রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা- চার মাসেও আসামি ধরা পড়ল না!
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গৌরবময় ঐতিহ্য
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। তার ওপর কালিমা লেপনের
চেষ্টা ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে একাধিকবার হলেও সবচেয়ে শান্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী
বৌদ্ধ সম্প্রদায় ২০১২ সালের আগে কখনও আক্রান্ত হয়নি।
কিন্তু গত বছর ৩০
সেপ্টেম্বর একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ার
বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, বৌদ্ধ মন্দিরসহ ঘরবাড়ি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বাংলাদেশে কলঙ্কের কালিমা লেপে দিয়েছে। এই
ন্যক্কারজনক ঘটনায় দেশের সচেতন প্রগতিশীল মানুষমাত্রই মর্মাহত হয়েছেন।
প্রতিবাদ হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। এই বর্বরোচিত ঘটনায় বহির্বিশ্বেও
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। ২০১২ সালে সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে আলোচিত
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত
করেছে। তদন্ত হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। কিন্তু মামলার চার মাস পরও মূল
আসামিদের ধরা যাচ্ছে না বলে সমকালে বুধবার যে খবর প্রকাশ পেয়েছে, তাতে আমরা
উদ্বিগ্ন। আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরোর পাঠানো রিপোর্ট থেকে জানা গেল,
কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ আর্যবংশ বৌদ্ধবিহার ও জেতবন বৌদ্ধবিহারে
অগি্নসংযোগ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ।
একজন মাত্র আসামিকে গ্রেফতার করলেও বাকি চার আসামি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এসব আসামির নাম এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে থাকার পরও কেন এত বড় একটা
স্পর্শকাতর মামলার আসামি হয়ে চার মাসেও গ্রেফতার হলো না, সে এক বিস্ময়ই
বটে। শুধু তা-ই নয়, এজাহারভুক্ত আসামিরা গ্রেফতার না হলেও আরটিভির জেলা
প্রতিনিধি সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। শুধু রামুর
উলি্লখিত বৌদ্ধবিহার নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকায় হামলা ও
বৌদ্ধবিহার ধ্বংস মামলার আসামি গ্রেফতারেও পুলিশের এমন উদাসীনতার চিত্র
মিলেছে প্রকাশিত রিপোর্টে। রামু, টেকনাফ, উখিয়ায় এ ধরনের অপরাধে ১৯টি মামলা
হয়েছে। মোট আসামি ১৫ হাজার ১৮২। কিন্তু গ্রেফতার সংখ্যা সামান্যই। এজাহারে
নাম থাকার পরও রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করা হয়নি অনেককে। অনিয়ম আর
উদাসীনতার এখানেই শেষ নয়, দেশ কাঁপানো অপরাধের চাঞ্চল্যকর এসব মামলার
এজাহারেও অজস্র গরমিলের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে রিপোর্টে। মুসলিম সম্প্রদায়ের
মানুষের মনে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কোরআন অবমাননার সাজানো ছবি উত্তম
বড়ূয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ট্যাগ করে দেওয়ার ঘটনাটি
তখনই বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। উত্তম বড়ূয়ার ভূমিকা স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় আর স্থানীয় পুলিশের তদন্তে বিপরীতভাবে চিহ্নিত হয়েছে, যা
কাঙ্ক্ষিত ছিল না। আমরা মনে করি, অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং দেশের ভাবমূর্তির
প্রশ্ন জড়িত এসব মামলা আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মূল অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যাপারে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মহল সক্রিয় হবে। যত শিগগির সম্ভব
আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
No comments