ পর্যায়ের টার্গেট কিলিং মিশন বাসত্মবায়নে ১০/১৫ লাখ থেকে শুরম্ন করে আরও বেশি হতে পারে। সকল হত্যকা-ের আগেই খুনীরা সংশিস্নষ্ট এলাকায় বার বার রেকি করে অপারেশন করে নীরবে কেটে পড়ার পথ খুঁজে রাখে। ঢাকার হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁ-বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে খুনের মিশন বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকা মেডিক্যাল এলাকায় যে গ্রম্নপটিকে মিশন বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অভ্যনত্মরীণ বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গেটে কোটি টাকার বড় একটা মাদক চোরাচালানের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই বিরোধ তৈরি হয়। পেশাদার খুনীদের দু'একজন গোয়েন্দাদের সঙ্গে ছলচাতুরীর কারণে গোয়েন্দারা বিষয়টি ধরতে পারেনি। গোয়েন্দাদের বিভ্রানত্ম করে যারা তথ্য দিয়েছে তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা রয়েছে কঠোর অবস্থানে। কিলিং মিশন বাসত্মবায়নে সরকারবিরোধী শিবিরের অর্থের কোন অভাব নেই। রাতের অাঁধারে প্রয়োজনের সব টাকা দিয়ে যাচ্ছে 'গৌরি সেন'। একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার লৰ্যে অঢেল টাকা ঢালছে বলে জানা গেছে। ছাত্রদলের বর্তমান শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আহত হওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসি উদ্ধার করতে গেলে তিনি ওসিকে বলেন, 'আমি আর বাংলাদেশে থাকব না। পাকিসত্মান চলে যাব। এই মুহূর্তে আমাকে বাঁচান'।
বিগত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে দুর্নীতির মহামারী, জনপ্রশাসনে নজীরবিহীন দলীয়করণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের সূচনা, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে হত্যা, দখল, জঙ্গীবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় লালন, সাংবাদিক নির্যাতন-হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে নিমর্ূলসহ জোটের বিরম্নদ্ধে নানা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগ গত নির্বাচনে বিএনপি রাজনীতিতে লালবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অতীতের অপকর্ম ঢাকতে নিজেরা যেসব অপকর্ম করেছে বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে সেই সব অভিযোগ তুলছে। বিরোধী দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালাতে মাঠে নেমেছে। এমনকি তারা আনত্মর্জাতিক পর্যায় পর্যনত্ম সরকারবিরোধী অপপ্রচার শুরম্ন করেছে। বিরোধী দলের পৰে নামা বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক নেতাকর্মীসহ পেশাজীবীরা বিভিন্ন এলাকায় উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং বিভ্রানত্মিকর তথ্য দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরম্নদ্ধে বিষিয়ে তুলতে চাইছে। বিএনপি ঘরানার এই বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি সমর্থকদের মালিকানাধীন বেসরকারী টেলিভিশনে সরকারবিরোধী প্রচারণার জন্য চিহ্নিত কয়েকটি মুখের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছে 'টকশো সার্কিট'। কথিত এই বুদ্ধিজীবীরা এদেশে 'দুর্নীতির প্রতীক' তারেক গংয়ের পথ প্রশসত্ম করতে নানা অলঙ্করণের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি তারা তারেক জিয়াকে নবাব সিরাজউদদৌলা কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলা বানানোর চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং নিজেদের চলার পথ প্রশসত্ম করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপির বহুমুখী ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ ছিল বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার পুত্র পবনের বোমা হামলার ঘটনা। কোনভাবে পবন চিহ্নিত না হলে তখন বেগম জিয়াকে হত্যার হুমকি বলে বেগম জিয়ার সরকারী নিরাপত্তা আরও জোরদার করার দাবি জানানো হতো। প্রয়োজনে দলীয় চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা ইসু্যতে তারা আন্দোলনের কথা বলত। পবনের বোমা বিস্ফোরণ পরিকল্পনা ছক অনুযায়ী বাসত্মবায়িত হলে ঢাকা মহানগর বিএনপি কিংবা মহানগর যুবদলের ভাল পদে রাখার প্রতিশ্রম্নতিও ছিল বলে পবনের বন্ধুদের সূত্রে জানা গেছে। মহাজোট সরকার পতনে বিডিআর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পরই সরকারবিরোধীরা নানা কৌশলে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এই কৌশলের সর্বশেষ এবং চূড়ানত্ম পরিকল্পনা হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরম্নদ্ধে ৰেপিয়ে তোলা। যে কারণে তারা ঢাকা শহরে সিরিজ কিলিং মিশন বাসত্মবায়নের লেনদেন করেছে।
আকস্মিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক হত্যাকা-, প্রায় একই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেনকে শিবিরের নির্মম হত্যা এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হত্যাকা- অদৃশ্য সুতার বন্ধনে গ্রথিত। সর্বশেষ চাঁদার দাবিতে জেলখানা থেকে বিশেষ নির্দেশে পুরনো ঢাকার প্রেমকৃষ্ণ হত্যা আপাতত মিশনহীন মনে হতে পারে। তবে জেলখানার অভ্যনত্মর থেকে যারা এসব হত্যাকা-ের কলকাঠি নাড়ছেন তাদের পুরনো পরিচিতি জাতীয়তাবাদী ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথাই বলছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশানত্ম করে তোলা, সেখানে একটি মাদ্রাসার ছাত্রদের পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই ও সংঘর্ষ সরকারবিরোধী মহলের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে।
No comments